প্রিপেইড মিটার স্থাপনে আর্থিক লেনদেন না করার আহ্বান

আগের সংবাদ

হাটে পর্যাপ্ত গরু, দাম চড়া : কেনাবেচা আজ থেকে > শর্ত মানছেন না ইজারাদার > ট্রাক নিয়ে টানাটানি

পরের সংবাদ

রক্ষণ নিয়ে কাবরেরার কপালে চিন্তার ভাঁজ

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কথায় আছে ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’। তবে সেই শেষটাতেই নিজেদের ছন্দ ধরে রাখতে পারছে না বাংলাদেশ ফুটবল দল। পুরো ম্যাচজুড়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা প্রতিপক্ষ দলকে আটকে রাখতে পারলেও শেষ মুহূর্তের গোলে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। শেষ সময়ে খেই হারানোর রোগেই এবারের সাফে নিজেদের প্রথম ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে হেরেছে জামাল ভূঁইয়ার দল।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। টুর্নামেন্টের গ্রুপপর্বে দুর্বল দলগুলোর সঙ্গে বরাবরই পুরো সময় যাবত ছন্দ ধরে রেখে খেলতে পারে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। ২০১৫ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটি ছিল ছন্দহীনতায় ভরপুর। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা আফগানিস্তানের বিপক্ষে কোনোরকম প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে দেখা যায় লাল-সবুজদের চেনা রূপ। অর্থাৎ, পুরো সময় ধরে প্রতিপক্ষকে আটকে রেখে শেষ সময়ে গোল হজম করার রোগ।
সেই ম্যাচে প্রথমার্ধের পুরো সময় মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের ফুটবলাররা সমানে সমানে লড়াই করে। তবে বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে খেই হারায় দলটির রক্ষণভাগ। ফলাফল হিসেবে ম্যাচের ৪৩তম মিনিটে একটি গোল হজম করে তারা। বিরতির পর মাঠে নেমে ফের তারা সমানে সমানে লড়তে থাকে। আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে খেলা জমিয়ে তোলে। ম্যাচের ৮৬তম মিনিটে হেমন্ত বিশ্বাসের গোলে সমতায়ও ফেরে বাংলাদেশ। ম্যাচ সমতায় ফেরানোর পরপরই খেই হারায় রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। মালদ্বীপ ফরোয়ার্ডদের আক্রমণের সামনে তারা দাঁড়াতেই পারেনি। ৯০তম মিনিটে এবং যোগ করা সময়ের ৫ম মিনিটে দুটি গোল করে মালদ্বীপ। শেষ মুহূর্তের ব্যর্থতায় সেবার সাফ থেকে বাদ পড়ে বাংলাদেশ।
২০১৮ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও দেখা যায় একই দৃশ্যপট। সেবার নেপালের বিপক্ষে সাফে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে তারা ৩৩ মিনিটে একটি গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে। প্রথমার্ধের শুরু ও শেষে তাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে দেখা যায়। ভালো ফিনিশিংয়ের অভাবে সেই ম্যাচে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে কোনো গোল যোগ হয়নি। তবে ম্যাচের শেষ মিনিটে ছন্দ হারিয়ে তারা ঠিকই একটি গোল হজম করে। ২০২১ সাফেও বাংলাদেশের পরাজয়ের কারণ শেষ সময়ে এসে ছন্দ হারানো।
এবারের সাফে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দলের সব খেলোয়াড়ই দীর্ঘদিন প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার নজরে ছিলেন। কাবরেরা তাদের পুরো সময় ধরে একই তালে খেলে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন। তিনি গোল হজম না করে গোল করার দিকে লক্ষ্য রেখে খেলতে বলেছিলেন। সাফকে সামনে রেখে কম্বোডিয়ায় নিজেদের ঝালাই করতে যাওয়ার আগে কাবরেরা এসব জানান। তিনি জানিয়েছিলেন, শেষ মুহূর্তে যেন খেই না হারায় সেদিকে তিনি বিশেষ নজর দিয়েছেন। এবারের সাফে এমনটা ঘটার সম্ভাবনা কম। তবে গত ২২ জুন লেবাননের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে সেই একই কারণে পয়েন্ট হারিয়েছে বাংলাদেশ। সাফ-২০২৩ এর সবচেয়ে শক্তিশালী দল লেবাননকে জামালরা ম্যাচের ৭৯ মিনিট পর্যন্ত আটকে রাখতে পারে। এর মধ্যে তারাও কয়েকবার লেবাননের রক্ষণভাগকে পরীক্ষায় ফেলেছিল। তবে যোগ করা সময়সহ শেষের ১৬ মিনিটের মধ্যে জামালের দল দুটি গোল হজম করে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়। তাই এবারের সাফে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার আশা কতদূর এগোবে সেই ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়।
