‘প্রস্তাবিত বাজেট তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অন্তরায়’

আগের সংবাদ

রাজনীতির ছায়ায় ব্যবসার জাল : জামায়াতের বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক দেশ জুড়ে বিস্তৃত, গোপনে চলছিল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড, এবার প্রকাশ্যে মাঠে নামার হুংকার

পরের সংবাদ

মার্কিন ভিসানীতি দুরভিসন্ধিমূলক : আমু > প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক চান ১৪ দলের শরিকরা

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্রুত বৈঠক করতে চান ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। তারা বলেছেন, নির্বাচনের আর ছয় মাস বাকি আছে। আগামী নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের নির্বাচনী কৌশল এবং পারস্পারিক বিষয়াদি নিয়ে জোটনেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্য বৈঠক হওয়া প্রয়োজন। কারণ, রাজনীতির অঙ্গনে জোটের শরিকরা তাদের পরিকল্পনার কথা বলতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে বিব্রত হন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা প্রয়োজন।
গতকাল রবিবার সকালে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর ইস্কাটনের বাসায় জোটের বৈঠকে নেতারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জোট সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, গণআজাদী লীগের সভাপতি এডভোকেট এস কে সিকদার, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ফারুকসহ ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকালের বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৪ দলীয় জোট।
বৈঠকসূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্রুত বৈঠক আহ্বানের তাগিদ দিয়েছেন শরীক দলের নেতারা। এ প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেন, কিন্তু আমরা কোনো উত্তর দিতে পারি না। সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি থেকে শুরু করে নির্বাচনী কার্যক্রম কোথাও তো ১৪ দলের তৎপরতা নেই। এসব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিতে দ্রুত বৈঠকে বসা দরকার। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীও একই কথা বলেন।
এছাড়া গতকাল রবিবার বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি দুরভিসন্ধিমূলক বলে অভিহিত করেছে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। জোটের নেতারা বলছেন, এই নীতি স্বাধীন সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ। বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এটা দেয়া হয়েছে। এ ভিসানীতি অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত।
জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা আমেরিকার এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ। এটা তাদের দুরভিসন্ধিমূলক সুদুরপ্রসারী পদক্ষেপের অংশ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ ১৪ দলের অনেকেই কথা বলেছেন।
বৈঠকে সরকারের ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে কথা হয়। অনেকেই খাতা কলম ও কাগজের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার আহ্বান জানান। জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিতে আহ্বান জানানো হয় বৈঠকে। কিছু কিছু মন্ত্রীর অতিকথন নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আমির হোসেন আমু বলেন, জোটের বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিশদ আলোচনা হয়। সেখানে মার্কিন ভিসানীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই ভিসানীতি অনাকাক্সিক্ষত ও দুরভিসন্ধিমূলক। এটা কারো কারো পক্ষে ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু আমরা মনে করি, জাতি সংবিধানের প্রত্যেকটি প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমরা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এক্ষেত্রে অন্য কোনো হস্তক্ষেপ কামনা করি না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দাবি তাদের টার্গেট করে ভিসানীতি হয়নি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ভিসানীতিকে অনাকাক্সিক্ষত মনে করি। এখানে ১৪ দলের বৈঠক হয়েছে। এটা আওয়ামী লীগের মিটিং না। অন্য দল কে কি বলবে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের আলোচনায় যেটা আসবে সেটা আমরা প্রকাশ করব। তবে যারা নির্বাচনকে বিভিন্ন অজুহাতে বানচাল করতে চায়, প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের জন্য ভিসানীতি সহায়ক হতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কথাগুলো বলতে চাই। এখানে যদি অন্য কোনো দেশের সন্দেহ থাকে, তাহলে তারা বসে এটা ঠিক করতে পারে যে, সংবিধানের ভেতরে কোথায় কোনো ফাঁকফোকর আছে, সেটা তারা বিবেচনা করুক। সেগুলো দেখুক, আলোচনা করুক। কিন্তু সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। সংবিধানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে অন্য কোনো উপায়ে আঘাত আসুক এটা আমরা চাই না।
সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য ১৪ দল কোনো উদ্যোগ নেবে কী না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, জাতি সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো দলই জাতি, জনগণ ও দেশের বাইরে না। যদি জনগণের ওপর আস্থা থাকে সংবিধানভিত্তিক নির্বাচনে আস্থা থাকে সবারই নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত।
বাজেট নিয়ে সংসদে বিস্তারিত আলোচনা হবে জানিয়ে জোটের সমন্বয়ক বলেন, আমরা পড়াশোনায় গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা পয়সায় বই বিতরণ করছেন। সে ক্ষেত্রে কলম ও কাগজের দাম বাড়ানো হলে পড়াশোনার ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। সংবাদপত্রের ওপর ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমরা মনে করি, কাগজ-কলমের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করা উচিত।
বিদ্যুৎ সমস্যা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সবধরনের চেষ্টা করছেন। আমাদের দেখতে হবে সরকার সচেতন কিনা, প্রচেষ্টা আছে কিনা। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে থাকলে কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়