ঠিকানা নিয়ে ৩২ বার তদন্তে উষ্মা হাইকোর্টের

আগের সংবাদ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় বসবে না আ.লীগ > সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : অন্য দেশের সঙ্গেও অর্থ বিনিময়ের সুযোগে ব্রিকসে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত

পরের সংবাদ

গণঅধিকার পরিষদ কার নিয়ন্ত্রণে? নুর ও রাশেদকে বহিষ্কার করলেন রেজা কিবরিয়া

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২৩ , ১:২৫ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নেতৃত্ব নিয়ে তুলকালাম চলছে গণঅধিকার পরিষদে। দলটির আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরু এর মধ্যেই একে অপরের বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ তুলে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার করেছেন। প্রথমে ভিপি নুরের সিদ্ধান্তে রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে রাশেদ খানকে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। একদিন পরেই নুরুল হক নুরু ও ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খানকে পাল্টা বহিষ্কার করেন ড. রেজা কিবরিয়া। এমন পাল্টা-পাল্টি বহিষ্কারে প্রশ্ন উঠেছে গণপরিষদ আসলে কার?
সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক বৈঠকে নুরু ও রাশেদকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় গণঅধিকার পরিষদ। গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া তাদের বহিষ্কারাদেশে স্বাক্ষর করেন। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে নুরুল হক নুরের যোগাযোগ, আর্থিক কেলেংকারিসহ নানা কারণে বিরক্ত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
সর্বশেষ মোসাদের সঙ্গে নুরুল হক নুরের টাকা লেনদেনের বিষয়টি সামনে এলে দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে নুরের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না থাকায় ভালোভাবে নেননি কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল দিনভর দফায় দফায় বৈঠক করেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতারা। সভায় সংগঠনটির বেশিরভাগ যুগ্ম আহ্বায়ক, যুগ্ম সদস্য সচিব এবং কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া ড. রেজা কিবরিয়া। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে নুরুল হক নুরকে বহিষ্কার করা হয়। নুরকে বহিষ্কারের পর সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করা হাসান আল মামুনকে। হাসান আল মামুন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন।
গতকাল বিকালে কম্বোডিয়া থেকে মোবাইল ফোনে রেজা কিবরিয়া বলেন, নুরের নেতৃত্বে চলার জন্য আমি গণপরিষদে আসিনি। আমিই গণপরিষদের আহ্বায়ক আছি, আহ্বায়ক থাকব। আমার সঙ্গে ৭৫ শতাংশ নেতাকর্মী আছে। সিনিয়ররা আমার সঙ্গে আছেন। সিনিয়ররা কেউ ওর (নুরুল হক নুর) সঙ্গে থাকবে না।
গত সোমবার কম্বোডিয়ার যান রেজা কিবরিয়া, ফিরবেন ২৫ জুন। তিনি জানান, আমি এখন কেম্বোডিয়াতে আছি। আমাকে ফাইন্যান্স মিনিস্টার ডেকেছেন। আমি ওখানে কাজ করতাম। বাজেটের একটা ইস্যু নিয়ে আলোচনা চলছিল, আমার মতামত চাচ্ছিল। সেজন্য এখানে এসেছি।
এদিকে গত সোমবার নুরুল হক নুরপন্থিদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেজা কিবরিয়াকে সরিয়ে বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হয়েছেন রাশেদ খান। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দপ্তর সমন্বয়ক শাকিল উজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুশৃঙ্খলভাবে দল নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্তে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খাঁনকে সর্বসম্মতিক্রমে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনোনীত করা হয়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক ও নুরুল হক নুরকে সদস্য সচিব করে বাংলাদেশ গণপরিষদ আত্মপ্রকাশ হয়।
নুরের সঙ্গে বিরোধের কারণ ব্যাখ্যা করে রেজা কিবরিয়া বলেন, গণঅধিকার পরিষদে গন্ডগোল হয়েছে মূলত দুই-তিনটা বিষয় নিয়ে। একটা হচ্ছে, ইনসাফ কায়েম কমিটির মিটিংয়ে আমি বক্তব্য দিতে কেন গিয়েছি? এখানে এসে কৈফিয়ত চেয়েছে। আমার উত্তর হলো- আমি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে চলার জন্য আসিনি। আমার অভিজ্ঞতা ও আমার বয়স ওর চেয়ে বেশি। ওর কথায় আমি চলি না। এটা সাফ কথা। আপনারা খেয়াল করবেন, সরকারবিরোধী হলেই আমি আছি। আমি ইসলামিক আন্দোলনের মিটিংয়ে গিয়েছি, বিএনপির মিটিংয়ে গিয়েছি, এবি পার্টির মিটিংয়ে গিয়েছি। আমার কোনোটাতেই আপত্তি নাই। সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গেই আমি আছি।
