পেঁয়াজ-সবজির দামে স্বস্তি, মাছ চড়া

আগের সংবাদ

ভোটের জন্য প্রস্তুত খুলনা কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে

পরের সংবাদ

সৌরবিদ্যুৎ হতে পারে বিকল্প

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে দেশে সব থেকে বড় আলোচনার বিষয় ‘লোডশেডিং’। একদিকে তীব্র তাপদাহ অন্যদিকে লোডশেডিং ভোগান্তির শেষ রূপকে উপস্থাপন করে। এ বছর তাপমাত্রা পূর্বের চেয়ে বেশি ভয়াবহ। অসহনীয় তাপ মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। তার চেয়ে বড় কথা পূর্বে গরম থাকলেও কৃত্রিম বাতাস মানুষকে কিছুটা স্বস্তি প্রদান করেছে। যন্ত্র থেকে উৎপন্ন কৃত্রিম বাতাসের প্রধান উপকরণ ইলেকট্রিসিটি। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। দেশে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ফ্যান, এসি ব্যবহারে মানুষ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু ফ্যান, এসিই নয়- রাতের অন্ধকার রোধে ইলেকট্রিক বাতি জ¦ালাতেও ব্যর্থ, যা তাদের প্রতিনিয়ত অতিষ্ঠ করে তুলছে। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হতে পারে সৌরবিদ্যুৎ।
ভূমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম বৃক্ষ নিধন। পৃথিবীজুড়েই চলছে বৃক্ষ নিধনের মহাযজ্ঞ। মানুষ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বনজঙ্গল উজাড় করে ফেলছে। যেখানে একটি দেশের আয়তনের ন্যূনতম ২৫ শতাংশ বন থাকা জরুরি, সেখানে অধিকাংশ দেশেই বনভূমি রয়েছে ২০ শতাংশের নিচে। স্টেট অব গেøাবাল ফরেস্টের (২০১৮) তথ্যমতে, বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের সাড়ে ১৩ শতাংশ বনভূমি। অপরদিকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দাবি, দেশের মোট আয়তনের ১৭ শতাংশ বনভূমি। প্রকৃত পরিমাণ যাই হোক না কেন, মানদণ্ডের অনেক নিচে রয়েছে আমাদের বনভূমির আয়তন। পরবর্তী ৫ বছরে যে এই সংখ্যাটি আরও কমেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এ কারণেই প্রকৃতি তার ভয়াবহ রূপ উপস্থাপন করছে। যেখানে বাংলাদেশকে বলা হয় ষড়ঋতুর দেশ। সেখানে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত ছাড়া অন্যগুলোর দেখা মেলা ভার। বেশ কয়েক বছর ধরে গরম বেড়েই চলেছে। এ বছর মানুষ রেকর্ড পরিমাণ গরমের সাক্ষী হয়েছে। শুধু গাছপালা নিধনই নয়, অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনও তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। কার্বন-ডাই-অক্সাইড ওজোন স্তরে প্রভাব ফেলে, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে দেশে তীব্র তাপদাহের সৃষ্টি হয়েছে আর তার সঙ্গে একাত্ম হয়েছে লোডশেডিং। যার অন্যতম কারণ বিদ্যুৎ সংকট। দেশের অন্যতম প্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ‘পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র’, যা চাহিদার একটি বড় অংশের জোগান দিয়ে থাকে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে প্রধান জ¦ালানি ‘কয়লা’ আসা বন্ধ হওয়ায় সাময়িকভাবে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে জাতীয় গ্রিডে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এই ঘাটতির জন্যই অতি গরমেও বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে দেশের জনগণ চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। এ সংকট কবে নিরসন হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তাই ওই সংকট মোকাবিলায় আমাদের বিকল্প পথ বেছে নিতে হবে।
জলজ অথবা তাপবিদ্যুতের অন্যতম বিকল্প হতে পারে সৌরবিদ্যুৎ। সৌরবিদ্যুৎ মূলত উৎপন্ন হয় সূর্যের আলো থেকে। সূর্যের আলো পৃথিবীর সব প্রাণশক্তির একমাত্র উৎস। সূর্য পৃৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬ হাজার ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ৩ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের এই তাপকে সোলার প্যানেল প্লেটগুলো বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে, যা দিয়ে ফ্যান, লাইট, টিভিসহ অন্যান্য ইলেকট্র্রনিকস যন্ত্র চালানো সম্ভব। এছাড়া সৌরবিদ্যুতের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, এটি ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ফ্রিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম এবং এর উৎপাদিত বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে রাখা যায়, যা পরে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া এটি পরিবেশবান্ধব। যেহেতু সূর্য নবায়নযোগ্য শক্তি, এর কোনো ক্ষয় নেই, তাই সৌরবিদ্যুতের প্রধান উপকরণ নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ও নিজেদের স্বার্থে আমরা খুব কম খরচেই বাসায় সোলার প্যানেল লাগিয়ে লোডশেডিং মোকাবিলা করতে পারি। শুধু তাই নয়, আগামী কয়েক বছর বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে পারি। ফলে আমাদের আর বিদ্যুৎ সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না এবং বাইরে থেকে কয়লা আমদানি করতে হবে না, যা ডলারের বহির্গমন কমিয়ে দেবে। তাই আসুন ঘরে ঘরে সোলার প্যানেল লাগিয়ে বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়ি।

হুমায়ুন কবীর রুস্তম : মিরপুর, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়