শিশুশ্রম নিরসনে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান

আগের সংবাদ

ভারত-আমেরিকার বৈচিত্র্যময় অংশীদারত্ব গড়ার প্রত্যয় : হোয়াইট হাউসে মোদি-বাইডেন বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা

পরের সংবাদ

শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য একসঙ্গে কাজ করবেন মোদি-বাইডেন

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা, আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য কাজ করবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। চীনকে মোকাবিলায় ভারতকে অংশীদার হিসেবে চায় যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, ইউক্রেন সংকট সমাধানে কাজ করতে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে ভারত। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে নরেন্দ্র মোদি এবং জো বাইডেন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নিজেদের এমন প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন। বৈঠকের পর যৌথব্রিফিংয়ে তারা এসব তথ্য জানান।
এদিকে বৈঠকের আগে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন গণতন্ত্রকে অনুসরণ করে। আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব, তার ওপর ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। আর জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক সংজ্ঞায়িত করবে একবিংশ শতাব্দীকে। খাদ্য, জ্বালানি সংকট সমাধানে এবং শান্তিপূর্ণ বিশ্বের জন্য বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে দুই দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রে ৩ দিনের সফরে গত মঙ্গলবার নয়াদিল্লি ছাড়েন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। গত বুধবার নিউইয়র্ক থেকে তিনি ওয়াশিংটনে যান। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডির আমন্ত্রণে নৈশভোজে যোগ দেন। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে হোয়াইট হাউসে মোদিকে স্বাগত জানান জো বাইডেন ও জিল বাইডেন। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে নরেন্দ্র মোদিকে রাজসিক সংবর্ধনা দেয়া হয়।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে হোয়াইট হাউসের লনে স্থাপিত বিশেষ মঞ্চে দুই রাষ্ট্রনেতা এসে দাঁড়ান। সেখানে প্রথমে ভারতের জাতীয় সংগীত এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত বাজান বাদক দল। পরে জো বাইডেন এবং জিল বাইডেনের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদিকে বিশেষ উপহার দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতকের শুরুর দিকের হাতে লেখা মার্কিন পুস্তক দেয়া হয় মোদিকে। অতি পুরনো একটি ক্যামেরা ও ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফির ওপর বিশেষ বই উপহার দেন জো বাইডেন। এরপর উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন নরেন্দ্র মোদি। এরপর দুই নেতা সরাসরি বৈঠকস্থলে চলে যান।
মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ধর্মীয় বহুত্ববাদই ভারত এবং আমেরিকার মূল নীতি। এই দুই দেশ আগামী দিনে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক যোগে কাজ করতে বদ্ধ পরিকর। এই দুই দেশ, দুই শক্তি মিলে একুশ শতকের পথ নির্ধারণ করবে। এই দুই দেশ আজ যে সিদ্ধান্ত নেবে, তার প্রভাব পড়বে পরবর্তী প্রজন্মের ওপর।
তিনি বলেন, ‘আইনের সাম্য, ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় বহুত্ববাদ, আমাদের মানুষের বৈচিত্র্য এই মূল নীতিগুলো আমাদের দুই দেশের দীর্ঘ দিনের ইতিহাসে অনেক বাধা সহ্য করেও টিকে গেছে। দুই দেশ স্বাস্থ্য পরিষেবা, জলবায়ু পরিবর্তন, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসনের মতো বিষয় নিয়ে পাশাপাশি থেকে কাজ করবে।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত-আমেরিকার সম্পর্ক। আমাদের দুই দেশের সংবিধানের শুরু ‘আমরা, নাগরিকরা’। আমরা দুই দেশই নিজেদের বৈচিত্র্য নিয়ে গর্বিত। কোভিডের পর গোটা দুনিয়া নতুন পথে হেঁটেছে। সারা বিশ্বের উন্নয়ন, শান্তি, স্থিতিশীলতার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।’
বাইডেনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদি বলেন, করোনাপরবর্তী সময়ে বিশ্ব বদলে গেছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত মিত্রতা করে একসঙ্গে কাজ করছে। অংশীদারত্ব শক্তিশালী হয়েছে। এটা হলো গণতন্ত্রের শক্তি।
বাইডেনকে মোদির উপহার : আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলর ইয়টসের অনুবাদ করা উপনিষদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মাইসুরুর বিখ্যাত চন্দনকাঠের তৈরি একটি বাক্সের মধ্যে রাখা বইটি ১৯৩৭ সালে ইয়টসের অনুবাদ করা ‘টেন প্রিন্সিপলস অব উপনিষদ’ এর প্রথম সংস্করণ।
