শিশুশ্রম নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান

আগের সংবাদ

ভারত-আমেরিকার বৈচিত্র্যময় অংশীদারত্ব গড়ার প্রত্যয় : হোয়াইট হাউসে মোদি-বাইডেন বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা

পরের সংবাদ

সঠিক ব্যবস্থাপনায় সম্পদে রূপ নিতে পারে পয়ঃবর্জ্য : এনজিও ফোরাম-ভোরের কাগজ সেমিনার

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশনে গুরুত্বারোপ ** পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ** গ্রাম পর্যায়েও পয়ঃবর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা করতে হবে ** স্যানিটেশন ট্যাক্স বিবেচনার সুপারিশ **
কাগজ প্রতিবেদক : দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে হলে অর্থনৈতিক সূচক পূরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পরিবেশসহ অন্য প্যারামিটারগুলোতেও গুরুত্ব দিতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি করতে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। এর অংশ হিসেবে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা। সঠিক ব্যবস্থাপনায় পয়ঃবর্জ্য সম্পদে রূপ নিতে পারে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শুধু সিটি করপোরেশন অথবা পৌরসভায় নয়, এই পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা গ্রাম পর্যায়েও করতে হবে। পাশাপাশি এই খাতে লজিস্টিক সাপোর্ট ও অর্থায়ন বাড়াতে হবে। রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে যৌথভাবে এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ এবং দৈনিক ভোরের কাগজ আয়োজিত ‘সিটি স্যানিটেশন এন্ড ফিকাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট লার্নিং শেয়ায়িং’ শীর্ষক সেমিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।
দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র একরামুল হক টিটু, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের ফার্স্ট সেক্রেটারি এবং সুইডেন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব কো-অপারেশন নাওকা মার্টিনেজ বাকস্ট্রোম, ইউনিসেফের ওয়াশ স্পেশালিস্ট শফিকুল আলম। এ সময় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হকের হাতে এনজিও ফোরামের পক্ষ থেকে সম্মাননা তুলে দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে এনজিও ফোরামের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ‘রেজিলিয়েন্ট, ইনক্লুসিভ এন্ড ইনোভেটিভ সিটিজ ইন বাংলাদেশ’ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিটিওয়াইড ইনক্লুসিভ স্যানিটেশন (সিডব্লিউআইএস) বিষয়ে সেমিনারে আলোচনা করেন। বক্তারা বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশনের সার্বিক সুবিধা বিবেচনা করে সিডব্লিউআইএসের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কারণ এটি আর্থিকভাবে লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি খাত এনজিওদের পক্ষ থেকে ফিকাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট ও সলিড বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং পৌরসভা এলাকায় কীভাবে এটি আরো কার্যকর ও আর্থিকভাবে টেকসই করা যায়, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এমডিজি অর্জনের পর বাংলাদেশ সরকার এসডিজি ২০৩০ এজেন্ডা অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা বাংলাদেশকে গেøাবাল নর্থের দেশগুলোর সমকক্ষ দেখতে চাই।
তিনি জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরাও পিছিয়ে নেই। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন

দেশ গড়তে সব ধরনের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে পয়ঃবর্জ্য, কঠিন বর্জসহ অন্যান্য সব ধরনের বর্জ্য এমনভাবে ব্যবস্থাপনা করছি, যাতে পরিবেশ দূষিত না হয়। মানুষের স্বাস্থ্যের হানি না ঘটে।
তিনি বলেন, পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে সরকার সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্টের ব্যবস্থা করছে। এ সময় তিনি পৌরসভাগুলোকেও নিজস্ব আয় বাড়ানোর তাগিদ দেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ ধরনের প্রকল্পগুলো আমাদের পরিবেশ সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখার সঙ্গে সঙ্গে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে। দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারই এ ধরনের অত্যাধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ অত্যন্ত ঘনবসতি হওয়ায় পয়ঃবর্জ্যরে পরিমাণ অনেক বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, তা সত্ত্বেও খোলা স্থানে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনেক উন্নতি হয়েছে। শুধু সিটি করপোরেশন অথবা পৌরসভায় নয়, এই পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা গ্রাম পর্যায়েও করতে হবে। দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে হলে শুধু অর্থনৈতিক সূচক পূরণ করলেই হবে না। স্বাস্থ্য, পরিবেশসহ অন্য প্যারামিটারগুলোতেও গুরুত্ব দিতে হবে, অর্থাৎ সামগ্রিক উন্নয়ন করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি করতে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।
ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমরা সবাই একটি উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখি। এখানে সরকারি-বেসরকারি সব সেক্টর সমন্বিতভাবে কাজ করলেই একটি সুন্দর, উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া সম্ভব হবে। আমরা যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি সেই জায়গায় অনেক দূর এগিয়ে গেছি।
স্বাগত বক্তব্যে এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের নির্বাহী পরিচালক এস এম এ রশিদ বলেন, এনজিও ফোরাম ২০১৪ সাল থেকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে বাংলাদেশে স্থিতিস্থাপক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উদ্ভাবনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এই সিটি করপোরেশনের মেয়র স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও শক্তিশালী সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, যা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
সিটিওয়াইজ ইনক্লুসিভ স্যানিটেশন (সিডবি-উআইএস), ফিকাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট, বর্তমান পরিস্থিতি ও অগ্রগতির রুপরেখা তুলে ধরেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, শহরের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বস্তিতে বাস করে এবং শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্যানিটেশন অর্জনকে হ্রাস করে। এজন্য তিনি শহুরে এজেন্ডার দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।
এনজিও ফোরাম এবং স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার প্রশংসা করে সুইডেন দূতাবাসের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক প্রথম সচিব এবং ডেপুটি হেড অব কো-অপারেশন নায়োকা মার্টিনেজ বাকস্ট্রোম বলেন, সংস্থাগুলো টেকসই ওয়াশ সমাধান, শহুরে দরিদ্র ও বাসযোগ্য শহরগুলোর জন্য ওয়াশ এবং একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশের ওপর জোর দিয়েছিলেন যা একটি সার্বজনীন অধিকার।
এনজিও ফোরাম কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পের মাধ্যমে এমসিসি কীভাবে ফিকাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে সে সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এমসিসি মেয়র একরামুল হক টিটু। তিনি অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় এটি স্থাপনে মন্ত্রীর সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ইউনিসেফের ওয়াশ স্পেশালিস্ট শফিকুল আলম বলেন, দুই তিন দশক আগে বাংলাদেশ কমিউনিটি লিড টোটাল স্যানিটেশনের কথা বলত, এখন আমরা সিটি ওয়াইড ইনক্লুসিভ স্যানিটেশনে চলে এসেছি। আমাদের নর্দমা বা নন-নর্দমা নেটওয়ার্ক সমাধানের প্রয়োজন নেই। আমাদের অফসাইট এবং অনসাইট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টগুলোতে ফোকাস করতে হবে। এটি লক্ষ্য করা গেছে, যে ফিকাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মতো সামাজিক উদ্যোগগুলো চালানোর জন্য সরকারি ভর্তুকি প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, তরুণসমাজ ও গতিশীল নগর কর্তৃপক্ষ স্যানিটেশন খাতে প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন আনবে।
এনজিও ফোরামেন প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর শহীদুল ইসলাম বলেন, সেপটিক ট্যাংকগুলোর নির্ধারিত নিষ্কাশন সময়ের প্রয়োজন এবং নাগরিকদের জন্য কম ব্যয়বহুল। কারণ এটি এককালীন অর্থ দেয়া নয়। আমরা যখন দরিদ্রবান্ধব উদ্যোগের কথা বলছি, তখন স্যানিটেশন ট্যাক্স বিবেচনা করার সময় এসেছে। কারণ কর সর্বদা মানুষের আর্থিক অবস্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত। সরকারের পক্ষ থেকে স্যানিটেশন খাতের অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য একটি বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি জনগণকে দায়িত্বশীল ও জবাবদিহি করার সর্বোত্তম উপায় হবে।
বুয়েটের আইটির শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, এনজিও ফোরাম ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় এমসিসিতে ফিকাল স্লাজ ম্যানেজমেন্টে দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছে। এমসিসির কর্মীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার কারণে মেয়রকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। এমনকি, নিরাপদে পরিচালিত স্যানিটেশন নিশ্চিত করার জন্য ন্যায়সঙ্গত পরিষেবা উপলব্ধ হওয়া দরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়