তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে আরো দুজনের সাক্ষ্য

আগের সংবাদ

সিগন্যালের ভুলেই দুর্ঘটনা : শোকে কাতর পুরো ভারত > তিন ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ২৮৮, আহত সহস্রাধিক

পরের সংবাদ

বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই, লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না : সিপিডির বাজেট পর্যালোচনা

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। কারণ, মূল্যস্ফীতি, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও বিনিয়োগ সূচকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে বাস্তবতার তেমন মিল নেই। দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থায় লক্ষ্যগুলো বেশ উচ্চাকাক্সক্ষী। অনুমিতি বা প্রক্ষেপণের দুর্বলতার কারণে বাজেট বাস্তবায়ন হোঁচট খাবে। তাতে শেষ পর্যন্ত হয়তো লক্ষ্য বাস্তবায়নও হবে না। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সংস্থাটির আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪, সিপিডির পর্যালোচনা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। ব্রিফিংয়ে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরেন তিনি। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ছিল ২১ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগ বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি যেভাবে চলছে, সে আলোকে এসব লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাকাক্সক্ষী বলে মনে হয়েছে। এসব অনুমিতিগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এজন্য এসব লক্ষ্য অর্জন করা অনেক কঠিন হবে এবং শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হবে না বলে আমার ধারণা।
তিনি বলেন, চলমান সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো পুরোপুরি অনুধাবন করে সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই। আমরা মনে করি, বাজেটে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা দিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতি ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বৈশ্বিক সংকট তৈরি হওয়ার পরে সেটাকে বিবেচনায় না নিয়ে গত বছর বাজেট করা হয়। এর ফলে বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও বর্তমান বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। এই উচ্চ আকাক্সক্ষার বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে রাজস্ব আয় চলতি বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আর লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হলে তখন ঘাটতি মেটাতে হয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে, বা এডিপি কাটছাঁট করতে হবে। তা না হলে বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। ফলে অনুমিতির দুর্বলতার কারণে পরে অর্থনীতি প্রতিটি জায়গায় হোঁচট খাবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই : খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এবারের বাজেটে সবচেয়ে দুর্বলতম জায়গা হচ্ছে মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ ঘোষণা করতে না পারা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা রয়েছে, সে আকাক্সক্ষা মেটাতে এ বাজেট ব্যর্থ হবে।
তিনি বলেন, বাজেটে আমরা অল্প কিছু উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি। তার ভেতরে মূল্যস্ফীতি সীমিত রাখার জন্য নয়, বরং মূল্যস্ফীতির অভিঘাতটাকে কিছুটা স্বস্তি

দেয়ার জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে। সেই জায়গাটিতে হিসাব করেছি, যে ২ হাজার টাকার কথা বলা হয়েছে সেটিকে যদি মাসভিত্তিতে নেন তাহলে ১৬৭ টাকা আসে। অর্থাৎ করমুক্ত আয়সীমার যে সুবিধা দেয়া হয়েছে সেটি মাসে আড়াই হাজার টাকা। সেটি এই দুই হাজার টাকার হিসাব থেকে যদি বাদ দেন, তাহলে ২ হাজার ৩৩৩ টাকার সুবিধা তিনি পাবেন।
বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে ‘স্মার্ট’ সংস্কার দরকার। পুঁজিবাজার সংস্কার করা না গেলে অনুদাননির্ভর সরকারের সাহায্যনির্ভর পুঁজিবাজার বেশি দিন টিকতে পারবে না।
দুই হাজার টাকা ন্যূনতম কর নৈতিকতার দিক থেকে অযৌক্তিক : মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে একদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে সেবার বিপরীতে ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে যাদের করযোগ্য আয় নেই, তারাও এই করের আওতায় পড়বেন। এ কারণে উদ্যোগটি নৈতিকতার দিক থেকে ঠিক নয়, যৌক্তিকও নয়। এজন্য সরকারি ৩৮ ধরনের সেবা নিতে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা করের বিধানটি প্রস্তাবিত বাজেট থেকে বাদ দেয়ারও সুপারিশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। এ চাপ মোকাবিলায় বাজেটে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপই নেই। উল্টো অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে। এছাড়া বাজেটে এমন কিছু রাজস্ব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যাতে কিছু পণ্যমূল্য বাড়বে, যার প্রভাব সরাসরি মানুষের, তথা ভোক্তার ওপর পড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়