হোয়াইট হাউসে দুই রাষ্ট্রনেতার সাক্ষাতের সময় মোদির দেয়া উপহারের তালিকার মধ্যে ছিল- কলকাতার স্বর্ণকারদের তৈরি রুপার গণেশ এবং প্রদীপ। এছাড়া জয়পুরের শিল্পীদের তৈরি কারুকাজ করা ওই চন্দনকাঠের বাক্সে ছিল যজুর্বেদের বৈখনস গৃহসূত্রম। বাইডেনের স্ত্রী জিলকে একটি সবুজ হিরা উপহার দিয়েছেন মোদি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জিলকে উপহার দেয়া সাড়ে ৭ ক্যারাটের ওই হিরা খনি থেকে মেলেনি। পরীক্ষাগারে সৌরশক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পদ্ধতিতে বানানো হয়েছে। প্রাকৃতিক হিরার সমস্ত বৈশিষ্ট্যযুক্ত এই কৃত্রিম হিরা পরিবেশ সংরক্ষণের বার্তাবাহী। হিরাটি রাখা ছিল কাশ্মিরের শিল্পীদের তৈরি প্রখ্যাত ‘কর-ই-কলমদানি’ বাক্সে। স্থানীয়
সময় বৃহস্পতিবার মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন নরেন্দ্র মোদি। অংশ নেবেন হোয়াইট হাউসের রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গেও নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
মোদির সম্মানে বিশেষ নৈশভোজ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্টলেডি জিল বাইডেনের আমন্ত্রণে ৩ দিনব্যাপী সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে একাধিকবার হোয়াইট হাউসে আপ্যায়িত করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতেই মোদির সম্মানে বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করেছেন বাইডেন দম্পতি।
জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদি যেহেতু নিরামিষাশী, এ কারণে তার খাবারের মেন্যুতে সব নিরামিষ খাবারই রেখেছে হোয়াইট হাউস। তবে গুজরাটি খাবারের কোনো আইটেম নেই এ তালিকায়। হোয়াইট হাউসের দক্ষিণ লনের একটি প্যাভিলিয়নে নৈশভোজে অংশ নেবেন প্রায় ৪০০ অতিথি। নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও অতিথিদের মধ্যে থাকতে পারেন অ্যাপলের সিইও টিম কুক, গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা, ফেডেক্সের রাজ সুব্রামানিয়াম প্রমুখ।
শুধু খাওয়া-দাওয়াই নয়, অতিথিদের জন্য থাকছে বিনোদনের ব্যবস্থাও। এতে অংশ নেবেন আমেরিকান বেহালাবাদক জোশুয়া বেল এবং পেন মাসালা নামে পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটিভিত্তিক একটি দক্ষিণ এশীয় কাপেলা মিউজিক গ্রুপ। অনুষ্ঠানস্থলের সাজসজ্জায় থাকছে মার্কিন এবং ভারতীয় সংস্কৃতির নানা উপাদান, যার মধ্যে রয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পাখি ময়ূর ও ঈগলের চিত্র। টেবিলগুলো সাজানো হবে বিজেপির প্রতীক পদ্মফুল দিয়ে।
যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরির চুক্তিতে স্বাক্ষর : অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনের জন্য একসময় বেশ কিছু দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো ভারতকে। কিন্তু এবার ভারত নিজেও এই ধরনের ইঞ্জিন তৈরি করবে। সৌজন্যে আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থা জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই)। বৃহস্পতিবার সংস্থার ‘এরোস্পেস’ বিভাগের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্থান এরোনটিকস লিমিটেড (হ্যাল) এর। এই চুক্তি অনুযায়ী দুই সংস্থা যৌথভাবে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করবে।
নরেন্দ্র মোদি বৃহস্পতিবার জেনারেল ইলেকট্রিকের চেয়ারম্যান এইচ লরেন্স কাল্পের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের পক্ষে একটি টুইট করে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাক্রমে জেনারেল ইলেকট্রিক সংস্থা ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে প্রযুক্তিগত কাজ করতে সম্মত হয়েছে। জেনারেল ইলেকট্রিকের পক্ষ থেকেও একটি বিবৃতি দিয়ে এই চুক্তিকে একটি মাইলফলক বলে অভিহিত করা হয়।
চাঁদে যৌথভাবে মানুষ পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে চাঁদে মানুষ পাঠানোর লক্ষ্যে ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডে’ যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। তাছাড়া আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনেও ভারতীয় নভোচারী পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে।
১৯৬৭ সালে আর্টেমিস অ্যাকর্ড প্রতিষ্ঠা করে যুক্তরাষ্ট্র। মানব কল্যাণের স্বার্থে কিছু নীতি মেনে মহাকাশকে ব্যবহার করা হবে- এমন উদ্দেশ্যেই এটি তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বের ২৬টি দেশ এ অ্যাকর্ডের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভারত এতে যোগ দেবে বলেই আশাবাদী হোয়াইট হাউস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়