গণতন্ত্র মঞ্চের হুঁশিয়ারি : সমাবেশে বাধা দিলে পরিণতি ভালো হবে না

আগের সংবাদ

পাহাড় কাটার হিড়িক, দুই ফসলি জমির টপ সয়েল যাচ্ছে ভাটায়

পরের সংবাদ

বাজেটটা কী নামে চিহ্নিত করব?

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এই জীবনে ৬০-৭০টি বাজেট দেখার এবং অন্তত ৫০টি বাজেট বোঝার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। একটা সময় ছিল যখন বাজেটের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা আগেই বলে দেয়া যেত। সরকারি দল তাদের বাজেটকে আখ্যায়িত করত গণমুখী হিসেবে আর বিরোধী দল এটাকে বলত গণবিরোধী। ধারাটা বোধহয় বদলেছে। সরকারি দল বর্তমান বাজেটকে বলছে সংকট উত্তরণের বাজেট। অফিসিয়াল বিরোধী দল বাজেটকে বলছে নির্বাচনমুখী বাজেট, আনঅফিসিয়াল বিরোধী দল অর্থাৎ বিএনপি এ বাজেটকে বলছে লুটপাটের বাজেট। তাদের নামকরণের যৌক্তিকতা আমি খুঁজে পাচ্ছি না, তবে আমার মনে হচ্ছে এই বাজেটটি ঋণনির্ভরতার ক্ষেত্রে পূর্বের সব নজিরকে ছাড়িয়ে গেছে। এই ঋণটা আসবে ব্যাংক থেকে এবং তা এক জায়গায় থেমে থাকবে না। ঋণের সুদে একটা খুব বড় না হলেও বড় পরিবর্তন হবে। তখন দেখা যাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ঋণের ঘাটতি পূরণের প্রবণতা বাড়বে। আইএমএফের সুপারিশ মোতাবেক সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কিছুটা লাগাম ধরা হচ্ছে। সুদের হারটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরঙ্কুশ অঙ্কের সীমারেখার লাগাম টানার প্রয়াস লক্ষণীয়। তবে আমার মনে হয়, সঞ্চয়পত্রের সুদের হারটা ব্যাংক জগতে প্রচলিত কিংবা কল্পিত হার থেকে ২-৩ শতাংশ বাড়িয়ে ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমানো যেতে পারে এবং মুদ্রা সম্প্রসারণজনিত মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও সামাল দেয়া যেতে পারে।
কৃষি খাতে যে ব্যয়টা ধরা হয়েছে, তা কি খুব আকর্ষণীয়? এর আগে খরা বা বন্যায় ফসলহানির কথাটা মাথায় রেখে কৃষি বাজেট আর একটু বাড়ানো উচিত। পুরো বাজেটের আকার ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি ও ডলারের বিনিময় হার বিবেচনা করলে বৃদ্ধিটা কোনো বৃদ্ধি নয়। তবে সব বাজেটই এক একটি স্বপ্ন। এই স্বপ্ন কতটা অর্জিত হবে তা নির্ভর করে কতটা নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় এই স্বপ্নকে লালন করা হবে। কথায় আছে আমরা যদি আমাদের স্বপ্নের ব্যাপারে শতভাগ নিবেদিত হই, তাহলে তার অর্জন শতভাগ হবে। আর যদি ৯০ ভাগ নিবেদিত হই, তাহলে অর্জন হবে ৮০ ভাগ। নিষ্ঠার মাত্রা যদি যথাক্রমে ৮০ ভাগ, ৭০ ভাগ, ৬০ ভাগ বা ৫০ ভাগ হয়, তাহলে অর্জন হবে যথাক্রমে ৬৫, ৫৫, ৪৫। বাজেট নিয়ে আরও বহু কথা আসবে। শেষে এখানে সেখানে কাটছাঁট হয়েই বাজেট গৃহীত হবে। আয়বৈষম্য করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে স্বল্প আয়ের মানুষের হাতে কিছু বেশি ক্রয়ক্ষমতা তুলে দেয়ার কর নীতি মন্দ নয়, তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক দ্রব্যের ওপর পরোক্ষ কর আরোপ এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০০০ টাকা ন্যূনতম কর আরোপ এখনই অনাকাক্সিক্ষত। ব্যাংক অঙ্গনে যে নৈরাজ্য তাকে টুঁটি চেপে ধরা সম্ভব হলে বাজেটটি কিছুটা ইলেকশন বাজেটে রূপ নিতে পারবে হয়তো। এই বাজেটে লুটপাট কীভাবে উৎসাহিত হবে, তা কিন্তু বোধগম্য হলো না। এটাকে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির তেমন যুৎসই পদক্ষেপ বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে না। সে কাজটা শুরু হবে এবং জোরেশোরে শুরু হবে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে।
এবারের বাজেটে বরাবরের মতো সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সম্প্রসারিত হয়েছে। এই বলয়ের সংজ্ঞা ও বলয়াধীন সুবিধা প্রত্যাশীদের নিয়ে নানা কথা বিভিন্ন গবেষণায় এসেছে। এসব মানুষসহ মুক্তিযোদ্ধা এবং সংখ্যালঘুদের আওয়ামী লীগ বিমুখ করার প্রয়াসের সঙ্গে অপপ্রচার লক্ষণীয়। বিষয়টির প্রতি নজর দেয়া প্রয়োজন। সমালোচনার মুখে সব টিআইএনধারীদের কমপক্ষে ২০০০ টাকা দাবির বিধান হয়তো টিকে থাকবে না। ফলত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের পরিধি আরও সম্প্রসারণ সম্ভব হবে না। তবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করলে নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়তেও পারে।

ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়