ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

সাক্ষাৎকার : আফজাল করিম > প্রায় সব সূচকে এগিয়ে রয়েছে সোনালী ব্যাংক

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এক বছরে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। চেক বই ও স্বাক্ষর যাচাই করা ছাড়াই কিউআর কোড স্ক্যান করেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে কিংবা বিদেশ থেকেই হিসাব খুলতে পারছেন গ্রাহকরা। ই-ওয়ালেট মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে চলছে লেনদেন। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক ব্যাংকিং সেবা দিতে সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় অংশীদার হিসেবে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছে সোনালী ব্যাংক পিএলসি।
পাশাপাশি ঋণ বিতরণেও অনেক এগিয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকটি। অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই ২০২২- মে ২০২৩) ব্যাংকটিতে ১৩ হাজার ২৩ কোটি টাকা ঋণ বেড়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্মার্ট ব্যাংকিং সেবা প্রদানে সোনালী ব্যাংক অনেক দূর এগিয়েছে। গত বছরের আগস্টে ব্যাংকের সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আফজাল করিম দায়িত্ব নেয়ার পরপরই তিনি প্রযুক্তিনির্ভর সেবার পরিধি বাড়ানোর নানা উদ্যোগ নেন। এছাড়া নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছেন, খেলাপি ঋণ কমিয়েছেন। তার দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকের ঋণ ও আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) বর্তমানে ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫১ শতাংশ। এছাড়া গত এক বছরে অর্থঋণ আদালতের প্রায় সাড়ে ৪০০ মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এটিও সোনালী ব্যাংকের ইতিহাসে একটি রেকর্ড। ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নতুন অর্থবছরে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানালেন তিনি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মরিয়ম সেঁজুতি-
ভোরের কাগজ : রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে নিযুক্ত হয়েছেন প্রায় এক বছর। এই সময়ের মধ্যে আর্থিক সূচকগুলোতে সোনালী ব্যাংক কতখানি এগিয়েছে বলে মনে করেন?
আফজাল করিম : এক বছরে সোনালী ব্যাংক পিএলসির ঋণ বিতরণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সোনালী ব্যাংকের বর্তমান মোট ঋণের পরিমাণ ৮৮ হাজার ৪৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭৫ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এর ফলে গত ১১ মাসে ব্যাংকটিতে ১৩ হাজার ২৩ কোটি টাকা ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।
আমি সোনালী ব্যাংকে সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে ২০২২ সালের ২৮ আগস্ট দায়িত্ব নেই। এর পরপরই বিভিন্ন পারফর্মিং লোন (ঋণ সম্পাদন) বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। আমার দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকের ঋণ ও আমানত অনুপাত (এডি রেশিও) বর্তমানে ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৫১ শতাংশ।
ব্যাংকের নন-পারফর্মিং লোন (অলস ঋণ) কমিয়ে আনতে আমি শুরুতেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। পাশাপাশি ব্যাংকের সেবার পরিধি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা চালু করি। আশা করি, ২০২৬ সালের মধ্যে নন-পারফর্মিং লোন সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে পারব। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের হার সর্বনি¤œ। গত এক বছরে ব্যাংক প্রায় সব সূচকেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছি।
ভোরের কাগজ : ঋণ বিতরণে সোনালী ব্যাংক কোন খাতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
আফজাল করিম : সব খাতেই গুরুত্ব দিয়ে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে সরকারের চাহিদা অনুযায়ী, দেশের কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএসএমই) শিল্প খাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমি যখন এ ব্যাংকে আসি তখন সম্পূর্ণ বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশে ছিল সিএসএমই খাত। সেটা এখন বেড়ে ১৫ শতাংশের মতো হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সিএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করলে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষও সুবিধা পায়। ফলে কর্মসংস্থান বেশি সৃষ্টি হয়। প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ উপকৃত হয়। অনেকেই অভিযোগ করে, এ খাতে ঋণ পেতে সমস্যা হয়। সোনালী ব্যাংকে সিএসএমই খাতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ দেয়া হয়। এখন অপরিচিত কোনো ব্যক্তি যার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই, থাকলেও তার ট্রেড লাইসেন্স নেই, এমন লোক হঠাৎ এসে যদি বলে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেবে বিনা জামানতে। আমি তাকে তো দিতে পারব না। সিএসএমই ঋণের পাশাপাশি আমরা কৃষি ঋণেও গুরুত্ব দিচ্ছি। আগামীতে কৃষিঋণ বিতরণ শতভাগ পূরণ করতে যাচ্ছি।
ভোরের কাগজ : জনগণকে সোনালী ব্যাংকের প্রতি আকৃষ্ট করতে নতুন কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
