যাত্রী কল্যাণ সমিতি : ২৭ জুন সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবি

আগের সংবাদ

রাজশাহীতে নজীরবিহীন নিরাপত্তা

পরের সংবাদ

নেশন্স লিগে সেরার মুকুট স্পেনের : ম্যাচসেরা রদ্রি, সর্বোচ্চ গোলদাতা মিট্রোভিচ ও হলান্ড

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : উয়েফা নেশন্স লিগের ফাইনালে গতকাল মুখোমুখি হয় ক্রোয়েশিয়া এবং ফ্রান্স। দুই শক্তিশালী দলের লড়াইয়ে ম্যাচের নির্ধারিত এবং অতিরিক্ত সময় শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়। এতে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। পুরো ম্যাচের নাটকীয়তাকে হার মানায় স্পেন-ক্রোয়েশিয়ার টাইব্রেকারের উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত ৫-৪ গোলের ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে ২০১২ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের পর প্রথম কোনো শিরোপা ঘরে তোলে স্প্যানিশরা। তাছাড়া ২০২১ সালে ফ্রান্সের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ, ইউরো এবং নেশন্স লিগ শিরোপা জয়ের রেকর্ডবুকে নাম লেখালো স্পেন। ম্যাচসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে সম্প্রতি ট্রেবল জয় করা রদ্রি।
ম্যাচের শুরু থেকেই গতকাল মাঠে আধিপত্য বিস্তার করে স্পেন। বল দখলে এগিয়ে থাকা দলের হয়ে প্রথম আক্রমণটি করেন গাভি। তবে তার আক্রমণ থেকে কোনো ফলাফল আসেনি বরং উল্টো তারা ক্রোয়েশিয়ার প্রতিআক্রমণের শিকার হয়। আন্দ্রেজ ক্রামারিচের দিকে লম্বা পাস দিয়ে বল পাঠান জোসিপ জুরানোভিচ। ক্রামারিচ বল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে স্প্যানিশ গোলরক্ষক সাইমনকে একা পেয়ে যান। তিনি শট নেয়ার পর অমারিক লাপোর্তে ব্লক করে নিজেদের জাল রক্ষা করেন। স্পেন ও ক্রোয়েশিয়ার আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে খেলা জমে উঠলেও প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়।
বিরতির পর খেলা মাঠে গড়ানোর পরও দেখা যায় দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। একাধিক আক্রমণ করলেও স্পেনের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা ম্যাচের ৮০ মিনিট পর্যন্ত নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কোনো শটই নিতে পারেননি। এর আগে ম্যাচের ৬৬ মিনিটে আলভারো মোরাতার পরিবর্তে জোসেলু ও ইয়েরেমি পিনোর পরিবর্তে এ সময় মাঠে নামেন আনসু ফাতি। ৯০ মিনিটে বার্সেলোনার তরুণ ফরোয়ার্ড ফাতি গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে লাইনের উপর থেকে তা ক্লিয়ার করেন অভিজ্ঞ ইভান পেরিসিচ। নির্ধারিত সময়ে কোনো গোল না হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ডিবক্সের ভিতর বোর্না সোসাকে রুখতে গিয়ে নাচোর বিপক্ষে পেনাল্টির আবেদন করে সফল হয়নি ক্রোয়েশিয়া। স্প্যানিশ বদলি খেলোয়াড় ডানি ওলমোর শট বারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
পেনাল্টি শুট আউটে প্রথম দুটি করে শটে নিজেদের লক্ষ্য পূরণে সমর্থ হয়েছিলেন দুই দলের খেলোয়াড়রাই। এরপর মায়ারের শট রুখে দেন সাইমন। অমারিক লাপোর্তের সামনে সুযোগ ছিল স্পেনকে জয় উপহার দেয়ার। কিন্তু তার শটটি বারে লাগে। অ্যাথলেটিকো বিলবাও গোলরক্ষক সিমন এরপর ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে পেটকোভিচের শট রুখে দেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কারভাহাল স্পেনকে বহুল প্রতিক্ষিত শিরোপা উপহার দেন।
২০১৮ বিশ্বকাপে রানার্স আপ ও ২০২২ সালে তৃতীয় স্থান পাওয়া জøাটকো ডালিচের ক্রোয়েশিয়াকে আরো একবার শিরোপা ছাড়াই ঘরে ফিরতে হয়েছে। এ পর্যন্ত কখনোই দলটি বড় কোন আসরে শিরোপা জয়ের স্বাদ পায়নি। নেশন্স লিগের শিরোপা জিততে পারলে ক্রোয়েট অধিনায়ক লুকা মদ্রিচের দুর্দান্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অন্তত একটি সফলতা যোগ হতো। গতকাল রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা ক্যারিয়ারের ১৬৬তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। নেশন্স লিগ শিরোপা হাতছাড়া করার পর মদ্রিচ তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।
আরেকদিকে ইউরো ২০২৩ এর বাছাইপর্বে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পরাজিত হওেয়ার পর স্প্যানিশ কোচ লুইস ডি লা ফুয়েন্তে কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন। নেশন্স লিগের শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে অনেকটাই স্বস্তিতে ফিরতে পেরেছেন এই কোচ। তাছাড়া ২০২১ সালে নেশন্স লিগের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে হারার হতাশাও কাটিয়ে উঠতে পেরেছে স্প্যানিশরা।
শিরোপা জয় করে রিয়াল মাদ্রিদের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের জন্য এটা শিরোপা জয়ের দারুণ একটি সুযোগ ছিল। কাতার বিশ্বকাপে আমরা আগেভাগেই বিদায় নিয়েছিলাম। আজ নিজেদের প্রমাণে কোনো ছাড় দেইনি। পেনাল্টি নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। গত কিছুদিন আমরা এটা নিয়েই কাজ করেছি। আমি জানতাম পেনাল্টি শুট আউটে ঠিক কোন কাজটি আমাদের করতে হবে। সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে।’
ম্যাচসেরা রদ্রি বলেন, ‘আমরা সত্যিই দারুণ খুশি। এটা একটি কঠিন ম্যাচ ছিল। সবকিছুই কেমন যেন কঠিন হয়ে উঠেছিল। এই প্রজন্মের কাছে যেমন প্রত্যাশার চাপ আছে, তেমনি দলের প্রতি তাদের প্রতিশ্রæতিও অনেক। আমরা মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিলাম। এখনো অনেক জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন আছে। কিন্তু শিরোপা জয়ের আনন্দই আলাদা, আমরা এখন এই জয় উদযাপন করব।’
হতাশাজনক ম্যাচ শেষে ডালিচ অবশ্য ইতিবাচক মন্তব্যই করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একের পর এক পদক জয় করছি, যা অসাধারণ। ইতোমধ্যেই তিনটি পদক পাওয়া হয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয় আমাদের মধ্যে এখনো অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় একদিন আমরা সফল হব।’
নেশন্স লিগের ফাইনাল উপভোগ করতে গতকাল প্রায় ২৫ হাজার ক্রোয়েট সমর্থক রটারডামে এসেছিল এবং স্টেডিয়ামের বেশির ভাগ আসনই ছিল তাদের দখলে। দর্শকদের প্রত্যাশার বিষয়ে ডালিচ আগেই সতর্ক করেছিলেন। প্রিয় তারকা মদ্রিচকে নিয়ে দর্শকদের মধ্যে উচ্ছ¡াস একটু বেশিই ছিল। এই টুর্নামেন্টের পর মদ্রিচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার সমর্থকরা আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাকে আরো কিছুদিন দেখতে চায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়