পেঁয়াজ-সবজির দামে স্বস্তি, মাছ চড়া

আগের সংবাদ

ভোটের জন্য প্রস্তুত খুলনা কার ভাগ্যে ছিঁড়বে শিকে

পরের সংবাদ

ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কাই সত্যি হচ্ছে

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত কয়েক বছরের তথ্য ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এ বছর ডেঙ্গুর ব্যাপকতা বাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে। সেই শঙ্কা ও ইঙ্গিতই যেন ধীরে ধীরে সামনে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য বলছে, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ। এই সময়ের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি জুন মাসের ১০ দিনে রোগীর সংখ্যা হাজারের ঘর ছুঁয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৯ জন। এ নিয়ে মোট রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২১ জন। মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন আমরা ক্লিনিক্যালি তাদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করেছি। আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মৃতদের প্রায় প্রত্যেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিন্ড্রোমে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অন্য আরো কারণ থাকতে পারে যা জানার জন্য অটোপসি করা প্রয়োজন। কিন্তু তা পরিবার অনুমোদন দেবে না। আর এটা সাধারণ প্র্যাকটিসও নয়।
শনিবার রোগীর সংখ্যা এত বাড়ার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ার বেশিরভাগ হাসপাতাল ডেঙ্গুর রিপোর্ট দেয়নি। গতকাল শনিবারের রিপোর্টের সঙ্গে তা যোগ করা হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম জানান, এ বছরে ঢাকার বাইরে তেমন রোগী হাসপাতালে ভর্তি নেই। বেশিরভাগ রোগী রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সারাদেশে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও আমরা দেশের সব হাসপাতাল প্রস্তুত রেখেছি। এ বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সংশোধিত গাইডলাইন প্রত্যেক হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোর চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক, ওষুধসহ সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে।
পরীক্ষার বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, যারা আমদের কাছে আসছেন তাদের ডায়াগনোসিস কর হচ্ছে। যারা আসছেন না তাদের তো করা সম্ভব না। এ বিষয়ে আমরা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। গণমাধ্যমসহ সবাইকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। জ্বর হলে তারা যেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করান।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক বিভাগে ডেঙ্গু চিকিৎসায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মশা নিধন সব থেকে জরুরি। সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষায় গুরুত্ব দিতে সব হাসপাতালকে নির্দেশনা দেয়া আছে। গত বছরই পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। প্রত্যেক হাসপাতলে গাইডলাইন সরবরাহ করা হয়েছে। রোগীদের জন্য মশারি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু রোগীরা মশারির ভেতর থাকছেন না। চিকিৎসক এলে তারা মশারির ভেতর থাকছেন, বাকি সময়টা বাইরে থাকছেন। রোগীদের মশারির ভেতরে রাখার বিষয়ে পুলিশিং ব্যবস্থা আমাদের নেই। এ বিষয়ে রোগীদের সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হওয়ার পর রোগীদের জটিলতা বেশি দেখা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য ও ডেঙ্গুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রোগীদের তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোকে আগত রোগীদের মোবাইল ফোন নম্বর ও ঠিকানা সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু ব্রিফিংয়ের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন থেকে রাজধানীর ৫৩টি ডেডিকেটেড হাসপাতালের সঙ্গে আরো ৩২টি হাসপাতাল মিলিয়ে মোট ৮৫টি হাসপাতালের তথ্য তুলে ধরা হবে। আগামী মাস থেকেই তা করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৫৬ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ১৪৮ জন ঢাকার এবং ৮ জন ঢাকার বাইরের। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি হাসপাতালে ৪৭৩ জন আর অন্যান্য বিভাগে ৭৬ জন। শুক্রবার ১১ জন, বৃহস্পতিবার ১৩৪ জন, বুধবার ১৪৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানানো হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ২১ জন। মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের।
মাসভিত্তিক বিশ্লেষণ : জানুয়ারি মাসে রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৬৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। ফেব্রুয়ারি মাসে রোগী ১৬৬ জন, ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্চ মাসে রোগীর সংখ্যা ১১১। এপ্রিলে রোগী ১৪৩ জন, ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মে মাসে রোগী ১ হাজার ৩৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। চলতি জুন মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯৯৯, মৃতের সংখ্যা ৯।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়