আফজাল করিম : সহজ ও স্বাচ্ছন্দময় ব্যাংকিং সেবায় সোনালী ব্যাংক সবসময় অগ্রগামী। জনগণের দোরগোঁড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে সোনালী ব্যাংক প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে সম্প্রতি চেকের বিকল্প হিসেবে কিউআর কোডনির্ভর নগদ অর্থ উত্তোলন সেবা চালু করেছে। কিউআর কোড ব্যবহার করে বর্তমানে গড়ে দৈনিক লেনদেন সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ এবং লেনদেনের পরিমাণ প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। দেশের বৃহত্তম এই ব্যাংকটিকে একটি আদর্শ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের মার্চ মাসে সোনালী ই-সেবা অ্যাপ চালু করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই মাত্র দুই মিনিটে যে কোনো গ্রাহক হিসাব খুলতে পারেন। এছাড়া এই অ্যাপের মাধ্যমে ইনকাম ট্যাক্স, ট্রাভেল ট্যাক্স, ভ্যাট, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ভর্তি ফি, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি, বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, পাসপোর্ট ও ট্যাক্সের টাকা দেয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা রকম বার্ষিক ফি, চার্জ ও ভ্যাট পরিশোধ করা যায়। একই বছরের ১৭ মার্চ চালু করা হয় সোনালী ই-ওয়ালেট সেবা। চলতি মাস পর্যন্ত যার হিসাব সংখ্যা ৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬২৭টি। ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন ১৪ হাজারের বেশি ট্রানজেকশন এবং দৈনিক প্রায় ১৫ কোটি টাকার মতো লেনদেন হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডধারীর সংখ্যা। বর্তমানে প্রায় নয় লাখ গ্রাহক ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ব্যবহার করছেন। ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক রয়েছেন পাঁচ হাজারের মতো। সোনালী ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে দৈনিক লেনদেনের সংখ্যা লক্ষাধিক এবং গড় লেনদেনের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি। সোনালী ব্যাংকে সর্বোত্তম গ্রাহকসেবা নিশ্চিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে আমরা চলতি বছরের ১৫ মার্চ কল সেন্টার সেবা চালু করেছি। এই কল সেন্টারে গ্রাহক দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ১৬৬৩৯ নম্বরে ফোন করে যে কোনো জিজ্ঞাসার জবার ও সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান পাবেন। বিদেশ থেকেও সার্বক্ষণিক +৮৮০৯৬১০০১৬৬৩৯ নম্বরের মাধ্যমে সেবা পাওয়া যাবে।
আমরা সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং দ্রুত সেবার বিষয়টি মাথায় রেখে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ১৮টি মডেল শাখা চালু করেছি। এসব শাখায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সিটিজেনদের সেবার জন্য পৃথক কাউন্টার রয়েছে। রয়েছে ওয়ানস্টপ সার্ভিস কাউন্টার। ক্রমান্বয়ে দেশব্যাপী মডেল শাখার সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।
ভোরের কাগজ : দেশে ডলার সংকট সমাধানে বিশিষ্টজনরা রেমিট্যান্স আহরণ বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আবার এক্সপোর্ট বাড়ানোর প্রতিও নজর দিতে বলছেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
আফজাল করিম : ই-ওয়ালেট মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেশ-বিদেশ হতে চলছে লেনদেন। একজন প্রবাসী তার একাউন্ট থেকে যে কোনো সময় যাকে খুশি টাকা পাঠাতে পারছেন। এজন্য আমরা কমিশন ফ্রি করেছি। ইউএসএ তে বন্ধের দিনেও আমাদের ৩টি ব্রাঞ্চ খোলা রাখা হচ্ছে। এছাড়া দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় আরো ১০ টি ব্রাঞ্চ খোলার কাজ করছি।
ভোরের কাগজ : আগামীর চ্যালেঞ্জ হিসেবে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন?
আফজাল করিম : ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ আগেও ছিল, এখনো আছে, আগামীতেও থাকবে-এটাই স্বাভাবিক। সারা বিশ্বের ব্যাংকিং খাতেই চ্যালেঞ্জ থাকে। আমাদের এ খাতে খেলাপি ঋণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমরা দক্ষতার সঙ্গে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি। তার প্রমাণ হচ্ছে, এক বছরে আমরা ৪ শতাংশ খেলাপি কমিয়েছি। আমাদের মূলধন ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তা কমিয়ে বর্তমানে ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকায় আনা হয়েছে। অর্থাৎ যেসব চ্যালেঞ্জগুলো সামনে ছিল সেগুলো সাফল্যের সঙ্গেই মোকাবিলা করছি।
ভোরের কাগজ : বর্তমান সরকারের অন্যতম বড় সাফল্য স্বপ্নের পদ্মা সেতু তৈরি। এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা তৈরি হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের একজন কৃতী সন্তান হিসেবে আপনি কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন কী?
আফজাল করিম : নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাহসী উদ্যোগ। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ অনেক সুবিধা পাচ্ছে। কৃষি খাতে উন্নয়ন হচ্ছে। বিভিন্ন শিল্প কল-কারখানা তৈরি হচ্ছে। সোনালী ব্যাংক ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব জেলাতেই শাখা-উপশাখা খুলে প্রান্তিক জনগণের সেবা করছে। দক্ষিণাঞ্চলকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া হিসেবে তৈরি করতে আমরা সর্বাত্মক ভূমিকা রাখতে চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়