যাত্রী কল্যাণ সমিতি : ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে নজীরবিহীন নিরাপত্তা

পরের সংবাদ

রেজা-নুরের দ্ব›েদ্ব ভেঙে গেল গণঅধিকার পরিষদ

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২৩ , ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া এবং সদস্য সচিব নুরুল হক নুর কয়েকদিন ধরেই একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছিলেন। দলীয় বৈঠকে একে অপরের বিরুদ্ধে আঙ্গুলও তুলছেন প্রকাশ্যে। শীর্ষ এ দুই নেতার দ্ব›েদ্ব অবশেষে ভেঙে গেল গণঅধিকার পরিষদ। এর আগে রেজা কিবরিয়া ও নুর একে অপরকে সরকারি এজেন্ট বলে আখ্যা দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার রাতে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দল থেকে রেজা কিবরিয়াকে সরিয়ে দেয়া হয়। তার পরিবর্তে গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়েছে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে। বিষয়টি নিশ্চিত করে যুগ্ম আহ্বায়ক ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, সোমবার দলের জরুরি সভায় রেজা কিবরিয়ার পরিবর্তে রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়েছে। রেজা কিবরিয়ার বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে সদস্য সচিব হিসেবে নুরুল হক নুরই থাকছেন।
সূত্র জানায়, খুব শিগগিরই দলের কাউন্সিলের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে। সেখানে নেতাকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেবেন কে দলে থাকবেন, কে থাকবেন না। তবে কাউন্সিলের আগেই গতকাল রাতে রেজা কিবরিয়াকে সরিয়ে দেয়ার ঘোষণা আসে।
সূত্রের দাবি, গত রবিবার (১৮ জুন) রাতে গুলশানে রেজা কিবরিয়ার বাসায় গণঅধিকার পরিষদের বৈঠক হয়। সেখানে রেজা কিবরিয়া কেন ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের ইনসাফ কায়েম কমিটির অনুষ্ঠানে গিয়েছেন তা জানতে চান নুর। রেজা কিবরিয়া উল্টো নুরুল হকের কাছে জানতে চান, গণঅধিকার পরিষদের নামে প্রবাস থেকে আসা টাকার হিসাব কোথায়? কেন তিনি ইসরায়েলি মেন্দি এন সাফাদি ও তার ‘বাংলাদেশি বন্ধু’ শিপন কুমার বসুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন? এসব প্রসঙ্গ নিয়ে বৈঠকের পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আবারো গণঅধিকার পরিষদের মিটিং ডাকা হয়। তবে ওই বৈঠকে রেজা কিবরিয়া থাকবেন না বলে জানান।
জানতে চাইলে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, নুর ষড়যন্ত্র করে আমাকে দল থেকে বের করেছে। অনেক দিন ধরেই সে ঝামেলা করে আসছিল। তবে সেটা ইনসাফ কায়েমে যাওয়া নিয়ে নয়; নুরের টাকার লেনদেন নিয়ে দলের নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন। এটা এড়াতে তিনি ইনসাফে আমার যাওয়া নিয়ে হইচই করেছেন। নুরের বিরুদ্ধে দুই-তিনটা ইস্যু আছে, যেটা দলের নেতাকর্মীরা পছন্দ করেননি।
তিনি বলেন, এক হচ্ছে বিদেশ থেকে যে টাকা-পয়সা আসে সেটার কোনো হিসাব দিতে রাজি নন নুর। এখানে অনেক টাকা আসে। প্রবাসীদের কমিটিতে নিজেকে তিনি প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছেন। সেখানে দলের আর কাউকে রাখেননি। প্রবাসীদের পুরো টাকা তিনি নিজেই রাখেন। দ্বিতীয় হচ্ছে, মেন্দি এন সাফাদি ও শিপন বসুর (যারা হিন্দু সমাজের নতুন রাষ্ট্র করতে চায় উত্তরবঙ্গে) সঙ্গে নুরের যোগাযোগটা কেন? সেটা কি আমাদের কোনো রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নাকি তারা টাকা দিয়েছেন। তাকে টাকা দেয়ার বিষয়টা নিয়ে দলের অনেকেরই সন্দেহ ও অসন্তোষ আছে।