তিনি বলেন, ‘টাকা-পয়সা’ লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন উঠাতে নুর ক্ষেপে গেছেন। তিনি প্রবাসীদের কাছ থেকে কি টাকা পান? টাকা নিয়ে কি করেন? সেটা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। আর ইসরাইলীদের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক, টাকার লেন-দেন হয়েছে কিনা? এই প্রশ্ন করাতে তিনি ক্ষেপেছেন। ইসরাইলীদের সঙ্গে কেন দেখা করেছেন তার সঠিক জবাব দিতে পারেননি।
আহ্বায়ককে সরানোর বিধি সংগঠনের গঠণতন্ত্রে নেই জানিয়ে রেজা কিবরিয়া বলেন, কিন্তু তিনি ইচ্ছামতো কাজ করছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের নিবন্ধন আমার নামে আসবে, ওর নামে আসবে না। কোন দল আজ পর্যন্ত দলের প্রধানকে সরিয়ে সেক্রেটারি দখল করতে পারেনি। চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু এটা সম্ভব না। দলের নিবন্ধন যার নামে হয়, যে দলের প্রধান তাকে সরিয়ে অন্য কাউকে আনা সম্ভব না। আমাদের ইলেকশন কমিশন এ ব্যাপারে জাজমেন্ট দিয়েছে। চেষ্টা করুক, এটা সম্ভব না।
রেজা কিবরিয়া বলেন, আমি আমার দলের লোকজন নিয়ে কাজ করব। আমার ধারণা, ৭৫ শতাংশ লোক আমার সঙ্গে থাকবে। আমি দেশের বাইরে আছি। আমি কয়েকটা জিনিস সই করে রওনা দিয়েছি। বাকিগুলো ২৫ তারিখে দেশে ফিরে করে ফেলব।
সূত্র জানায়, গত রবিবার সন্ধ্যায় গুলশান ২ নম্বর সেক্টরের ৫৫ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়িতে দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়ার বাসার ছাদে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠক বসে। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
দলের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বৈঠকে আসেন সাড়ে ৮টায়। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজা কিবরিয়া। তিনি বলেন, ৭টার বৈঠকে কেন সদস্য সচিব সাড়ে ৮টায় উপস্থিত হবেন? এরপর থেকেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলতে থাকে। যার রেশ থাকে শেষ পর্যন্ত। রাত ৯টা নাগাদ এক পর্যায়ে রাগ করে উঠে বাসায় চলে যান রেজা কিবরিয়া।
পরবর্তী সময়ে এ ঘটনা গত সোমবার রাতে পাল্টাপালি বিবৃতি দেন ড. রেজা কিবরিয়া এবং নুরুল হক নুর। সোমবার রাতে গণঅধিকার পরিষদের প্যাডে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. রেজা কিবরিয়া জানান, রবিবার তার সভাপতিত্বে জরুরি সভায় দলীয় শৃঙ্খলার স্বার্থে সদস্য সচিবের কাছে প্রবাসী অধিকার পরিষদের কমিটি পুনর্গঠন, সংগৃহীত অর্থের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক, ইসরায়েলের বিতর্কিত মোসাদ সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে গোপন বৈঠক, দলীয় নেতাদের নিয়ে অসত্য সংবাদ প্রচারের জন্য ভিপি নুরকে দায়ী করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। এতে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তিনি (রেজা) সভাস্থল ত্যাগ করেন।
রেজা কিবরিয়ার এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর নিজের ফেসবুক পেজে ভিপি নুর পাল্টা অভিযোগ তুলে বিবৃতি দেন। পাল্টা বিবৃতিতে তিনি লেখেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের রেজার অভিযোগ, রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় জনৈক মাসুদ সংস্থার সঙ্গে নুর বৈঠক করেছেন। আর্থিক বিষয়ে বা এনায়েত করিমের বিএনপিকে ভাঙা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আবদুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে নিতে চান রেজা কিবরিয়া। এজন্য সরকারবিরোধী অনুষ্ঠানের নামে ব্যাংকক, কাঠমান্ডুতে একাধিকবার বৈঠকে অংশ নিয়েছেন এবং দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া এবং সর্বশেষ ইনসাফের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। রবিবারের বৈঠকে এসব বিষয়ের সদুত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করে রেজা কিবরিয়া বাসায় ঢুকেন আর ফেরেননি।
ভিপি নুর লিখেছেন, রেজা কিবরিয়া আহ্বায়ক হয়েও দলের মিটিং-মিছিল, কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না। টাকার লোভে তিনি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে বিএনপি ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুঃস্বপ্নে বিভোর।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়