প্রকাশিত: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ ডেস্ক : ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা সম্প্রতি নতুন মোড় নিয়েছে। পদাতিক বাহিনীর বদলে এখন নিয়মিত চলছে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা। তবে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ প্রায়ই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের দাবি করছে। এদিকে ইউক্রেনের খেরসনে নোভা কাখোভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ধসে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধটি এমন একসময়ে ধসে পড়ল, যখন ইউক্রেন পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই পাল্টা আক্রমণকে ইউক্রেন যুদ্ধের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউক্রেনে বৃহস্পতিবার রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রুশ হামলায় একজন নিহত এবং আরো ৩ জন আহত হয়েছে। হামলায় ৪টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানায়, তারা রাশিয়ার ৪টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১০টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানায়, রুশ বাহিনী ১৬টি ড্রোন এবং ৬টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
গোলাবর্ষণে ব্যাহত উদ্ধার কার্যক্রম : সোভিয়েত আমলের গুরুত্বপূর্ণ নোভা কাখোভকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধটি স্থানীয় সময় মঙ্গলবার গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এর ফলে দিনিপ্রো নদীর পানি বেড়ে আশপাশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। পানিতে তলিয়ে যায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি। স্থানীয় লোকজন এখন বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় মরদেহ ভাসতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়েই এই বাঁধ ধ্বংসের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে। এই ঘটনায় যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে, সেখানে অপরপক্ষের গোলাবর্ষণের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার কিয়েভ আর মস্কো একে অপরকে দোষারোপ করেছে। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, খেরসনে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার সময়
রাশিয়ার গোলায় অন্তত ৯ জন আহত হয়। অঞ্চলটির ইউক্রেনীয় গভর্নরের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ড্রোন ভিডিওতে বন্যাদুর্গত অনেক এলাকায় বাড়িঘরের ছাদ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। বন্যায় খেরসনের প্রায় ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা তলিয়ে গেছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ইউক্রেনে উদ্ধারকারী নৌকা এবং পানির পাম্প পাঠানো হচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব ৩২টি উদ্ধারকারী নৌকা, ১৫টি পানির পাম্প এবং ১৮০টি লাইফ জ্যাকেট পাঠানো হচ্ছে।
ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার ইউক্রেনের সেনারা : রুশ সেনাদের হটাতে কয়েকদিন আগে পূর্ব দিকের অঞ্চলগুলোতে হামলা চালানো শুরু করে ইউক্রেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দুজন সামরিক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, এ হামলা চালাতে গিয়ে রুশ বাহিনীর ‘শক্তিশালী প্রতিরোধের’ মুখে পড়েছিলেন ইউক্রেনীয় সেনারা। এতে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। এছাড়া হারিয়েছেন মার্কিনিদের পাঠানো সাঁজোয়া যানও।
দীর্ঘ অপেক্ষা ও প্রস্তুতির পর রুশ সেনাদের প্রতিরোধ ভাঙতে এ অভিযান শুরু করে ইউক্রেন। আগেই ধারণা করা হয়েছিল, বিষয়টি ইউক্রেনীয়দের জন্য কঠিন হবে। কিন্তু রুশ সেনারা যে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে সেটি ‘ধারণারও বাইরে’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তাদের একজন বলেছেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত অস্ত্রের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো এমআরএপি সাঁজোয়া যানও ছিল। আর ক্ষতির পরিমাণ বেশ ‘উল্লেখযোগ্য’।
ইউক্রেনের সেনারা বাখমুতে কিছু সফলতা অবশ্য পেয়েছেন। কিন্তু ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, গ্রেনেড ও মর্টারসহ অন্যান্য অস্ত্রে সজ্জিত রুশ বাহিনী ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কিছু কিছু জায়গায় রাশিয়ার সেনারা কয়েক ধাপে প্রতিরোধ তৈরি করেছেন। যার মধ্যে বিস্তৃত অঞ্চলে মাইনও পুঁতেছেন তারা। আর এসব মাইন ও প্রতিরোধ ইউক্রেনীয় সেনাদের সাঁজোয়া যানের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
তবে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণে এ ক্ষয়ক্ষতি বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন তারা। পশ্চিমা দেশগুলো আগেই জানিয়েছিল, পাল্টা আক্রমণ সফল হতে সময় লাগবে এবং এই অভিযানে তাদের সেনা, যুদ্ধাস্ত্র ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও কয়েকদিন আগে স্বীকার করেন, পাল্টা আক্রমণ তাদের জন্য অনেক কঠিন হবে এবং এই অভিযানে ‘অনেক সেনা মারা যাবে’।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু দাবি করেন, গত বুধবার বাখমুতে হামলা চালাতে আসে ইউক্রেনের সেনারা। তখন তাদের ঠেকিয়ে দেয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার তিনি দাবি করেন, জাপোরিঝিয়াতেও আক্রমণ চালিয়েছিল ইউক্রেনীয় বাহিনী। সেখানেও তাদের রুখে দেয়া হয়।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ নামে সেনা পাঠালে যুদ্ধ শুরু হয়। এটি এরই মধ্যে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, অগণিত মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে, অনেক শহরকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।