তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো তিন ব্যাংকারের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

বিপাকে রোহিঙ্গারা, বিপাকে বাংলাদেশ : ভূ-রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে কমল খাদ্য সহায়তা > এক বেলা খাবারের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ কমে ৯ টাকা

পরের সংবাদ

ভোটের হাওয়া কোন দিকে? বরিশালে চার প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুলনা ও বরিশালে বাড়ছে ভোটের উত্তাপ। জমজমাট প্রচারণায় দুই সিটি করপোরেশন যেন উৎসবের নগরী। আজ শনিবার মধ্যরাতের পর শেষ হবে প্রচারযুদ্ধ। তারপরই ভোটের লড়াই। কে জিতবে, কে হারবে- তা আগাম বলা যাচ্ছে না। তবে সাধারণ ভোটাররা চায়ের টেবিলে মেলাচ্ছেন জয়-পরাজয়ের হিসাব। ভোটের হাওয়া কোনদিকে- বিশ্লেষকরা তুলে ধরছেন নানা যুক্তি। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে খুলনা ও বরিশাল থেকে আমাদের পৃথক দুটি প্রতিবেদন।

খোন্দকার কাওছার হোসেন ও এম কে রানা, বরিশাল থেকে : আর মাত্র একদিন পর বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন। শেষ মুহূর্তে এসে প্রচারণা জোরদার করেছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। আজ শনিবার রাত ১২টায় শেষ হয়ে যাবে প্রচারযজ্ঞ। সোমবার ভোটযুদ্ধ। এবারের ভোটের মাঠে নেই বিএনপি। এতে অবশ্য ভোটের লড়াই তেমন কমেনি। এমনটিই বলছেন স্থানীয় ভোটার, রাজনৈতিক দলের কর্মী, সমর্থক ও সুশীল সমাজসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, নির্বাচনটি হবে তুমুল প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ। কে হবেন নগরপিতা তা আগাম বলা একেবারেই অসম্ভব। এ বিষয়ে প্রত্যেকের কাছেই ভিন্ন হিসাব-নিকাশ ও যুক্তি রয়েছে। এ কারণে ভোটের ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলছেন অনেকেই। এই সিটিতে চার প্রধান প্রার্থীই লড়ছেন সমানতালে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীন

আওয়ামী লীগ এবার মনোনয়ন দিয়েছে দক্ষিণ বঙ্গের সিংহ পুরুষখ্যাত আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে। হাসানাতপুত্র বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ পুনরায় দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাকে না দিয়ে চাচাকে মনোনয়ন দেয়ায় পারিবারিক দ্বন্ধ তৈরি হয়েছে- যা নির্বাচনী মাঠে স্পষ্ট। ফলাফলেও এর প্রভাব পড়তে পারে। যুক্তি হিসেবে তারা সামনে আনছেন- খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র নির্বাচিত হলে মহানগরসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর একক আধিপত্য খর্ব হবে। এ কারণে তার নেতাকর্মীদের প্রচারণা বা গণসংযোগের মাঠে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। যারা সক্রিয় রয়েছেন তাদেরও গাছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। আবার কারো মতে, খোকন সেরনিয়াবাত হেরে গেলেও নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রমাণ করা সহজ হবে যে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়নি। অনদিকে খোকন সেরনিয়াতকে হারানোর অভিযোগে তিনি অভিযুক্তও হতে পারেন দলের কাছে। সেক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের পক্ষ থেকে পুরস্কার না তিরস্কার পাবেন- তা অনুমান করাও সহজ নয়। এ কারণে তিনি রয়েছেন উভয় সংকটে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য এডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেন, এখানে দলীয় কোনো কোন্দল নেই। দল ঐক্যবদ্ধভাবে যার যার অবস্থান থেকে প্রার্থীর জন্য কাজ করছে। পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। ভোটের দিন এবং এরপরও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে।
সরকারি দলের প্রার্থী হওয়ায় আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ এ নির্বাচনে মূল প্রার্থী। তার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী কে হবেন সেটা নিয়েই চলছে নানান বিশ্লেষণ। কারো মতে, ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা মার্কা) প্রার্থী মুফতি মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। কারো মতে, জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল মার্কা) প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। কারো মতে আবার, সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের পুত্র বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত কামরুল আহসান রুপন (ঘড়ি মার্কা)।
স্থানীয় সুশীল সমাজ, পেশাজীবী ও সাধারণ ভোটারদের মতে- দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরও বরিশাল নগরীতে আওয়ামী লীগের ভোট তেমন একটা বাড়েনি। তাদের মতে, এখানে মোট ভোটারের ৬০ ভাগ বিএনপির রিজার্ভ ভোট। বাকি ৪০ ভাগ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও অন্যান্য দলের। যেহেতু বিএনপি নির্বাচন বয়কট করেছে, তাদের কোনো দলীয় প্রার্থী নেই। সেক্ষেত্রে তাদের ভোটাররা কী করে এটা পর্যবেক্ষণের বিষয়। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এজন্য অপেক্ষা করতে হবে। আগাম আভাস দেয়া সম্ভব নয়।
কারো কারো মতে, দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও কামরুল আহসান রুপন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন। তার নিজের একটি কর্মী ও সমর্থক বাহিনী রয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হবে তার পিতার রেখে যাওয়া রিজার্ভ ভোট। এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে বিএনপির ভোটও। দলীয় কোনো প্রার্থী না থাকলেও রুপনের সঙ্গে ১৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীও রয়েছে ১৮ ওয়ার্ডে। যদিও বিএনপি দল থেকে তাদের বহিষ্কার করেছে। এর সঙ্গে জামায়াতের অন্তত ৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপির ১৮ জন প্রার্থীর অধিকাংশই বর্তমান বা সাবেক কাউন্সিলর। ওয়ার্ডে তাদের রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও দাপট। তারা স্ব স্ব ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রে ভোটার আনার ব্যবস্থা করবেন। আবার কেউ কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবেও তাদের ভোট দিতে যাবে। কাউন্সিলরদের ভোট দিলে বিএনপি সমর্থক এ ভোটাররা মেয়র পদে কাকে ভোট দেবে, এটা বিরাট প্রশ্ন। অনেকের মতে, এ ভোট ভাগ হবে। কিছু অংশ রুপন পাবে, কিছু জাতীয় পার্টি পাবে। কিছু পাবে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি জামায়াতের ভোট ইসলামী আন্দোলন হাতপাখা মার্কায় যাবে না- এটা নিশ্চিত করে বলেছেন অনেকেই। তাদের যুক্তি, ইসলামী আন্দোলন সরকারি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি দল। তারা নানা ফতোয়া দিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে। তাদের দেয়া ফতোয়া ইসলামবিরোধী বলেও অভিমত রয়েছে ভোটারদের মধ্যে। এর সঙ্গে আবারো আলোচনায় ফিরে এসেছে ২০১৩ সালের বরিশাল সিটি ভোটে ঘটে যাওয়া ঘটনা। সে ভোটের আগে ইসলামী আন্দোলন হামলা করে আহত করেছিল সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা মজিবুর রহমান সরোয়ারকে- যা বিএনপির ভোটারদের মধ্যে এখনো ক্ষতচিহ্ন হয়ে আছে।
বিএনপির ভোটের কিছু অংশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাবে; এ বিষয়ে তাদের যুক্তি এবার যেহেতু আওয়ামী লীগের প্রার্থী নতুন। সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তার পরিচিতি গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে এবং বিএনপির প্রার্থী নেই। সে কারণে বিএনপির অনেক ভোটার তাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে পারে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ভোট দেয়ার বিষয়ে যুক্তি হলো- তাপসের এক ভাই জেলা যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তার রয়েছে বিশাল কর্মী সমর্থক। তার বলয়ের লোকেরা লাঙ্গলের ভোটার হতে পারে। এছাড়া গত ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তাপস নিরলসভাবে নগরীতে তার কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। সাহায্য সহযোগিতা করেছেন অবাধে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জাতীয় পার্টি দেখেননি। গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ কারণেও বিএনপির একটি অংশের ভোটার তাকে ভোট দিতে পারে।
তারপরও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে কারো পক্ষেই বলা সম্ভব হচ্ছে না নৌকার আসল প্রতিপক্ষ কে হবে। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে ভোটের ফলাফল পর্যন্ত।
নৌকার প্রতিপক্ষ হতে পারে সাদিকের ২০ কাউন্সিলর প্রার্থী : নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে এবার আওয়ামী লীগের ঘোষিত কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী নেই। নেতাকর্মীরা যে যার মতো প্রার্থী হয়েছেন। অথচ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ৩০ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অলিখিতভাবে ঠিক করে দেয়া হয়েছিল। তখন তাদের সবার মার্কা ছিল ঠেলাগাড়ি। এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। দলীয় লিখিত কোনো প্রার্থী তো নেইই, বরং আওয়ামী লীগে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে সাদিক আব্দুল্লাহর আশীর্বাদপুষ্ট অন্তত ২০ জন। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম সমর্থিত ৩০ জন রয়েছেন- যা আওয়ামী লীগের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য বিষফোড়া হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এবার সুষ্ঠু ভোট হবে- এটা অনেকটাই নিশ্চিত। এ কারণে প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা বিরাজ করছে। কী করবে ভোটাররা। ইভিএমে ভোট হওয়ার কারণে শঙ্কার মাত্রা আরো কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে প্রার্থীদের।
১২ জুন বরিশাল সিটিতে ভোট। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে কে হবেন সিটি মেয়র তা আপাতত স্পষ্ট না হলেও এটা নিশ্চিত যে বিজয়ের মালা যার গলায়ই উঠবে তিনি জিতবেন সামান্য ভোটের ব্যবধানে। সেটা পাঁচশ থেকে এক হাজার ভোট হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়