তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো তিন ব্যাংকারের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

বিপাকে রোহিঙ্গারা, বিপাকে বাংলাদেশ : ভূ-রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে কমল খাদ্য সহায়তা > এক বেলা খাবারের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ কমে ৯ টাকা

পরের সংবাদ

কারওয়ানবাজার ছাড়তে নারাজ কেন ব্যবসায়ীরা : ইন্ধনদাতা স্থানীয় কাউন্সিলর-রাজনীতিক

প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণ কারওয়ান বাজার আড়ত। যানজট কমাতে এটি সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্মাণ করেছে আমিনবাজার, মহাখালী ও যাত্রাবাড়ীতে তিনটি অত্যাধুনিক মার্কেট। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই যুগ। কারওয়ান বাজারের ভবনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে বিভিন্ন সংস্থা। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কিন্তু নানাভাবে বুঝানো হলেও ব্যবসায়ীরা কারওয়ান বাজার ছাড়তে নারাজ। তাদের দাবি- স্বাধীনতার পর থেকেই এখানে ব্যবসা করে আসছেন তারা। নতুন মার্কেটগুলো ব্যবসার উপযোগী নয়। জীবন দিয়ে হলেও কারওয়ান বাজারেই থাকতে চান তারা।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে কারওয়ান বাজারকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর এটি সরাতে অনড় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলছেন, নতুন মার্কেটগুলোতে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমরা নিশ্চিত করব। ১১ সদস্যের কমিটি করেছি। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে। এরপর আমরা পদক্ষেপ নেব।
কারওয়ান বাজার কীভাবে সরানো যায়, করণীয় ঠিক করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান খান কামালসহ কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার মতবিনিময়সভা করেছেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা এতে অংশ নেন।
এদিকে বারবার উদ্যোগের পরেও কেন সরছেন না ব্যবসায়ীরা? এ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। জানা গেছে, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন মেয়র আনিসুল হকের সঙ্গে মতবিনিময় করে ওই বছরের নভেম্বরেই কারওয়ান বাজার ছাড়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তারা। ঘোষণা দিয়েছেন কোনোভাবেই কারওয়ান বাজার থেকে সরবেন না। ব্যবসায়ীদের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ইন্ধন দিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ স্থানীয় একটি রাজনৈতিক মহল। যারা কারওয়ান বাজারকে পুঁজি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। বাজারটি এখান থেকে সরানো হলে তাদের ব্যবসায় ভাটা পড়বে। ফলে ব্যবসায়ীদের নানাভাবে ইন্ধন দিয়ে কারওয়ান বাজার না ছাড়ার বিষয়ে ভূমিকা রাখছে ওই মহলটি।
নগরবিদদের মতে, ব্যবসায়ীদের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। স্থানীয় কিছু নেতার অসুস্থ রাজনৈতিক ইন্ধনের ফলেই তারা এখান থেকে সরতে চাচ্ছেন না। কিন্তু ঢাকার বৃহৎ স্বার্থে এই বাজারটি সরানোর কোনো বিকল্প নেই। তারা বাজারটি সরাতে ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতেরও পরামর্শ দিচ্ছেন।
নগর পরিকল্পবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেছেন, ২০১৭ সালে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা মেয়র আনিসুল হককে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন ওই বছরের জুলাই মাসে তারা কারওয়ান বাজার ছেড়ে দেবেন। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছিল। কিন্তু আনিসুল হকের মৃত্যুর পর ব্যবসায়ীরা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। আমি যতটুকু জানি ব্যবসায়ীদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের পেছন থেকে ইন্ধন দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি। যারা কারওয়ান বাজারকে পুঁজি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছেন। এর পেছনে আছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও কেউ কেউ। তবে ঢাকার বৃহৎ স্বার্থে এটি সরাতেই হবে।
তিনি বলেন, ডিএনসিসির বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পরেই একাধিকবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা

বলেছেন। তিনি আন্তরিক। এটি বাস্তবায়ন করতে এখন তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতা নিচ্ছেন। তার আন্তরিকতায় আশা করছি, এবার কারওয়ান বাজার সরবে।
তিনি আরো বলেন, মার্কেটটা ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। অসংখ্য মানুষ আহত এমনকি নিহতও হতে পারে। শহরে ভেতরে কমার্সিয়াল এন্ড বিজনেস সেন্টার থাকতে পারে না। পুরো ঢাকার যানজটের অন্যতম কারণও এই কারওয়ান বাজার। ভোর থেকে শুরু হয়ে সারারাত চলে এই যানজট। বঙ্গবাজারের মতো বিপদজ্জনক ঘটনা ঘটতে পারে। এ অবস্থায় এখানে কাউকে ব্যবসা করতে দেয়া ঠিক না।
তিনি বলেন, এটা অবশ্যই সরানো সম্ভব। অরাজক পরিস্থিতি তৈরির মধ্য দিয়ে যারা নগরের চলাচল বা নিরাপত্তা বিঘিœত করতে চায় তাদের আস্কারা দেয়া যাবে না। নইলে প্রকৃতপক্ষে জনবান্ধব ও নিরাপদ শহর কারো পক্ষেই গড়া সম্ভব হবে না।
এদিকে গত বৃহস্পতিবারের মতবিনিময়সভায় কারওয়ান বাজার ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই এখান থেকে না সরার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। তাদের দাবি- মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। বরং নতুন মার্কেটগুলো নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। সেগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে পর্যাপ্ত জায়গারও অভাব। ট্রাক রাখারও কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য তারা নতুন মার্কেটে যাবেন না। মেয়র আতিকুল ইসলামও ব্যবসায়ীদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যাতে তারা সরে যায়। ব্যবসায়ীদের তিনি বলেন, নতুন মার্কেটগুলো কারওয়ান বাজার থেকে একশ গুন ভালো হবে। কারণ, কারওয়ান বাজার যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। এ সময় তিনি ১১ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করেন। এই কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কারওয়ান বাজারের স্থানান্তর করণীয় নিয়ে রিপোর্ট দেবে।
বৃহস্পতিবারের সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রকৌশলীরা এই বাজারের কয়েকটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। পাশ দিয়ে মেট্রোরেল হচ্ছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। একসময় হয়তো কারওয়ান বাজারে ট্রাক আসবে না। ব্যবসায়ীদের এটি আগে থেকেই বিবেচনা করতে হবে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখেই এখান থেকে বাজার সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, কারওয়ান বাজার স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আস্থার জায়গা তৈরি করা। দ্বিতীয়ত; বাজারটি সরাতে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকতে হবে। বিশ্বের কোনো জায়গায়ই মানুষ স্থানান্তর হতে চায় না। কিন্তু স্থানান্তরের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকতে হবে। তাদেরকে বিকল্প যেসব জায়গায় স্থানান্তর করা হচ্ছে, সেই জায়গা এক ধরনের আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। যেন তারা সেখানে গেলে তাদের ব্যবসাটা সুন্দরভাবে করতে পারে। কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে ব্যবসায়ীদের যেসব জায়গায় নেয়ার কথা যেমন আমিনবাজার আর যাত্রাবাড়ীতে। সেসব জায়গা নিয়ে ব্যবসায়ীদের কিছু অভিযোগ ছিল। এগুলোর মধ্যে হচ্ছে ডিজাইন, লোকেশন, ব্যবসার পরিবেশ আছে কিনা। সেগুলো সমাধানে নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারের ভবনগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেজন্য তাদের সরতেই হবে। তবে নতুন বাজারগুলোতে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। শুনলাম এখানে অনেকেরই নাকি পজেশন কেনা আছে। তাদের কিভাবে ইনসেনটিভ দেয়া হবে আর যারা ভাড়া আছে তাদের কীভাবে দেয়া হবে- সেটা খোলামেলা আলোচনা করেই তাদের আস্থার জায়গায় নিতে হবে। তবে সবার আগে ঢাকার কেন্দ্র থেকে এটি সরানোর সিদ্ধান্তে সরকারকে অনড় থাকতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়