প্রিপেইড মিটার স্থাপনে আর্থিক লেনদেন না করার আহ্বান

আগের সংবাদ

হাটে পর্যাপ্ত গরু, দাম চড়া : কেনাবেচা আজ থেকে > শর্ত মানছেন না ইজারাদার > ট্রাক নিয়ে টানাটানি

পরের সংবাদ

মানুষ কেন রাজনীতি বিমুখ

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মানুষ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই অভিযোগ আমরা সবাই করি। মানুষ যে মুখ ফিরিয়েছে সেটা সত্য। কিন্তু কেন ফিরিয়েছে? সে আলোচনা আমরা করি না। রাজনীতিনির্ভরতা দুনিয়ার সব দেশে কমেছে। নির্ভরতা বলতে মানুষ কেয়ার করে না আগের মতো। কিন্তু রাজনীতিহীন সমাজ বা দেশ হয়? মূলত দেশ বা রাষ্ট্র বিষয়টাই রাজনীতির অবদান। আমাদের উপমহাদেশের কথাই ধরুন। আমরা ছিলাম এক অখণ্ড দেশ। হিন্দু আমল মুসলিম শাসন সব আমলেই ভারত ছিল অখণ্ড। ইংরেজরা যাওয়ার সময় মনে হলো কেন অখণ্ড? এসো ভাগাভাগি করে নাও। ব্যস। কারো ভিটে পড়ল ভারতে স্নানঘর পড়ল পাকিস্তানে। বেশ তাতেও আপত্তি নেই। হয়ে গেল দুই রাষ্ট্র। সে রাষ্ট্রের একাংশ থেকে আরেক অংশের যোজন যোজন দূরত্ব। সঙ্গে ভাষা সংস্কৃতি শাসনের নামে দুঃশাসনের ফারাক। আমরা লড়াই করে আবার আমাদের সীমানা চিহ্নিত করলাম। পেলাম রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ। সবই কি রাজনীতি নয়?
সে রাজনীতির উত্তাল সময়কালে ভাটা এসেছে। জোয়ার-ভাটা স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু রাজনীতিতে জাগরণ বা মানুষের থাকার ইচ্ছেতে যে ভাটা তার কারণ আধুনিকায়ন। আধুনিক হতে হতে মানুষের মেধা এমন সব বিষয় হাতে নিয়ে ফেলেছে যার নাম বায়বীয় জগৎ। এই জগতে ডুবে থাকলে সময় কোনোদিকে চলে যায় টের পাওয়া মুশকিল। যারা এই ডিজিটাল জগতের বিরুদ্ধে বা বড় বড় কথা বলেন তারাও কিন্তু সে কথাগুলো বলতে এই প্ল্যাটফর্মই বেছে নেন। কারণ এর বহুমুখিনতা। এর ভেতর সব আছে। রাজনীতি, সমাজ, যোগাযোগ, প্রেম, যৌনতা এমনকি নতুন ধারণাও। বলাবাহুল্য এই মাধ্যমটি আধুনিক যন্ত্রের সঙ্গে কলা কৌশলের সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে তরুণ-তরুণীরা এর মূল কেন্দ্রে। যে তারুণ্য এতে ডুবে আছে তাকে খোলা মাঠের রাজনীতি কি আকর্ষণ করতে পারে? আজকে আর তা সম্ভব না। খুব বড় কোনো ঘটনা বা দেশ নাড়িয়ে দেয়ার মতো কোনো ঘটনা না ঘটলে তারুণ্য এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। আমার তো এখন মনে হয় আমাদের আমলে বা তারও আগে এসব মিডিয়াম থাকলে বহু আন্দোলনই হয়তো আলোর মুখ দেখত না।
সে যাই হোক, রাজনীতিবিমুখ মানুষের মন কি বোঝার চেষ্টা করছে রাজনীতির নেতারা? ঢাকা-১৭-এর উপনির্বাচনের কথাই ভাবুন। এই আসনে সুবেশী ভদ্রলোক মার্জিত কথাবার্তার মানুষ আরাফাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য মাঠে নেমেছিলেন হিরো আলম। গণতন্ত্রের ধারায় যে কেউ নির্বাচন করতে পারেন। যার সেই ইচ্ছে আছে বা যাদের সে মেধা ও যোগ্যতা আছে তারা তা করবেন এটাই স্বাভাবিক। গুলশান এলাকাটির গুরুত্ব কিংবা ভোটারদের মনোভাব ও ভাষা কি বোঝার দরকার নেই? এ কথায় যাদের গণতান্ত্রিক মনোভাব চাঙ্গা হয়ে উঠবে তাদের বলি যত কথাই বলেন আপনি খুব ভালো জানেন বাড্ডা বা সূত্রাপুরের ভোটার আর গুলশানের ভোটারের চেহারা-সুরত চাওয়া-পাওয়ায় কতটা অমিল। হ্যাঁ সেখানেও প্রান্তিক শ্রেণির ভোটার আছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা আসলে কত? এই যে এসব বিষয় না ভাবা বা গুরুত্ব না দেয়া তার কারণেই হিরো আলম সেখানে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। এই যুবকটিকে নিয়ে আমি এফ বিতে বহু পজিটিভ পোস্ট দিয়েছি। সে কারণে আমার বন্ধুদের অনেকেই আমাকে গালমন্দ করতে ছাড়েনি। সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু লাই পেতে পেতে বা প্রশ্রয় পেতে পেতে হিরো আলমের স্বপ্ন পরিণত হয়ে যাচ্ছে খায়েশে। সে খায়েশের কারণ কিন্তু অচল রাজনীতি।
আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী বিশাল ও ইতিহাসসমৃদ্ধ একটি দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে অপরাজনীতি। তার পেছনে বিএনপি আছে বা তাদের লগ্নি আছে বলে যারা চিৎকার করেন তারা কি এটা জানেন না নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হলে বা সঠিক হলে এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না? বিএনপি জাতীয় পার্টি বা অন্য সব রাজনৈতিক দল যদি ভোটে আসত হিরো আলম কি হালে পানি পেতেন? রাজনীতির জটিল সমীকরণ থাক। যে কথাটা বলছিলাম- হিরো আলম ফ্যাক্টর না বিষয় আমাদের রাজনীতির অধঃপতন। তারই প্রমাণ বা উদাহরণ এই হিরো আলম। লাখ লাখ ভিউয়ার আর সমর্থক অনেকেরই আছে। ওপার বাংলার রানু মণ্ডল বাদাম কাকু হিরো আলমের চেয়েও পপুলার। কিন্তু তারা রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। ভবিষ্যতে যদি ঘামায়ও তার কারণ হবে অপরাজনীতি।
হিরো আলম মজা পেয়ে গেছেন। খেয়াল করবেন এখন তিনি একা বা যে শ্রেণির প্রতিনিধি বলে গর্ব করেন তারা আর আশপাশে নেই। তার বদলে ঘিরে থাকা মানুষদের দেখলেই বোঝা যায় খেলা চলছে। আমি আবারো বলব এর জন্য দায়ী সরকারি দলের আতিশয্য আর এককেন্দ্রিকতা। বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত শক্ত করার পরিবর্তে এরা রাজনীতিকে এমন এক জায়গায় নিয়ে চলেছেন যার বাই প্রডাক্ট এই হিরো আলম।
এমন পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে মানুষজন কী কারণে রাজনীতিমুখী হবেন? তাদের সুখ-অসুখ, ভালো-মন্দ বা রুচি-অরুচির দিকে যাদের খেয়াল নেই তাদের কাছে কেন যাবেন তারা? ভালো করে তাকালে বুঝবেন একটা সেট বা ফর্ম আছে, সরকার আছে তাতেই চলছে দেশ বা সমাজ। যা কিছু ভরসা আর শক্তি তা ওই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আছেন বলেই সবকিছু চলমান। রাজনীতির উচিত দল বা দেশের স্বার্থে জনমুখী হয়ে ওঠা। এটা বিরোধী দলের বেলায়ও একশ পার্সেন্ট সত্য। তারা জ্বালাও পোড়াও আর বড় বড় কথার বাইরে মূলত রাজনীতি বলতে আর কিছু জানেন বলে মনে হয় না। দিশাহারা এরা যে হিরো আলমের পেছনে নেই তার গ্যারান্টি কোথায়?
আবারো বলছি- হিরো আলম যদি রাজনীতিতে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে থাকেন বা নিজেকে তৈরি করতে চান তাতে আসলেই মঙ্গল হবে। কারণ প্রান্তিক শ্রেণির মানুষজনের সঙ্গে রাজনীতির দূরত্ব বেড়েছে। তাদের ভাষা, তাদের মন বোঝার শক্তি বা ইচ্ছা কোনোটাই নেই। সে জায়গায় তার আগমন মানি। কিন্তু আসলে কী চায়? ইউটিউবে গান-বাজনা নাচের ভেতর দিয়ে বড় হয়ে ওঠা ইউটিউবার হঠাৎ এমপি হতে চান কেন? অন্যদিকে মনোনয়ন না পাওয়া অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমানও একই। অভিনয় জগতে তেমন সাড়া ফেলতে না পারা এই মানুষটিও চেয়েছিল গুলশানে এমপি হতে। সে কারণেই বলছি বল কিন্তু রাজনীতিবিদদের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। যার ইচ্ছে সেই মনে করছে এমপি হলে ভালো হয়। তাদের দোষারোপ করার আগে সংসদের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে সেখানে এখন যে সব গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকা তাদের দেখেই এরা সাহস পেয়েছেন।
গণতন্ত্রে সবার অধিকার সমান। অতএব কোনো অসুবিধা নেই। অসুবিধা শুধু এক জায়গায়- রাজনীতির প্রতি মানুষ আরো নেগেটিভ মনোভাব পোষণ করলে কারো কিছু বলার থাকবে না। বললেও তা ভিত্তিহীন মনে হবে। কারণ রাজনীতির নেতারাই রাজনীতিকে তার মর্যাদা দিতে অনিচ্ছুক অথবা অপারগ।

অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়