পেঁয়াজ-সবজির দামে স্বস্তি, মাছ চড়া

আগের সংবাদ

ভোটের জন্য প্রস্তুত খুলনা কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে

পরের সংবাদ

প্রচারণায় জনভোগান্তির মধ্যেও ব্যতিক্রম তারা

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ, সিলেট অফিস : তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে সিলেটে চলছে জমজমাট নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা ছুটছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। নানা প্রতিশ্রæতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন তারা। এদিকে, সিসিক নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। নগরীর ৫৬টি কাউন্সিলর পদে মোট ৩৬০ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নেমেছেন। তবে জমজমাট নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টারের নেতিবাচক প্রভাব এবং অসহনীয় মাইকিং নিয়ে সমালোচনা চলছে নগরজুড়ে। সদলবলে প্রার্থীদের গণসংযোগে সড়ক আটকে গিয়ে জনভোগান্তির ঘটনাও ঘটছে। তবে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার নামে জনভোগান্তির মধ্যেও এবার কয়েকজন প্রার্থী ইতোমধ্যে ভোটারদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন।
সিসিক নির্বাচনে বর্তমানে যে প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হচ্ছে। কেবল কাগজের তৈরি পোস্টারও যদি ড্রেনে যায়, তাহলে জলাবদ্ধতা ব্যাপক আকার ধারণ করবে। পরিবেশবিদরা বলছেন, সিটি নির্বাচনে প্লাস্টিকে মোড়ানোর পোস্টারগুলো সরিয়ে নেয়া হলেও পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। কেন না, এগুলো পোড়ালে পরিবেশ দূষণ হবে। মাটিতে ফেললেও পরিবেশ দূষণ হবে। তাই পোস্টার ছাড়া নির্বাচনি প্রচারণা নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। এদিকে, নির্বাচনে দিনভর মাইক ব্যবহারের আইনি অনুমতি থাকলেও বাস্তবে যেভাবে লাউড স্পিকার ব্যবহার করা হয়, তাতে দুপুর ২টা থেকে ৮টার সময়সীমা কেউ মানে না। তাছাড়া একাধিক স্পিকার ব্যবহার করা হয় উচ্চমাত্রায়। ফলে ব্যাপক শব্দ দূষণের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে নির্বাচনি প্রচারের নামে মিছিল, মহড়া করেন অনেকে। যদিও এটা আইনত অবৈধ। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
প্রথমবারের মতো সাধারণ কাউন্সিলর পদে একজন নারী প্রার্থী হয়েছেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে, একজন পরিবেশকর্মী প্রার্থী হয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে, একজন সামাজিক ও সাংস্কৃতিককর্মী প্রার্থী হয়েছেন সংরক্ষিত ওয়ার্ডে। একজন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ও জাতীয় কোচ প্রার্থী হয়েছেন ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তাদের ব্যতিক্রমী প্রচারণা প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলের। প্রচারণা নামে কোনোভাবেই ভোটারদের বিরক্তির কারণ না হতে ভিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।
২০০২ সালে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর সাধারণ কাউন্সিলর পদে কখনোই নারী প্রার্থী ছিলেন না। এবারই প্রথম নগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে একজন নারী প্রার্থী হয়েছেন। এডভোকেট রোকসানা বেগম বিগত চারটি নির্বাচনে সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে অংশ নিয়ে তিনবার বিজয়ী হন। তবে এবার আর সংরক্ষিত আসনে নয়, সরাসরি

সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়ে নগরবাসীর নজর কেড়েছেন। ৯ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর রোকসানা বিএনপির অঙ্গসংগঠন মহানগর মহিলা দলের সভাপতির দায়িত্বে আছেন। এছাড়া তিনি সদ্য সাবেক মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কও ছিলেন। এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপি তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে।
রোকসানা বেগম বলেন, তিনবার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও সাধারণ আসনে নির্বাচিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মতো পর্যাপ্ত বরাদ্দ বা সুযোগ-সুবিধা থেকে তিনি বঞ্চিত ছিলেন। এ কারণে এলাকার উন্নয়নে প্রত্যাশা মতো কাজ করতে পারেননি। ফলে এবার সাধারণ আসনে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। বিজয়ী হলে এলাকাবাসীর সুচিন্তিত পরামর্শে এক আদর্শ ওয়ার্ড গড়ে তুলবেন।
সিলেট নগরীর পরিচিত মুখ, যেকোনো নাগরিক আন্দোলন সংগ্রামের উদ্যোক্তা, পরিবেশকর্মী, সুলেখক ও বক্তা আব্দুল করিম কিম প্রার্থী হয়েছেন নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম চৌধুরী কিমের প্রতীক রেডিও। তিনি বলেন, পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতিকর পলিথিন। এসব পলিথিন পচনশীল না হওয়ায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জলাবদ্ধতাও তৈরি করবে। চলমান এই বর্ষার সময় এসব পরিত্যক্ত পলিথিন জনগণের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই একজন পরিবেশকর্মী হিসেবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার আর্থিক ক্ষতি ও কষ্ট হলেও নির্বাচনী পোস্টার পলিথিনে মোড়াব না।
৫ নম্বর সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে (১৩, ১৪, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড) নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছেন এডভোকেট জয়শ্রী দাশ জয়া। নগরীর মিষ্টি মেয়ে ও মিষ্টিভাষী হিসেবে সিলেটের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে জনপ্রিয় তিনি। তার ভিন্নধর্মী প্রচারণা ও কথাবার্তায় মুগ্ধ মানুষজন। তার পক্ষে প্রতিদিনই তার সহপাঠী কলিগরা আনারস প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় নামেন। নগরবাসীকে মাইক ব্যবহার করে শব্দযন্ত্রণা দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে বিরক্ত করতে রাজী নন। তাই ভোটারদের বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে গল্পের ফাঁকে ভোট চাইছেন তিনি।
জয়া বলেন, নগরীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মহাজনপট্টি, কালীঘাট, লালদীঘি, কাজীরবাজার এ ওয়ার্ডে অবস্থিত। বর্ষাকাল ছাড়াও আকাশে মেঘ দেখলে এলাকার মানুষের বুক কেঁপে ওঠে। এই বুঝি জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। নদীতে পানি বাড়লে পানিবন্দি হয়ে পড়ে এই এলাকার মানুষ। নির্বাচিত হলে সব মৌলিক নাগরিক সেবা নিশ্চিত করবো।
নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডটি সিলেট সিটিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এই প্রথম। এ ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন দেশের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবে ক্রীড়ামোদী মানুষজনের কাছে সমাদৃত শিব্বির আহমদ। বর্তমানে তিনি জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের কোচ। নির্বাচনে তার প্রতীকও ব্যাডমিন্টন। দলবল নিয়ে নয়, তিনি সস্ত্রীক ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন।
তিনি বলেন, একজন নির্বাচিত জনপ্রংতিনিধিকে ভোটারের কাছে স্বচ্ছ থাকা প্রয়োজন। নির্বাচিত হলে আমি চেষ্টা করব সমাজের জন্য কিছু করে জনগণের ভালবাসা পেতে। আমি শ্রম, সাধনা, মানবিকতা, দেশপ্রেম আর ভালোবাসার জলে ভরা এক নদী হতে চাই। এলাকার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির আবর্জনাকে ভাসিয়ে এলাকাকে রাখতে চাই পরিচ্ছন্ন।
৭ জন মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে ৩৬০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচারণায় মাইকিং, গান আর গণসংযোগে ব্যস্ত সিলেট নগরীতে বেড়েই চলছে নির্বাচনী উত্তাপ। তবে এই ৪ জনের প্রচারণা নিরুত্তাপ হলেও নজর কড়েছে সবার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়