প্রিপেইড মিটার স্থাপনে আর্থিক লেনদেন না করার আহ্বান

আগের সংবাদ

হাটে পর্যাপ্ত গরু, দাম চড়া : কেনাবেচা আজ থেকে > শর্ত মানছেন না ইজারাদার > ট্রাক নিয়ে টানাটানি

পরের সংবাদ

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা : দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকব না, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে আমার ওপর প্রচন্ড চাপ ছিল; গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি বলেছিলাম- এই গ্যাস জনগণের। আর কতটুকু আছে, জানি না। কাজেই আমার পক্ষে বাংলাদেশের সম্পদ, মানুষের সম্পদ শুধু ক্ষমতার লোভে, তা আমি বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকব- এমন বাপের মেয়ে আমি না। তিনি বলেন, আমরা চাইনি, কিন্তু মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। ফলে আমরা তখন ক্ষমতায় আসতে পারিনি।
আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলটি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য বেগম আখতার জাহান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।
মানুষের কষ্ট লাঘবে প্রাণপণ চেষ্টার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক দূর আমরা এগিয়েছি। ২০২৬ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাব। আমাদের উৎপাদন বাড়ানো অব্যাহত রাখতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। আমি জানি- একটু দুঃসময় যাচ্ছে। মানুষের যে কষ্ট, সে কষ্ট লাঘবের জন্য আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা হচ্ছে। বিত্তশালীদের বলব, আশপাশে যারা একটু দরিদ্র আছেন, তাদের একটু দেখবেন। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সবদিক থেকে একটা বিরাট পরিবর্তন বাংলাদেশে আমরা নিয়ে এসেছি। আজকে দেশের মানুষ নুন-ভাত থেকে এখন মাংস-ভাত চায়। অন্তত এইটুকু তো উন্নীত হয়েছে। আমি এটুকু বলব সবাইকে নিজেকে কাজ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় এদেশের মানুষ নুন-ভাত জোটাতেই কষ্ট হতো। তারা একটু নুন-ভাত চাইত। তারপর এলো ডাল-ভাত। অন্তত মানুষকে আমরা এমন পর্যায়ে আনতে পেরেছি, এখন কিন্তু নুন-ভাত, ডাল-ভাত নয়, এখন মাংস পাচ্ছে না- সেটাই কথা আসছে। অন্তত এই নুন-ভাত, ডাল-ভাত থেকে মানুষের চাহিদা মাংসতে উঠে এসেছে। আমি জানি, মাংসের মূল্য অনেক বেড়েছে। কিন্তু মানুষের মাংস-ভাত খাবার যোগ্যতা বা সেই সামর্থ্য তারা পেয়েছে- এটুকু স্বীকার করতে হবে। অন্তত এই জায়গায় তো আনতে পেরেছি। চাহিদাটা তো বাড়ছে। সেই চাহিদা যখন বাড়াতে পেরেছি, পূর্ণও করতে পারব- এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক চক্রান্ত আছে, ষড়যন্ত্র আছে। আমি জানি, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে জনগন লাভবান হয়, জনগনের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকা মার্কায় জনগন ভোট দিয়েছে বলেই আজকে মানুষের পরিবর্তন এসেছে। ‘৮১ সালে বাংলাদেশ ঘুরে আমি যা দেখেছি, আমুল পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনটা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে কোনোদিনই হতো না। আওয়ামী লীগ থাকলেই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কেউ ভূমিহীন-গৃহহীণ থাকবে

না। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকারের ঔষধ বিনামূল্যে দিচ্ছি। এমনকি ইনসুলিনও এখন বিনামূল্যে দেয়া শুরু করেছি। অর্থাৎ মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা প্রতিটি মৌলিক চাহিদা আমরা পূরণ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন আমরা করে যাচ্ছি। কাজেই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছেই জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য এবং জনগনের সেবা করা- এটাই আওয়ামী লীগের কাজ।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বিএনপির শাসনামলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের দীর্ঘ তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনেকেই অনেক কথা বলেন, এদেশে না কী কিছুই হয় না। এটা হলো না, সেটা হলো না- অনেক কথা শুনতে হয়। তাদেরকে স্মরণ করাতে চাই, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কোথায় ছিল বাংলাদেশ। আর আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ সরকার গঠন করেছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে জনগন আবারো আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আজকে ২০২৩ সাল। আমরা জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করেছি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী যখন উদযাপন করি, তখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ভোট চুরি করার অপরাধে জনগন খালেদা জিয়াকে একবার ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিল। ২০০৬ সালে নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে ২০০৭ সালে নির্বাচন করতে গিয়েছিল, সেটাও বাতিল হয়ে তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছিল। এসেছিল ইমার্জেন্সি। সেই ইমার্জেন্সির বিরুদ্ধেও এদেশের মানুষই প্রতিবাদ করে। ২০০৮ সালে নির্বাচন হয়; আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর থেকেই দেশের উন্নয়নে আমরা পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করি।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় কারো হাত কেটেছে, পা কেটেছে, চোখ তুলেছে। বাড়ি বাড়ি যেয়ে হানাদার বাহিনীর মতো আমাদের মেয়েদের ধর্ষণ করেছে, নির্যাতন করেছে, পাশবিক অত্যাচার করেছে, বাড়ি-ঘর দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটেছে, একেকটা মেয়ের ওপর পাশবিক অত্যাচার হয়েছে- কেউ ওদের হাতে ধরা দেবে না বলে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে। আর কেউ নির্যাতিত হয়ে মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে মুত্যুবরণ করেছে।
নির্যাতিত কাছে নিজের ছুটে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি ছুটে গেছি তাদের কাছে। সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। শতবাঁধা অতিক্রম করে গিয়েছি। তারপরে তো গ্রেনেড হামলা, বোমা ইত্যাদি ইত্যাদি….. বহু কিছু আমাদেরকে শুনতে হয়েছে। এমনও কথা শুনতে হয়েছে; আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসবে না। কারণ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই সৃষ্টি করে আর দূর্নীতি করে, অর্থ সম্পদ বানিয়ে ওই বিএনপি সন্ত্রাসীর দল ভেবেছিল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী বন্দোব্যস্ত করবে। কিন্তু বাংলার মানুষকে ওরা চেনেনি। জনগণের সম্পদ বেঁচবে আর ক্ষমতা লুটপাট করে, জনগণের অর্থ সম্পদ কেড়ে নিয়ে নিজেরাই সম্পদের মালিক হয়ে ওই টাকার জোরেই ক্ষমতায় থাকবে- এটা এই দেশের মানুষ মেনে নেয়নি।
সরকারের সেক্টরভিত্তিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিএনপির আমলের মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলাম। করোনা ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে কিছুটা বেড়েছে। এখন ৮ শতাংশের উপরে। আমরা মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছি। বিএনপির আমলের তুলনায় বাজেট ১০ গুণ বাড়িয়েছি। জিডিপি ১২ গুণ বাড়াতে পেরেছি। এডিবি ১৩ গুণ, রপ্তানি আয় ৫ গুণ, রেমিট্যান্স ৬ গুণ বাড়িয়েছি। রাজস্ব আয় ৩৭ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। বৈদেশিক ?মুদ্রার রিজার্ভ ৫ মাসের বেশি আমদানির সক্ষমতা রয়েছে। কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে। কিছু মানুষ মজুত করে। এই মজুতের স্বভাবটা সবাইকে বদলাতে হবে।
বিএনপি শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এমনটা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাক্ষরতার হার ৬৫ থেকে কমিয়ে আবার ৪৫ ভাগে নেমে আসে। আমরা ৪৫ থেকে ৬৫-তে উঠিয়ে এনেছিলাম। বিএনপি এসে কমিয়েছে। অবশ্য কমাবে কারণ খালেদা জিয়া তো ম্যাট্রিক পাস করতে পারেনি। উর্দু আর অঙ্ক ছাড়া, উর্দু তো তার পেয়ারে বাত হ্যায়। আর এদিকে অঙ্ক তো টাকা গণনায় লাগে। সে হলো ম্যাট্রিক ফেল, তার স্বামী ছিল ম্যাট্রিক পাস, আর তার ছেলে যে কী পাস তা বোধহয় এখনো কেউ বলতে পারে না। তারা হয়তো ভেবেছিল তারা যখন পাস করেনি, তো কেউ করবে না। তাই কমাও। এজন্য আবার ৪৫ শতাংশে। তবে আমরা আবার ৭৫ ভাগে উন্নীত করেছি।
বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯৬ সালে বিদ্যুৎ ছিল ১৬০০ মেগাওয়াট। আমরা ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছিলাম। ২০০৯ সালে এসে দেখি বিএনপি সেটা কমিয়ে এনেছিল ৩ হাজার ৭৮ মেগাওয়াটে। মানুষ সবসময় বাড়ায়। আর বিএনপি ক্ষমতায় এসে কমায়। এখন আমরা ২৫ হাজার ২২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। বিএনপির আমলে বিদ্যুৎ সুবিধা পেত মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৮ ভাগ। এখন আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব্যাপি জ¦ালানি ও কয়লার দাম বেড়েছে। এগুলো এখন পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ অনেক জায়গায় আগাম বিক্রি হয়ে গেছে। সেজন্য মাঝখানে আমাদের কয়েকটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রামপাল ও পায়রা বন্ধ ছিল। যদিও দক্ষিণাঞ্চলে তেমন বেশি অসুবিধা হয়নি। তবে কিছু জায়গায় লোডশেডিং করতে হয়।
তিনি বলেন, একটা প্রশ্ন আমার মনে জাগে। আমরা যখন কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুকেন্দ্র করতে গেলাম। তখন আমাদের পরিবেশবিদরা খুব আন্দোলন করল। তারা লং মার্চ করল, আমি তখন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বললাম, আমাদের লক্ষ্য ছিল, দেশের মানুষকে শতভাগ বিদ্যুৎ দেব। আমরা সেটা শতভাগ দিতে পেরেছি। এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ, এখন তারা আনন্দ মিছিল করে না কেন? এখন তো তারা আনন্দ মিছিল করতে পারে। তখন কিন্তু আবার তারা বিদ্যুতের জন্য কাঁদে। কারণ তারা জানে, এখন মিছিল করতে গেলে মানুষ পিটায়ে চ্যাপ্টা করে দেবে। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এখন আন্দোলনকারীরা গেল কোথায়? তাদের লং মার্চ আন্দোলন করল না কেন?
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখন আমাদের কয়লা আসা শুরু হয়েছে। বিদ্যুতের অসুবিধাটা থাকবে না। তবে মাঝেমধ্যে বোধহয় একটু লোডশেডিং দিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে দেয়া উচিত কি ছিল, আর কোথায় আছে?

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়