রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু

আগের সংবাদ

সিসিক মেয়রের প্রতি প্রধানমন্ত্রী : মেয়র নয়, সেবক হিসেবে কাজ কর

পরের সংবাদ

ঈদের আগে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরি

প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় জুনে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বেশকিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলোর দাম প্রতি মাসেই দফায় দফায় বেড়েছে। ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে ভোক্তার অস্বস্তি অনেক দিনের। বাজার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। আমদানির পরও খুচরা বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজারে সরবরাহ নেই, এই অজুহাতে আদার দাম বাড়ানো হয়েছে অনেক আগেই। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদুল আজহাকে ঘিরে মসলার বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে জিরা ও এলাচ।
দাম বেড়েছে দেড় থেকে তিন গুণ। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এখন প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। বিভিন্ন হাত ঘুরে এই জিরা খুচরা পর্যায়ে ১ হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত এপ্রিলে একই জিরা বিক্রি হয় ৪০০ টাকা কেজি দরে।
গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৩৫০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে গুয়াতেমালার এলাচ মানভেদে ১ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতের এলাচ ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লবঙ্গের দামও বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। খাতুনগঞ্জে চলতি সপ্তাহে কেজিতে ৭০০ টাকা বেড়ে লবঙ্গ ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১৩৫-১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়। এই সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, এমন কথাও চালু আছে। বাংলাদেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কোনো উপলক্ষ প্রয়োজন পড়ে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট, শুল্কহার বৃদ্ধির কারণে এলাচ ও জিরার আমদানি এবার কম হয়েছে। এ কারণে এসব মসলার দাম বাড়তি। কুরবানির ঈদে এমনিতেই মসলার চাহিদা বেশি থাকে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, কুরবানি ঘিরে চাহিদা বেশি থাকে; সে অনুযায়ী তো আমদানি হয়নি। ফলে দাম বাড়তি। কুরবানির পর দাম কমে যাবে। অনেকে মনে করছেন, মসলার বাজারে চোরাচালান বেড়েছে। মসলার প্রকৃত আমদানিকারকরা মসলা থেকে দূরে সরে গেছেন চোরাচালানের কারণে। ঋণপত্র খুলতে কড়াকড়ি, ডলার সংকট এবং শুল্কহার বাড়িয়ে দেয়ায় মসলা পণ্যের দাম বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
চাল, আটা, চিনি, তেল, মাছ-মাংস-সবজি নাগালের ভেতরে নেই কোনোটাই। নিত্যপণ্যের বাজারে দিন দিন অস্থিরতা বাড়ছেই।
দফায় দফায় দাম বেড়ে এখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা। তবে গত মাসেও ২০০-২২০ টাকার মধ্যে ছিল। অর্থাৎ এ সময়ে দাম কমেছে প্রতি কেজি ৩০ টাকা। বর্তমানে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। প্রতি হালি ৫০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের মতো দাম বেড়েছে গরুর মাংসেরও। বেশিরভাগ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। অন্যদিকে বাজারে সবজির দামও কিন্তু খুব বেশি স্বস্তিদায়ক নয়। সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-১১০০ টাকার মধ্যে। কিছুটা ছোট আকৃতির রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৬০০ টাকার মধ্যে। ঈদের আগে বড় রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকার নিচে পাওয়া যায়নি। ছোটগুলোও বিক্রি হয়েছিল ৬০০-৭০০ টাকায়। কেজিতে ২০-১০০ টাকা কমে প্রতি কেজি চাষের শিং আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৪০০ টাকা, দেশি শিং ৫০০-৬০০ টাকা, দেশি মাগুর ৪৫০ টাকা, পাবদা ২৮০-৪০০ টাকা, রুই ২৮০-৪৫০ টাকা, মলা ৩০০-৪৫০ টাকা, কাঁচকি ৩৫০-৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রায় ১০০-২০০ টাকা কমেছে বোয়াল ও আইড় মাছের দাম। বর্তমানে ভারতীয় বড় বোয়াল বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা কেজি, দেশি বোয়াল ৭০০-৮০০ টাকা, আইড় ৬০০-৮০০, দেশি বড় আইড় ৯০০-১০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি করলা ৭০-৮০, ঝিঙা-পটোল ও চিচিঙ্গা ৫০-৭০, টমেটো ১০০-১২০, কাঁচামরিচ ২৮০-৩০০, পেঁপে ৫৫-৬০, গাজর ১০০-১২০ ও কচুর লতি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এছাড়া ঢেঁড়স ৮০ টাকা, শসা ১২০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৫০-৮০ টাকা, চালকুমড়া ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে নেই কোনো মনিটরিংও। মানুষ চরম এক অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। এ কথা ঠিক, সারা বিশ্বই এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। তবে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থায় কোনো মনিটরিং না থাকায় অসৎ ব্যবসায়ীরা যা ইচ্ছা তাই করার সাহস দেখাচ্ছেন। মজুতদারদের অপতৎপরতাও সংকট বাড়াচ্ছে। ঈদে পণ্যমূল্য যাতে ভোক্তাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে তার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মনিটরিং বাড়াতে হবে। পণ্য যেন ভোক্তা সাধারণের কাছে সহজলভ্য হয়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা আশা করব, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়