পেঁয়াজ-সবজির দামে স্বস্তি, মাছ চড়া

আগের সংবাদ

ভোটের জন্য প্রস্তুত খুলনা কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে

পরের সংবাদ

পুকুর ও জলাধার রক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ভূমি আগ্রাসনের কারণে ঢাকা ও এর আশপাশের অনেক পুকুর ও খাল বিলীন হয়ে গেছে। নগরজীবনে পুকুর-খাল থাকা খুবই জরুরি। এগুলো বর্ষা মৌসুমে এলাকার জলাবদ্ধতা থেকে নগরকে রক্ষা করে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দখলদারি ও আবাসন চাহিদার কারণে গত প্রায় ৪ দশকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ১ হাজার ৯০০ সরকারি-বেসরকারি পুকুর ও জলাধার। মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান মতে, ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুর ছিল ২ হাজার। বেসরকারি হিসাবমতে, এ পর্যন্ত তা এসে ঠেকেছে একশর নিচে। এভাবে পুকুর-খাল ভরাট হয়ে যাওয়া আশঙ্কাজনক। জলাধার রক্ষায় আইন থাকলেও সেগুলো না মানায় একের পর এক ভরাট হয়ে গড়ে উঠছে আবাসন। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ডিআইটি পুকুরটি ব্যক্তিমালিকানাধীন দাবি করে প্রায় ভরাট করে ফেলা হয়েছিল। চারপাশে ছোট ছোট মার্কেট ও গ্যারেজ গড়ে তোলা হয়। পুকুরটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে গত ৪ জুন মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষ থেকে রিট করা হয়। হাইকোর্ট পুকুরটি ভরাট-দখল এবং সেখানে স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের জন্য স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র গত ৭ জুন পুকুরটি দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেন। পুকুর রক্ষায় উচ্ছেদ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে। গত বৃহস্পতিবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে রাজউক। এর আগে পুকুর রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও পুকুর ভরাটকারী ব্যক্তিদের আইনি নোটিস পাঠায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। ডিআইটি পুকুর উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান শেষ হলেও অক্ষত থাকে স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয় ও একটি গার্মেন্টস। এতে হতাশ হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। রাজউক জানায়, কাউন্সিলর সম্মানিত মানুষ হওয়ায় এবং একটি দোতলা ভবনে ভারী যন্ত্রপাতি থাকায় তাদের ৭ দিন সময় দেয়া হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। আমরা আশা করি, পুকুরটি দখলমুক্ত করতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। কেবল ডিআইটি পুকুরই নয়, অন্যান্য পুকুর-খাল-নদীও দখলমুক্ত করতে হবে। নিজেদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই এসব জলাধার আমাদের রক্ষা করা দরকার। সরকার জলাধার রক্ষায় ২০০০ সালে আলাদা আইন করলেও এর তেমন সুফল নেই। আইন অনুযায়ী, কোনো অবস্থায় খাল, বিল, নদী-নালা, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণকালেও প্রাকৃতিক জলাশয়, জলাধার, খাল-নদী ইত্যাদির স্বাভাবিকতা নষ্ট করা যাবে না। কিন্তু জলাধার আইনের তোয়াক্কা না করেই জলাশয়গুলো দ্রুত দখল ও ভরাট করে স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। ঢাকার অনেক পুকুর ও খাল ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। পুকুরগুলো ভরাটের কারণে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। এমনিতেই ঢাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির সংকট চরমে, তার ওপর জলাধার ভরাট হতে থাকলে ভবিষ্যতে নগরবাসী ভয়াবহ সংকটে পড়বে। এছাড়া ঢাকার মতো জনবহুল শহরে অগ্নিকাণ্ড প্রায় ঘটছে। অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে পুকুর-খাল ও নদী রক্ষা করা খুবই জরুরি বলে মনে করি। জলাধার রক্ষা ও দূষণ রোধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়