পাগলায় মানববন্ধন : মন্দিরের জায়গা উদ্ধারের দাবি

আগের সংবাদ

স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

পরের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সেন্টমার্টিন দ্বীপ কাউকে লিজ দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসবে না- উল্লেখ করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে ক্ষমতায় থাকার আমার কোনো অসুবিধা নেই- এটা আমি জানি। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না। গতকাল বুধবার দুপুরে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। সদ্য সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে প্রথমে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর সমসাময়িক ইস্যুতে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন।
কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। এখন তারা দেশ বিক্রি করবে, নাকি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়? তিনি বলেন, আমি এতটুকু বলতে পারি, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। আমার হাত থেকে এই দেশের কোনো সম্পদ কারো কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। আর এখনো যদি বলি, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেব, তাহলে ক্ষমতায় থাকাতে আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আমি কাউকে খেলতে দেব না, আমার দেশের

মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই। আর আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কোনো জায়গায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে বা কাউকে আক্রমণ করবে- এ ধরনের কাজ আমরা হতে দেব না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি। এমনকি মিয়ানমার থেকে প্রায় ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা এসেছে। তারপরও তো আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া বাধাইনি। আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। এরা যেন ফেরত যায়, সেজন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপিসহ কিছু দল মাঠে নেমেছে। তাদের অসুবিধাটা কোথায়? সমস্যাটা কী? এত মূল্যস্ফীতির মধ্যেও মানুষ দুই বেলা পেট ভরে ভাত খাচ্ছে। হ্যাঁ, একটু কষ্ট হচ্ছে। সেটা আমি বুঝি। আর বুঝি বলেই যতটা করা যেতে পারে- আমরা করার চেষ্টা করছি।
শত ফুল ফুটতে দিন, সুন্দর ফুলটা বেছে নেব : জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে কোনো বার্তা দেবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে গণতন্ত্র আছে, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে। দেশটার উন্নতি হয়েছে। দেশটা এগিয়ে গেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। মানুষের ভেতরে একটা আস্থা-বিশ্বাস ফিরে এসেছে। দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। সবদিক থেকেই উন্নত। স্বাভাবিকভাবেই সামনে ইলেকশন। প্রার্থী হতে অনেকের আকাক্সক্ষা থাকবে- এতে সন্দেহ নেই। নির্বাচনে কাকে প্রার্থী করা হবে বা করা হবে না- এটা আমাদের দলেরও একটা লক্ষ্য থাকে। তিনি বলেন- অবাধ, নিরপেক্ষ ও স¦চ্ছ ইলেকশন হোক, এটা সব সময় আমাদেরই দাবি। গণতান্ত্রিক পরিবেশে ইলেকশন হবে। অনেকেই প্রার্থী হতে পারে। প্রার্থী যদি হয়, শত ফুল ফুটতে দিন। যে ফুলটা সবচেয়ে সুন্দর, সেটাই বেছে নেব।
অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যাতে অর্থ বিনিময়ের সুযোগ থাকে : ব্রিকসে যোগদান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিকসে আমরা যোগ দেব। যদিও ফাউন্ডার মেম্বার হতে পারিনি; কিন্তু ব্রিকসের প্রথম থেকেই আমরা ছিলাম, আছি। আমরা চাচ্ছি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো একটার ওপর যেন নির্ভরশীলতা না হয়। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও যাতে অর্থ বিনিময়ের সুযোগটা থাকে। প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যেন সহজে কিনতে পারি। দেশের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে পারি। সেসব বিষয় বিবেচনা করেই আমরা ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা দেখব বিকল্প কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অর্থ ব্যবহারের ব্যবস্থা যদি কেউ নেয় আমরা তার সঙ্গে আছি। কয়েকটা দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি। যেন আমাদের নিজস্ব অর্থের বিনিময়ে কেনাবেচা করতে পারি, সেদিক থেকে আমাদের পদক্ষেপ নেয়া আছে। এটা কার্যকর হলে, দেখতে পারবেন।
নতুন মুদ্রা চালুর বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নতুন মুদ্রা বিশ্বে চলছে। ডলারও চলে। ইউরোপ ইয়েলো দিয়ে চালায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আছে। আমরা যেখানে সুযোগ পাব, সেখানে এটা করব। যেটা আমাদের দেশের জন্য কল্যাণকর হবে, আমরা সেটাই নেব। একটা দেশে নির্ভরশীল থাকার যুগ আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে- এটা হলো বাস্তবতা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য পত্রিকায় ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। তিনি সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে কিছু বলবেন কিনা- এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন চলছে। ভারতীয় পত্রিকা দ্য হিন্দুস্তান টাইমসে খবর প্রকাশিত হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ভারতকে অনুরোধ করেছেন- বাংলাদেশের হয়ে কথা বলার জন্য। অথচ তিনি দেশে সাংবাদিকদের বলেছেন, এ বিষয়ে ভারতের কাছে ‘ওকালতি’ করার প্রয়োজন দেখছেন না। এ বিষয়টি স্পষ্ট করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা বিষয় আপনারা ভুলভাবে পত্রিকায় ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন ভারতে ধারাবাহিক গণতন্ত্র রয়েছে, তারা যথেষ্ট পরিপক্ব, যথেষ্ট দক্ষ। তারা জানে কী বলতে হবে। কাজেই তারা কী বলবে সে ব্যাপারে তাদের কাছে আমাদের ওকালতি করার দরকার নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এটা বলেছেন। সেটাকে ভুলভাবে শিরোনাম করা হয়েছে। কথা যদি টুইস্ট করা হয় তাহলে তো কিছু বলার নেই। আমি পরিষ্কার করে দিলাম।