রেজা কিবরিয়ার অভিযোগ, দুবাইয়ে মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে মিটিং করতে নুর ট্যাক্সি দিয়ে যাননি। তাকে আমাদের লোক (দুবাইয়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা) গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেছেন। তারাই আমাদের কনফার্ম করেছেন যে, এ রকম মিটিং হয়েছে এবং মিটিং শেষে তিনি (নুর) একটা কালো ব্যাগ নিয়ে ফিরেছেন। তবে কালো ব্যাগে কী ছিল সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমাদের প্রশ্ন হলো, তুমি ইসরায়েলিদের সঙ্গে মিটিং করছে, এটার কারণ কী? কারণটা আমাদের বলো। তবে তিনি তা বলতে রাজি নন।
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, আমার কথা খুব পরিষ্কার, সরকারবিরোধী মিটিংয়ে আমি যাব। সরকারের বিরুদ্ধে যে দলই মিটিং করুক, তারা যদি দাওয়াত দেয় তাহলে আমি যাব। কোনো অসুবিধা নেই। আমি তো সরকারের পক্ষে কোনো কথা বলিনি। আমি সরকারের পক্ষে মিটিং করেছি- এ দাবি তো হাস্যকর। নুর বলছেন, আমি সরকারের এজেন্টদের পক্ষে কাজ করছি। আমার সন্দেহ- তিনি সরকারি দলের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে দলে একটা ভাঙন তৈরি করার জন্য কাজ করছেন। তিনি সরকারি এজেন্ট হতে পারেন! যদিও আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। তবে একদিন প্রমাণ পাব, যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। তখন আমি সব খবর পেয়ে যাব। মানুষের সামনে তা তুলে ধরতে পারব। আমার সন্দেহ সরকারি স্বার্থ রক্ষার জন্যই দলে একটা ভাঙন তৈরি করছেন নুর।
অন্যদিকে নুরের অভিযোগ- আমরা শুনেছি রেজা সাহেব তাদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন। যে কারণে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। তাকে মাসে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়। তিনি যেখানে দলের কোনো অনুষ্ঠানে আসেন না, সেখানে ইনসাফ কমিটির অনুষ্ঠানে কীভাবে যান?
গতকাল সোমবার রাতে নিজের ফেসবুকে ‘রেজা কিবরিয়ার অসত্য বক্তব্য ও মিথ্যাচার নিয়ে আমার বক্তব্য নি¤œরূপ’ শীর্ষক স্ট্যাটাসে নুর বলেন, নিজের অপকর্ম ঢাকতে আমাকে নিয়ে রেজা কিবরিয়ার অসত্য বক্তব্য ও মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ। রেজা কিবরিয়া কতটুকু অযোগ্য সেটা তার কাজকর্মে ইতোমধ্যে আপনারা পর্যবেক্ষণ করেছেন। গণঅধিকার পরিষদের মতো একটা সম্ভাবনাময় দলের আহ্বায়ক হয়েও তিনি ঐভাবে দলের মিটিং-মিছিল, কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন না।
রবিবার তাদের দলের বৈঠক ছিল উল্লেখ করে নুর বলেন, বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় জনৈক মাসুদ করিম/এনায়েত করিমের বিএনপি ভাঙা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কথিত সরকার বিরোধী প্রোগ্রামের নামে রেজা কিবরিয়ার ব্যাংকক, কাঠমুন্ডুতে একাধিকবার মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। এরপর দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং সর্বশেষ ইনসাফের প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন তিনি। গতকাল রেজা কিবরিয়ার বাসায় জরুরি মিটিংয়ে এসব বিষয়ে জবাবদিহিতা চাইলে তিনি সদুত্তর না দিয়ে নেতাদের প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে বাসার ছাদের মিটিং স্থান ত্যাগ করে বাসায় ঢুকে যান। এরপর আর মিটিংয়ে আসেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়