শাহজালালে ১২ কোটি টাকার কোকেনসহ ভারতীয় গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

খুলনায় খালেকের হ্যাটট্রিক, বরিশালে খোকন : খুলনায় শান্তিপূর্ণ ভোট, উপস্থিতি কম > তালুকদার আবদুল খালেক ১,৫৪,৮২৫ ভোট, আবদুল আউয়াল ৬০,০৫৪ ভোট

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে পাহাড়কাটা বন্ধে বিশেষ এনফোর্সমেন্ট টিম গঠনের দাবি

প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়কাটা বন্ধে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে সম্মিলিত কমিটি গঠন, বিশেষ এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন, হটলাইন প্রতিষ্ঠা, সিডিএ কর্তৃক পাহাড়ি এলাকায় অনুমোদন না দেয়া, পাহাড়ি এলাকায় কোনো ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পরিবেশকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। গতকাল রবিবার সকালে নগরের পর্যটন মোটেল সৈকতের সাঙ্গু হলে আয়োজিত চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়কাটা রোধে মতবিনিময় সভায় এসব দাবি জানানো হয়।
সভায় সূচনা বক্তব্য ও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় তিনি বলেন, হাইকোর্ট এবং সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি হওয়া আদেশ উপেক্ষা করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়িতে পাহাড় কাটা হয়েছে। পাহাড় কেটে কীভাবে জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে? ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামে ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার পাহাড় ছিল। ২০০৮ সালে তা কমে ১৪ দশমিক দুই বর্গকিলোমিটারে নেমে আসে। তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে সরকারি আদেশ ছিল- চট্টগ্রামের কোথাও কোনো পাহাড় কাটা যাবে না। ২০০৭ সালে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল- ‘জাতীয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা যাবে না’। উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ১৯ মার্চ আদেশ জারি করেছিলেন- ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটিতে কোনো পাহাড় কাটা যাবে না।’ সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি করা আদেশ এবং উচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করেই এই অঞ্চলে পাহাড় কাটা হয়েছে।
সভার প্রধান অতিথি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম বলেন, বাস্তবে পাহাড় নিয়ে স্বাধীনতাপরবর্তীতে কোনো জরিপ হয়নি। চট্টগ্রামে বালির পাহাড়। একটু গর্ত করে দিলেই সেটা ধসে পড়ে। পাহাড় প্রকৃতির সৃষ্টি, পাহাড় গড়া যায় না। পাহাড়কে হত্যা করছে দখলকারীরা। ৫০ হাজার, এক লাখ টাকা জরিমানা তাদের জন্য কিছুই নয়। মামলায় এমন হতে হবে- পাহাড়খেকোদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখতে হবে। অনেক সময় ভুয়া দলিল করে সিডিএ থেকে প্ল্যান নেয়া হচ্ছে। সরজমিন তদন্ত করে সিডিএর প্ল্যান দিতে হবে। পাহাড় রক্ষায় চসিক দায়িত্ব নেবে, তবে চসিকের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা ভাবতে হবে। মেয়র হিসেবে ওয়াদা দিতে পারি সব সংস্থাকে একত্রিত করে একসঙ্গে সোচ্চার করতে কাজ করবে চসিক।
তিনি বলেন, ব্যক্তির উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি। আজ থেকে আর একটি পাহাড়ও কাটতে দেয়া যাবে না। যারাই পাহাড় কাটবে সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় একটি হটলাইন প্রতিষ্ঠা ও এর জন্য আলাদা এনফোর্সমেন্ট টিম থাকার দাবিটি যৌক্তিক। ৯৯৯ এর মতো পরিবেশ সুরক্ষায় যেন সবাই সঙ্গে সঙ্গে তথ্য দিয়ে ফল পায় সেটা আমাদের করতে হবে। দ্রুততার সঙ্গেই আমরা চট্টগ্রামে একটি কমিটি করব, যাতে আর একটিও পাহাড়ে কোপ না পড়ে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম নগরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, আমরা গত কয়েক বছরে মোট ৮৫টি মামলা করেছি। এর মধ্যে শুধু ২০২২ সালে এই মামলার সংখ্যা ২২টি। আমরা যে আইনের ভেতরে আছি তার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু চসিক, সিডিএ এবং জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা সফল হচ্ছি না। সিডিএ যদি নকশা অনুমোদন না দেয় তাহলে আমরা বাধাগ্রস্ত হব না। সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-

সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, চট্টগ্রামে আমরা ড্যাবকে ব্যবহার করে পাহাড়কাটা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমার সময় আমি পাহাড়ি এলাকায় কোনো প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেব। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে আমরা পাহাড় রক্ষা করতে পারব।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার খান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কাট্টলী সার্কেলের এসি (ল্যান্ড) ওমর ফারুক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভায় বক্তারা পাহাড় হত্যাকারী অবহিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, পাহাড় সুরক্ষায় বনায়নসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেন। এছাড়া নগরের সব ওয়ার্ডে পাহাড় নিধন করে চসিকের যত প্রকল্প আছে তা স্থগিত ও বাতিলের দাবি জানান।
মতবিনিময় সভায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পাহাড়কাটা রোধে ২০০৭ সালের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন, পাহাড়গুলোর বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করে একটি জরিপ পরিচালনা, পাহাড়কাটা রোধে একটি হটলাইন চালু করা, আর কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে পাহাড় না কাটা, পাহাড় কেটে বাড়ি বা স্থাপনার কোনো পরিকল্পনায় সিডিএ অনুমোদন দেবে না মর্মে পত্রিকায় নোটিস করা, আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণ অনতিবিলম্বে বন্ধ করা, পাহাড়কাটা রোধে ও পাহাড়ের সুরক্ষায় সমন্বয় সেল বা আলাদা এনফোর্সমেন্ট টিম গঠন। এছাড়া পাহাড় রয়েছে এমন সব ওয়ার্ডে জনগণকে সচেতন ও সংগঠিত করা এবং পাহাড়, খাল, ছড়া রয়েছে এসব জায়গায় বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা বন্ধ করা। চট্টগ্রামের পরিবেশবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও রেলওয়ে, জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়