তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো তিন ব্যাংকারের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

বিপাকে রোহিঙ্গারা, বিপাকে বাংলাদেশ : ভূ-রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে কমল খাদ্য সহায়তা > এক বেলা খাবারের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ কমে ৯ টাকা

পরের সংবাদ

ডিআইটি পুকুরে অভিযান, অক্ষত কাউন্সিলর অফিস : সরাতে ৭ দিনের সময়, স্থানীয়দের ক্ষোভ

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় শত বছরের পুরনো ডিআইটি পুকুর উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান শেষে অক্ষত রয়েছে স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয় ও একটি গার্মেন্টস। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জানিয়েছে, কাউন্সিলর সম্মানী ব্যক্তি হওয়ায় এবং গার্মেন্টসে ভারি যন্ত্রপাতি থাকায় তাদের ৭ দিনের সময় দেয়া হয়েছে। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। তাদের দাবি, শতাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়ার সময় রাজউক কারো কথায় কর্ণপাত করেনি। যখনই ডিএসসিসির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহানা আক্তারের কার্যালয় ভাঙার সময় আসে, তখনই উচ্ছেদ অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
অন্য স্থাপনার মতো যদি কাউন্সিলরের কার্যালয় ভেঙে দেয়া হতো, তাহলে উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে কারোই আপত্তি থাকত না। পুকুরটি উদ্ধারে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাউন্সিলরের কার্যালয়টি উচ্ছেদের কথা বলেছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাহানা আক্তারকে ফোন করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে কামরুল নামে এক ব্যক্তি রিসিভ করেন। কার্যালয়টি সরিয়ে নেয়া হবে কিনা? এ বিষয়ে কাউন্সিলরের বক্তব্য দরকার জানালে, কামরুল বলেন, কাউন্সিলর মিটিংয়ে আছেন। এ বিষয়ে তিনি (কাউন্সিলর) কি বক্তব্য দেন এবং কার্যালয়ের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তা পরে জানিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় অভিযান শুরু করে রাজউক। শেষ হয় বিকেল ৪টায়। অভিযানে প্রায় ১০০ পুলিশ সদস্য অংশ নেন। অভিযান শুরু হতেই শত শত স্থানীয় বাসিন্দা হাততালি দিয়ে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান। পাশাপাশি রাজউক থেকে মাইকিং করে দোকানপাট থেকে মালামাল সরাতে নির্দেশনা দেন। দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল পৌনে চারটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে শতাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। তবে পুকুরপাড়ের পশ্চিম দিকে যে ভবনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর

সাহানা আক্তারের কার্যালয় রয়েছে, সেই ভবনের সামনে এসে রাজউকের উচ্ছেদ যন্ত্রটি থেমে যায়।
একপর্যায়ে কাউন্সিলরের অনুসারীরা অভিযানে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেন। অভিযান চলাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আরা সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রাজউকের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ডিআইটি পুকুরপাড় ভরাট করে নির্মিত স্থাপনা ভাঙা হচ্ছে। জলাধার ভরাট করে যেসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেসব স্থাপনা অপসারণ করা হচ্ছে। বৈধ কাগজপত্র থাকলে তা দেখাতে মাইকিং করা হয়েছে। তবে কেউ দেখাতে পারেননি। পরে স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয় যে ভবনে রয়েছে, ওই ভবন ও দোতলা আরেকটি স্থাপনা না ভেঙে অভিযান শেষ করার ঘোষণা দেয়া হয়। সে সময় রাজউক থেকে জানানো হয়, কাউন্সিলর সম্মানী মানুষ হওয়ায় এবং একটি দোতলা ভবনে ভারি যন্ত্রপানি থাকায় সেগুলোকে ৭ দিন সময় দেয়া হয়েছে। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ডিএসসিসির সাবেক কমিশনার (ওয়ার্ড কাউন্সিলর) সাইদুর রহমান ওরফে সহিদ পুকুর ভরাট ও দখল করছেন। সাইদুর রহমান বর্তমান কাউন্সিলর সাহানা আক্তারের বাবা। ডিআইটি প্লট পুকুর রক্ষার দাবিতে গত ২ জুন স্থানীয় ব্যক্তিরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কাউন্সিলরের সমর্থকদের হট্টগোলের কারণে সেদিন তা হয়নি। তবে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচির আহ্বায়ক ইব্রাহিম আহম্মেদ গণমাধ্যমকে জানান, যে কাউন্সিলরের কার্যালয়কে কেন্দ্র করে পুকুর ভরাট এবং স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, সেই কাউন্সিলরের কার্যালয় ভেঙে না দেয়ায় অভিযানটি প্রশ্নবিদ্ধ হলো। শাহানশাহ নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল অন্য স্থাপনাগুলোর মতো কাউন্সিলের স্থাপনাও ভাঙা হবে। কিন্তু তা না হওয়ায় আমরা হতাশ।
উল্লেখ্য, গত বুধবার ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস পুকুর দখলমুক্ত করার ঘোষণা দেন। পুকুরটি রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও পুকুর ভরাটকারী ব্যক্তিদের আইনি নোটিস পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেলা জানায়, ডিআইটি পুকুরটি ভরাট হলে এর আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হবে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছাবে। অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায়ও এমন জলাধার গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় স¤প্রতি প্রকাশিত হওয়া সংবাদে জানা যায়, পুকুরের চারপাশে ছড়িয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। মাটি ফেলে ভরাট করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা। স্থানীয়দের ভাষ্য, পুকুরটি ভরাটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণে যুক্ত আছেন ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহানা আক্তার এবং মালিকানা দাবিকারী নৌশাদ আহমেদ গং ও তাদের আমমোক্তার জাকির হোসেন।
উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ভরাট করা বেআইনি। গেন্ডারিয়া পুকুর খনন করা হয় ব্রিটিশ আমলে। তখন গেন্ডারিয়া থেকে যাত্রাবাড়ী, ধোলাইখাল, সায়েদাবাদ ও কুতুবখালী দিয়ে মানুষ নৌকায় যাতায়াত করত। কালের বিবর্তনে গেন্ডারিয়ার জলাধার বিলীন হয়ে যায়। ১৯৯২ সালে তৎকালীন ডিআইটি গেন্ডারিয়া এলাকার ১৩ দশমিক ৫৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে। সেখানে দুই একর পরিমাণ একটি পুকুর ছিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়