শাহজালালে ১২ কোটি টাকার কোকেনসহ ভারতীয় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

খুলনায় খালেকের হ্যাটট্রিক, বরিশালে খোকন : খুলনায় শান্তিপূর্ণ ভোট, উপস্থিতি কম > তালুকদার আবদুল খালেক ১,৫৪,৮২৫ ভোট, আবদুল আউয়াল ৬০,০৫৪ ভোট

পরের সংবাদ

সংসদে অর্থমন্ত্রী : ব্যক্তি পর্যায়ে করদাতার সংখ্যা ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩৬

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে করদাতার সংখ্যা ৮৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩৬ জন। গতকাল রবিবার ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জাতীয় সংসদকে এ তথ্য জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে -১ ) জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে নতুন করদাতা শনাক্তকরণ, ২) এক পাতার রিটার্ন দাখিল পদ্ধতি সহজ করা, ৩) স্পট এসেসমেন্ট, ৪) অনলাইন ই-রিটার্ন দাখিল, ৫) আয়কর জমা দেয়া সহজ করা, যেমন-অনলাইনে আয়কর দেবার জন্য এ চালান, রকেট নগদ, বিকাশ এবং সোনালি ব্যাংক ই-পেমেন্ট এর মাধ্যমে আয়কর পরিশোধ ব্যবস্থা চালু, ৬) করদাতাদের সম্মাননা দেয়া, যেমন সিটি করপোরেশন ও জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ও দীর্ঘ সময়ব্যাপী কর পরিশোধকারী করদাতাকে জাতীয়ভাবে সম্মাননা দেয়া হচ্ছে, ৭) নভেম্বর মাসে করতথ্য সেবা মাস চালু করা, ৮) বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে এবং ৯) করতথ্য সেবাদান কেন্দ্রের মাধমে করদাতাদের রিটার্ন পূরণসহ সামগ্রিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ফলে উত্তরোত্তর ব্যক্তি পর্যায়ে করদাতারা কর দিতে আগ্রহী হচ্ছে এবং করদাতার সংখ্যাও বাড়ছে।
মোরশেদ আলমের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর বন্ডের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের বিপরীতে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার সঙ্গে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ৩৬৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
তিনি জানান, বিদেশে অর্থপাচার ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বর্তমানে দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ কার্যকর রয়েছে যা প্রয়োজনের নিরিখে ২০১৫ সালে আংশিক সংশোধন করা হয়। ২০১৫ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ফিন্যানসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশের সিআইডি বিভাগ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে অর্থপাচার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থপাচার সংশ্লিষ্ট

মানি লন্ডারিং মামলাগুলোর ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনস্থ দপ্তর অনুসন্ধানক্রমে মামলা ও তদন্ত পরিচালনা করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মানিলন্ডারিং আইন অর্থপাচার প্রতিরোধে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এবং এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সংসদকে জানান, ২০০৭ সালে যেখানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে ২০২০ সালের জুনে রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে হয় ৩৫ হাজার ৩৮৮ দশমিক শূন্য ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
৯ ব্যাংকের গ্রাহকের সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফের প্রস্তাব : মসিউর রহমান রাঙ্গার এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, তফসিলি ব্যাংকের মূলঋণ (আসল) মওকুফ করার কোনো সুযোগ নেই। তফসিলভুক্ত রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৬টি ব্যাংক (অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড, বেসিক ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসি) এবং ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) রয়েছে। এ ৯টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ২০২২ সালে ৪ হাজার ৬২১ জন গ্রাহকের অনুকূলে ৮ হাজার ৪০৪ কোটি ৫২ লাখ টাকার সুদ মওকুফ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এবং ২০২২ সালে ওই ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৬২০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার সুদ মওকুফ কার্যকর করেছে।

জনগণের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ২৭৬৫ মার্কিন ডলার
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ২৭৬৫ মার্কিন ডলার যা ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ছিল ৬৮৬ মার্কিন ডলার। সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে মাথাপিছু আয় বাড়ানো।
আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, মাথাপিছু আয় বাড়ানোর জন্য সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে ও বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সরকার প্রতিবছরই বাজেটের আকার বাড়িয়ে আসছে এবং আর্থ-সামাজিকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে যা প্রকারান্তরে জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়াচ্ছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সরকারের বাজেটের আকার ছিল ৬৪ হাজার কোটি টাকা যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় বারো গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকায়।
তিনি জানান, মাথাপিছু আয় বাড়ানোর জন্য শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের কল্যাণে আইনি কাঠামো যোগোপযোগী করা ও কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থের ওপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, মাথাপিছু আয় বাড়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো উচ্চতর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে সরকার বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে ক্রমপুঞ্জিভূত মূলধন বাড়ানোর বিভিন্ন পরিকল্পনা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছে এবং আরো নতুন নতুন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা দলিলে সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতসমূহকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে, ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো খাতসমূহ যেমন বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, যোগাযোগ, বন্দর উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইসিটি খাতে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিগত ১৪ বছরে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সরকারের নেয়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বড় আকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১০ গুন বেড়ে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ, উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতের সমন্বয় করে সবার জন্য পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লান নেয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, ২০৩০ সাল নাগাদ রপ্তানি আয় বাড়িয়ে ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা, আইসিটির খাতে ১ লাখ বেকারের কর্মসংস্থা সৃষ্টির জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি করার জন্য বেজা (ইঊতঅ) কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া দেশে হাইটেক পার্ক তৈরি করে ২০২৫ সালের মধ্যে ৬০ হাজার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ১ লাখ তরুন -তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার টার্গেট রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়