‘প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অন্তরায়’

আগের সংবাদ

রাজনীতির ছায়ায় ব্যবসার জাল : জামায়াতের বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক দেশ জুড়ে বিস্তৃত, গোপনে চলছিল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, এবার প্রকাশ্যে মাঠে নামার হুংকার

পরের সংবাদ

রেল দুর্ঘটনা রোধে সতর্ক থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী > মূল্যস্ফীতি ও লোডশেডিং মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিচ্ছি

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মূল্যস্ফীতি আর লোডশেডিংয়ে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারাবিশ্বে তেল-গ্যাস-কয়লা সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। তাই এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও কেনা যাচ্ছে না। এরকমই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। আমি জানি, এই গরমে মানুষের একটু কষ্ট হচ্ছে। একদিকে মূল্যস্ফীতি আর অপরদিকে এখন বিদ্যুৎ নেই- এই দুটি কষ্ট আমার দেশের মানুষ পাচ্ছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। গতকাল রবিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, স্বাগত বক্তব্য দেন রেলসচিব হুমায়ুন কবির।
অনুষ্ঠানের অপরপ্রান্ত চিলাহাটিতে বক্তব্য রাখেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম, নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট মমতাজুল হক, ডোমার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।
দাম বাড়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ; তার ওপর স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনের ফলে বিশ্বব্যাপী প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। আমাদের জ্বালানির দাম বেড়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, গম-চিনি যা কিছু আমরা কিনতে যাচ্ছি, সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। বিদেশ থেকে আমরা যে ঋণ নিয়েছি, তারা সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছে; যার ফলে আমাদের অর্থনীতির ওপর একটা চাপ আছে, তা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের নিজেদেরও কিছু উদ্যোগ আছে।
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দেব, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ বিশ্বব্যাপী তেল-গ্যাস-কয়লা সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও কেনা যাচ্ছে না। এ রকমই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। একদিকে মূল্যস্ফীতি আর অপরদিকে এখন বিদ্যুৎ নেই- এই দুটি কষ্ট আমার দেশের মানুষ পাচ্ছে।
ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থার তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত শীতে ইউরোপের দেশগুলো, তারা গরম পানি ব্যবহার করা বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ, সবকিছু ইলেকট্রিসিটিতে চলে। গরম পানি বন্ধ, হিটিং বন্ধ, এ রকম তাদের দুরবস্থা। এমনকি বাজারে গেলে সীমিতভাবে কিনতে হতো। একটি পরিবার ছয়টির বেশি ডিম কিনতে পারবে না, এক লিটারের বেশি তেল কিনতে পারবে না, তিনটার বেশি টমেটো কিনতে পারবে না- ঠিক এই অবস্থাটা। বাংলাদেশ এখনো সেই দুরবস্থায় পড়েনি, ইনশাল্লাহ পড়বেও না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপির আমলে বাজেট ছিল মাত্র ৬১ হাজার কোটি টাকা। এ বছর বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট আমরা দিয়েছি। যার পরিমাণ ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আমরা তা পারব, আওয়ামী লীগ পারবে। তিনি বলেন, আমি জানি, অনেকে অনেক কথাই বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু আমরা বাংলাদেশটাকে চিনি, জানি, আর এই বাংলাদেশের মানুষের অবস্থাটাও আমাদের জানা। অবশ্য

ঢাকা শহরে বসে- আমরা এখন বিদ্যুৎ দিয়েছি, সেখানে এয়ারকন্ডিশন্ড রুমে বসে, আমরা যা কাজ করি, সেখানেই একটা সমালোচনা, সেখানেই একটা কিন্তু খুঁজে বেড়ানো। আর মানুষকে হতাশ করার কতগুলো কথা তারা বলে বেড়ায়। বাজেট দেয়ার পর তারা প্রতিবারই বলেন, ‘এটা সম্ভব নয়, এটা করতে পারবে না’- আমরা কিন্তু তা করি এবং করে দেখাই। যারা এসব কথা প্রতি বছর বলেন, তাদের বলব, আগের বছর কী বলেছিলেন, আর আজকের বাংলাদেশ কোথায় এসেছে, একটু হিসাব করে তারা যেন দেখেন। বাংলাদেশের বদনাম বিদেশিদের কাছে বলে বলে তারা নিজেরা সেখান থেকে কী পায়, আমি জানি না। কিছু হাদিয়া-টাদিয়া জোগাড় করে কিনা, তাও বলতে পারব না। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলেই তারা যেন তৃপ্তি পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারাদেশে রেল নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণ করছি। পদ্মা সেতুতে রেল চালুর পর ভাঙ্গা থেকে বরিশালের রেল যোগাযোগ চালু করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। বরিশালের মানুষ রেললাইন দেখতে পায়নি। তাই আমাদেরও বরিশাল থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমরা বিএনপি ও অন্যান্য সরকারের বন্ধ হয়ে যাওয়া সমস্ত রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করি। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে আমরা রেল ট্র্যাক যুক্ত করেছি। যা আগে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এখন আমরা যমুনা নদীর ওপর একটি পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করছি। একসময় বিশ্বব্যাংক বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে রেলপথের বিরোধিতা করলেও এখন তারা নদীর ওপর রেল সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করছে।
রেল দুর্ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গেট বন্ধ থাকার পরও মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেল লাইনে হেঁটে বা রেললাইন পার হওয়ার চেষ্টা না করার ব্যাপারে দেশবাসীকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রেল দুর্ঘটনা ঘটে, ভারতে কী ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে, আপনারা দেখেছেন। এরকম দুর্ঘটনা সচরাচর চোখে দেখা যায় না। একসঙ্গে তিনটি রেল দুর্ঘটনায় ২৮৮ জন মারা গেছেন। আমি তাদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে শোক জানিয়েছি। এ ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমাদের দুজন বাংলাদেশিও আহত রয়েছেন। এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা সত্যি চিন্তার বিষয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়