মালদ্বীপের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আগামীকাল মাঠে নামবে কাবরেরার শিষ্যরা। এই ম্যাচকে সামনে রেখে গতকাল তারা অনুশীলনও করে। লেবাননের বিপক্ষে পয়েন্ট হারানোর অতৃপ্তি ভুলে তারা সামনের ম্যাচগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে চান। বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া পরবর্তী ম্যাচকেই ফাইনাল হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটিই আমাদের ফাইনাল ম্যাচ। আমাদের এক সহসভাপতিও এটা বলেছেন।’ জামালের সঙ্গে একমত দলের অন্যতম সিনিয়র ফুটবলার সোহেল রানা, ‘টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে মালদ্বীপের বিপক্ষে আমাদের পয়েন্ট পেতেই হবে।’
আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল করা বাংলাদেশের জন্য যেন একটি কঠিন কাজ। ম্যাচ জিততে হলে গোল করা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। গোলের দেখা না পাওয়াতে সবার সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন লাল-সবুজ জার্সিধারী ফরোয়ার্ডরা। তবে গতকাল তাদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান জামাল। তিনি বলেন, ‘আসলে সবাইকে গোল করতে হবে, শুধু স্ট্রাইকারদের ওপর নির্ভর বা দায় হলে হবে না।’ লেবাননের বিপক্ষে হারের জন্য আগের সংস্কৃতির কথা টেনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমরা শেষ দশ মিনিট মনোযোগ রাখতে পারিনি- যা আমাদের আগেও সমস্যা ছিল।’
দুই গোলের পেছনে ডিফেন্ডার তারিক কাজী ও ইসা ফয়সালের ভুলকে দায়ী করছেন ফুটবলসংশ্লিষ্টরা। তবে হারের জন্য কাউকে দায়ী করতে চান না অধিনায়ক। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘আমরা টিম হিসেবে খেলি, জিতলে সবাই একসঙ্গে জিতি, হারলেও সবাই একসঙ্গে।’ এই প্রসঙ্গে সোহেল বলেন, ‘আমরা কাউকে দোষারোপ বা দায়ী করছি না। সবাই আগের ম্যাচ ভুলে এখন সামনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।’
জাতীয় দলের স্প্যানিশ কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা দলের মানসিক পরিবেশ সম্পর্কে বলেন, ‘সবাই ইতিবাচক রয়েছে। আগের ম্যাচের পজিটিভ দিকগুলো স্মরণ করে মালদ্বীপের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।’ দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্যে স্পষ্ট এবার সেমিফাইনাল খেলার আশা এখনো ধরে রেখেছে তারা। গত ১৪ বছরের আক্ষেপ তারা ঘোচাতে পারবে কি পারবে না তা বোঝা যাবে আগামীকাল মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলা ম্যাচের পরই। লেবাননের বিপক্ষে পয়েন্ট হাতছাড়া করার পরও জামালদের খেলায় খুশি বলে জানান কোচ কাবরেরা। তিনি বলেন, ‘হারলেও ছেলেদের খেলায় আমি খুশি। এই ম্যাচ থেকে আমরা কিছু অর্জন করতে পেরেছি। ইতিবাচক হলো, বাকি দুই ম্যাচে ভালো খেলে আমাদের সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ আছে। আমাদের চোখ সেদিকেই।’
লেবাননের বিপক্ষে জয়ের উদ্দেশে খেলেনি বাংলাদেশ দল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কোনোরকমে গোল হজম না করে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়া। শেষ পর্যন্ত পরাজিত হলেও বাংলাদেশ শেষ সময়টা বাদে পুরো ম্যাচেই ভালো খেলেছে। প্রতিপক্ষ দলের চেয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক পিছিয়ে থাকলেও তারা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে পেরেছে। তাই হারের ম্যাচেও কিছু প্রাপ্তি আছে বাংলাদেশের। আর সেই প্রাপ্তিগুলোই আগামীতে আত্মবিশ্বাস যোগাতে কাজ করবে।
বাংলাদেশ যেভাবে ম্যাচ খেলেছে এবং যেভাবে গোল খেয়েছে, তাতে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়েছেন। তবে তিনি দলের খেলোয়াড়দের প্রশংসাও করেছেন।
ফুটবলে সামান্য কিছু ভুল সর্বনাশ ডেকে আনে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা বলেছেন, ‘জানাই ছিল, শুরুর দিকে আমাদের মাঠে ভোগতে হবে। কিন্তু ম্যাচে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আক্রমণ গড়েছি। জানতাম, আমাদের কাছে সুযোগ আসবে, সেটা এসেছেও। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভালো সুযোগও তৈরি করি। কিন্তু গোল পাইনি। আমরা কিছু সুযোগ নষ্ট করেছি। এটা হতেই পারে। ওরা শেষ পর্যন্ত জিতে গেছে। কারণ, শেষ দিকে ওরা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ঝলক দেখিয়েছে। যেটা ওদের দরকার ছিল, সেটা করেছে।’ খেলোয়াড়দের ভুল সম্পর্কে ক্যাবরেরা বলেছেন, ‘যেভাবে আমরা গোল খেয়েছি, সেটা হতাশার। রক্ষণ পুরো ম্যাচে জমাট ছিল। মনে রাখতে হবে, লেবানন শক্তিশালী দল। দ্বিতীয়ার্ধে হাসান মাতুক মাঠে আসার পর সে আমাদের জন্য সমস্যা তৈরি করে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়