যারা মজুতদারি করে খবর দেন, ব্যবস্থা নেব : নিত্যপণ্যের দাম ও বাজার সিন্ডিকেটের শক্তি নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক থাকে সুযোগসন্ধানী। সব সময় সুযোগ নিতে চেষ্টা করে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য থাকার পরও যখন দাম বাড়ে, তার মানে কিছু লোক মজুতদারি করে। তারা ইচ্ছে করে মজুতদারি করে দাম বাড়ায়। তখন আমাদের কিছু বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হয়। যেমন পেঁয়াজ আছে বাজারে, কিন্তু ছাড়ছে না, নিয়ে বসে আছে। মানে পেঁয়াজ পচাবে, ফেলে দেবে, তাও বেশি দামে বেচার জন্য বসে থাকবে। যখন পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিলাম, ১০ থেকে ১২ হাজার টন আসতে না আসতেই দাম কমে গেল। এ রকম যারা হোল্ডিং, মজুতদারি ও কালোবাজারি করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সাংবাদিকরাও তাদের বের করেন। কোথায় কে কী গুঁজে রাখল, আমরা খুঁজে খুঁজে তাদের বের করব।
মানুষকে খাবার সাহায্য দেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর থেকে শুরু করে অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ শুরু করেছি। মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য ১ কোটি মানুষকে খাবার সাহায্য দেব। টিসিবির কার্ডের মাধ্যমে সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছাব। পণ্য বেশি দামে কিনে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে এসব ব্যবস্থা নিচ্ছি যেন বাজারের ওপর চাপ না পড়ে। এবার ফসলে ভালো উৎপাদন হয়েছে। আগামীতেও ভালো হবে। সবাই উৎপাদন করে চাহিদা মেটাচ্ছে।
সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন : বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে নানারকম উদ্বেগ আছে, তা নিরসনে নির্বাচন এগিয়ে আনা হবে কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কী এমন পরিস্থিতিতে পড়লেন, নির্বাচন আগে আপনাদের মুক্তি দিতে হবে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী যখন নির্বাচন হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময় আছে, সেই সময় নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করে, অনেক রক্ত দিয়ে আমরা একটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছি। আপনারা কি চান, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক? এই ধারা আছে বলেই এত উন্নতি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যখন ঘোষণা দেবে, তখন ইলেকশন হবে। জনগণ ভোট দেবে। যদি আমাকে ভোট দেয়, আমি আছি, না দিলে নেই। নির্বাচন নিয়ে একেকজন একেকটা কথা বলবে, এটাই স্বাভাবিক। যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী ছিল, যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করেছে, যারা এই দেশের গণতন্ত্র হরণ করে গণতন্ত্রের প্রবক্তা সেজেছে, স্বাভাবিকভাবে তারা কখনো এই দেশের কল্যাণ চাইবে না। তারা একটা ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইবে। সেখানে দেশি-বিদেশি নানারকম লোক থাকবে। দুর্ভাগ্য হলো, আমরা ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করলাম আর আর আমাদের ভোটচোর বলে। যারা বলে তারা হলো ভোট ডাকাত। যাদের উত্থান হচ্ছে ডাকাতি করে, খুন করে, হত্যা করে। আমাদের সরকারের আমলে যে কয়েকটা নির্বাচন হয়েছে, আপনারাই বলেন- সবগুলো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে কিনা? তারপরও নির্বাচন নিয়ে কারা প্রশ্ন তুলছে? যারা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন সহ্য করতে পারছে না, তারাই পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশে অস্বস্তিকর কোনো পরিবেশ নেই।
অপপ্রচারে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না : মার্কিন কয়েকজন কংগ্রেসম্যানের লেখা চিঠিতে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা- জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের লোকজন এর প্রতিবাদ করেছে। তারা বলেছে, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য। সেভাবে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। নির্বাচন যত কাছে আসবে আরো বেশি করে এ ধরনের প্রচারণা চালাবে তারা। ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচার করা হচ্ছে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। অপপ্রচারে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্থিতিশীল থাক, উন্নতি করুক, দেশের মানুষ বিশ্বে যে সম্মান পাচ্ছে- সেটা পাক বা বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা আসুক এটা তো তারা চায় না। তারা ক্ষমতায় থাকতে লুটেপুটে খেত। সেই খাওয়াটা বন্ধ হয়ে গেছে। সেজন্য তাদের মনোকষ্ট। কিছু তো আছে দেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশে আক্রমণ করবে। আমার দেশকে নিয়ে খেলবে। এটা তো অন্তত আমি হতে দিতে পারি না, এটা তো আমি হতে দেব না। দেশে কোনো না কোনো অপরাধ করে বিদেশে গিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা তো চিহ্নিত লোক। হ্যাঁ, মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করছে, এটা ঠিক। আমি দেশবাসীকে বলব, এই সমস্ত অপপ্রচারে কান দেবেন না, বিভ্রান্ত হবেন না। নিজেদের মনে প্রশ্ন করতে হবে, ভালো আছেন কিনা, দেশটা ভালো চলছে কিনা, দেশটা এগোচ্ছে কিনা, দেশের আরো উন্নতি হবে কিনা। দেশ আবার সন্ত্রাস যুগে প্রবেশ করবে, ভোট চুরি, ভোট ডাকাতির যুগে প্রবেশ করবে কিনা এটা জনগণের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি।
