পেঁয়াজ-সবজির দামে স্বস্তি, মাছ চড়া

আগের সংবাদ

ভোটের জন্য প্রস্তুত খুলনা কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে

পরের সংবাদ

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা নিয়ে মোংলায় চীনের জাহাজ

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২৩ , ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

আব্দুল বাকী তালুকদার, বাগেরহাট থেকে : রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরে ভিড়েছে চীনের পতাকাবাহী এমভি জে হ্যায় জাহাজ। ইন্দোনেশিয়া থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি গতকাল শনিবার ভোর ৫টায় বন্দরের হাড়বাড়ীয়া-১১ নম্বর বয়ায় ভিড়েছে।
বর্তমানে প্রতিদিন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে প্রায় ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এতে প্রতিদিন জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টন। উৎপাদিত বিদ্যুৎ চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে উৎপাদন আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডিজিএম মো. আনোয়ারুল আজিম।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে জাহাজটি বন্দরের ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় পৌঁছায়।
গতকাল সকাল থেকেই জাহাজ থেকে কয়লা খালাস ও পরিবহনের কাজ শুরু হয়েছে। খালাস করা কয়লা লাইটারেজে (নৌযান-কার্গো/কোস্টার) করে নেয়া হয় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিজস্ব জেটিতে। তারপর তা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে কেন্দ্রটির সেডে/গোডাউনে।
বিদেশি জাহাজ এমভি জে হ্যায়ের স্থানীয় শিপিং এজেন্ট টগি শিপিং এন্ড লজিস্টিক লিমিটেড খুলনার সহকারী ব্যবস্থাপক খন্দকার রিয়াজুল হক জানান, আমদানি করা রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২৬ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে চীনের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জে হ্যায় গত ২১ মে মোংলা বন্দরের উদ্দেশে ইন্দোনেশিয়া থেকে ছেড়ে আসে। ইন্দোনেশিয়া থেকে ছেড়ে আসার ১৯ দিনের মাথায় জাহাজটি গত শুক্রবার রাতে মোংলা বন্দরের ফেয়ারওয়ে বয়ায় এসে পৌঁছায়। এরপর সেখান থেকে জাহাজটি গতকাল ভোর ৫টার দিকে বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়ীয়ার-১১ নম্বর অ্যাংকোরেজে ভিড়েছে। জাহাজটি ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে কয়লা খালাস ও পরিবহনের কাজ।
তিনি জানান, খালাস করা কয়লা পরিবহন (লাইটারেজ/নৌযান) করে নেয়া হচ্ছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে। জেটির নিজস্ব গ্রাস্পের (কামড়ীকল) মাধ্যমে পরিবহনের (নৌযান/লাইটারেজ থেকে) কয়লা উত্তোলন করে স্বয়ংক্রিয় বেল্টের মাধ্যমে তা মজুত/সংরক্ষণ করা হচ্ছে কেন্দ্রটির কয়লার সেডে/গোডাউনে।
রিয়াজুল হক জানান, গত ১৬ মে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি বসুন্ধরা ইমপ্রেসে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ও ২৯ মে এমভি বসুন্ধরা ম্যাজেস্টি জাহাজে ৩০ হাজার ৫শ মেট্রিক টন কয়লা এসেছিল মোংলা বন্দর হয়ে রামপাল তাপ

বিদ্যুৎকেন্দ্রে। রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডিজিএম মো. আনোয়ারুল আজিম বলেন, বর্তমানে কেন্দ্রটিতে ২০ হাজার টন কয়লা মজুত আছে। এতে চলতি মাস স্বাভাবিকভাবেই চলে যাবে। এর মধ্যে শনিবার মোংলা বন্দরে এমভি জে হ্যায় জাহাজে ২৬ হাজার ৬২০ টন কয়লা এসেছে। একই জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়েছে ১৭ হাজার ৩৮০ টন কয়লা, যা চট্টগ্রাম থেকে লাইটারেজে রামপালে আনা হচ্ছে।
আনোয়ারুল আরো বলেন, আগের এলসির কয়লা ধারাবাহিকভাবে আসতে থাকবে। এর মধ্যে নতুন করে এলসি খোলার প্রক্রিয়াও চলমান। এতে কয়লা সংকটের কোনো সমস্যা হবে না এ বিদ্যুৎকেন্দ্রেটিতে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এতে প্রতিদিন জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টন। উৎপাদিত বিদ্যুৎ চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে উৎপাদন আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে কয়লা সংকটের কারণে ৫ জুন পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৯ জুন বাঁশখালী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুঃসংবাদের মধ্যেই রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সুখবর নিয়েই গতকাল ভোরে মোংলা বন্দরে ভিড়েছে কয়লাবাহী জাহাজ এমভি জে হ্যায়। মূলত পটুয়াখালীর পায়রা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের মতো দুঃসংবাদের মধ্যেও আশার আলো দেখাচ্ছে দেশের বহুল আলোচিত কয়লাভিত্তিক এ তাপ বিদ্যুৎকন্দ্রটি।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাতীয় তাপ বিদ্যুৎ করপোরেশনের (এনটিপিসি) মধ্যে বাগেরহাটের রামপালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে সমঝোতা হয়। এর দুই বছর পর ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি এনটিপিসির সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। কয়লা সংকটে কয়েকবার কেন্দ্র বন্ধ হয়েছিল। প্রতিদিন কেন্দ্রটির একটি ইউনিট চালু রাখতে প্রয়োজন হয় পাঁচ হাজার টন কয়লা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়