‘প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অন্তরায়’

আগের সংবাদ

রাজনীতির ছায়ায় ব্যবসার জাল : জামায়াতের বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক দেশ জুড়ে বিস্তৃত, গোপনে চলছিল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, এবার প্রকাশ্যে মাঠে নামার হুংকার

পরের সংবাদ

সেঞ্চুরি হাঁকাল পেঁয়াজ : একদিনে দাম বেড়েছে ২৫ টাকা > আজ থেকে পেঁয়াজ আমদানির আশ্বাস কৃষি মন্ত্রণালয়ের

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সবারই নাভিশ্বাস অবস্থা। এর মধ্যেই একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫ টাকা বেড়ে এক লাফে ১০০ টাকায় উঠেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেই ফের সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পেঁয়াজ। আর বিক্রেতাদের অজুহাত, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় দাম বাড়ছে। গতকাল রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার এমন বক্তব্যই পাওয়া যায়। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে ভোক্তার স্বার্থ নষ্ট করা যাবে না। তাই বাজারে দাম বাড়লে আমদানি করে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় আজ সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি দেবে কৃষি মন্ত্রণালয়। গতকাল এক বিজ্ঞপিতে জানানো হয়, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের, শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ সব ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর আগে কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখা হয়েছিল।
গতকাল রবিবার এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি আমাদের জন্য উভয় সংকটের মতো। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে দাম অনেক কমে যায়, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আর আমদানি না করলে দাম বেড়ে যায়, ভোক্তাদের কষ্ট হয়। সেজন্য সব সময়ই আমরা চাষি, উৎপাদক, ভোক্তাসহ সবার স্বার্থ বিবেচনা করেই আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে এ মুহূর্তে পেঁয়াজের সংকট নেই। সুযোগ বুঝে অসাধু চক্র সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। মনে হচ্ছে চক্রটিকে ভোক্তার পকেট কাটতে সুযোগ করে দিয়েছিলেন নীতিনির্ধারকরা। প্রায় এক মাস ধরে পেঁয়াজের বাজার সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন

বাড়াতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেছে সরকার। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, অসাধুরা যে কোনো অজুহাতে ভোক্তার পকেট কাটে। সুযোগ পেলেই সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অতি মুনাফা করে। তারা চিহ্নিত। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এ কারণে অসাধুরা বারবার একই পন্থায় ভোক্তার পকেট কাটে। তিনি আরো বলেন, পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকার মধ্যে থাকলে কৃষকের স্বার্থ রক্ষা হয় বলে আমরা মনে করি। সরকারকে সব সময় লক্ষ রাখতে হবে, বাজারে ৪০ টাকার বেশি যদি পেঁয়াজের দাম হয় তাহলেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে হবে। কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে যদি ভোক্তার স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে হয়, তাহলে এটা দুঃখজনক।
বাজার মনিটরিংয়ে নিয়োজিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য অনুযায়ী, রবিবার বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০-৭৫ টাকা। অথচ রমজান মাসে পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৮০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ। ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতি বছরই ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেন। দুই দিন আগে ৭০ টাকায় কিনলেও রবিবার বিক্রেতারা ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন। শান্তিনগর কাঁচাবাজার এলাকার ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, শনিবারও ৮৫ টাকা ছিল পেঁয়াজের কেজি। এক রাতের ব্যবধানে কীভাবে ১০০ টাকা হলো- বুঝতে পারছি না।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা আরিফ ভোরের কাগজকে বলেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম কমলে খুচরায়ও কমে যায়। তবে বর্তমানে যেভাবে দাম বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে ঈদের আগেই পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা পার হতে পারে। আমদানির মাধ্যমে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এক মাসের চাহিদা ২ লাখ টন। আর একদিনের চাহিদা ৬ হাজার ৬৬৬ টন বা ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ কেজি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়