নির্বাচনকালীন সরকারে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না : অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চায়, নাকি ২০০৭ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জরুরি অবস্থা ও ধরপাকড় চায়- এটা দেশের মানুষকে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের ওয়েস্টমিনস্টার টাইপের গণতন্ত্র; তাই ইংল্যান্ডসহ ওইসব জায়গায় যেভাবে নির্বাচন হয় ঠিক সেভাবেই আমাদের নির্বাচন হবে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। এটা সম্পর্কে খালেদা জিয়ার উক্তি ছিল পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নেই। একবার যেটা তারাই বাদ দিয়েছে, এ পদ্ধতিটা তারাই নষ্ট করেছে, তারা রাখেনি। সেটাকে তারা আবার ফেরত চাচ্ছে। অথচ উচ্চ আদালতের রায় মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন হয়েছে। একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত সরকারপ্রধান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবেন। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না। এটা জানার পরও কেন সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি করা হচ্ছে? উদ্দেশ্যটা কী? তার মানে এ দেশের গণতান্ত্রিক ধারাটাকে নষ্ট করা। দেশ যে দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠুভাবে চলছে সেটাকে নষ্ট করা।
লিখিত বক্তব্যে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী : এর আগে সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, জেনেভা সফরকালে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে আমি রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি তাদের জন্য খাদ্য সহায়তাসহ আন্তর্জাতিক অর্থ সহায়তার পরিমাণ যে হ্রাস পেয়েছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করি। এরপর আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের পক্ষে প্রিন্স রহিম আগা খান আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে চলমান কার্যক্রমের পাশাপাশি নার্সিং ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও জলবায়ু অভিযোজনসহ বিভিন্ন খাতে আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের বিষয়ে মত দিই। লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের একটি বড় শিল্পোন্নত দেশ মাত্র দুটি আইএলও মৌলিক সনদ অনুস্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ ১০টি মৌলিক সনদের মধ্যে ৮টিই অনুস্বাক্ষর করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসার সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও শ্রম খাতের অর্জনের প্রশংসা করার পাশাপাশি নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদস্য হওয়ায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। আমি ব্রিকসে বাংলাদেশকে নেয়ার পাশাপাশি ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার দূতাবাস স্থাপনের অনুরোধ জানাই। শেখ হাসিনা আরো জানান, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে আমি বাংলাদেশে একটি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কেন্দ্র স্থাপনের আহ্বান জানাই। ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ক্লাউস সোয়াবের সঙ্গে বৈঠকে আমি ফোরামের উদ্যোগে বিশ্বজুড়ে এক ট্রিলিয়ন গাছ রোপণ ও পরিচর্যার কর্মসূচিতে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিই।
কাতার সফর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে বলেন, রুয়ান্ডার রাষ্ট্রপতি পল কাগামের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। তিনি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেন। আমরা এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্টের আওতায় দুই দেশের মধ্যে দ্রুত বিমান চলাচল চালু করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করি। সেই সঙ্গে আফ্রিকার আশপাশের দেশগুলোতে আমাদের কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও উৎপাদন বাড়ানোর অভিজ্ঞতার আলোকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কনটাক্ট ফার্মিংয়ে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতির কথা জানাই। সফরকালে কাতারের জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন শেরিদা আল কাবির সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। ২০১৫ সালে সম্পাদিত ১০ বছর মেয়াদি চুক্তির ধারাবাহিকতায় কাতার থেকে অব্যাহতভাবে এলএনজি আমদানির বিষয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। সেখানে সৌদি আরবের বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ এবং অর্থনীতি ও পরিকল্পনাবিষয়ক মন্ত্রী ফয়সাল আল ইবরাহিমের সঙ্গেও আমার বৈঠক হয়। সৌদি বিনিয়োগের মাধ্যমে কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও চারশ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার পার্ক স্থাপনের বিষয়গুলোকে ত্বরান্বিত করার বিষয়ে সম্মত হই। এছাড়া পায়রা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে আমি সৌদি বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক হাব হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টিকে আমি স্বাগত জানাই। প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, কাতার ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২২ পরবর্তী সময়ে কর্মহীন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানিকে আমি অনুরোধ করি। তিনি বিষয়টি দেখার পাশাপাশি কাতার থেকে বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে সুবিধাজনক শর্তে এলএনজি আমদানির বিষয়টি নিশ্চিতের ব্যাপারে আশ্বাস দেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়