ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শোকজ

আগের সংবাদ

বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব : বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

পরের সংবাদ

২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। এই বরাদ্দ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের চেয়ে ৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরে এই খাতের বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের টার্গেট নির্ধারণ করেছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনকালে তিনি এসব তথ্য জানান।
বাজেটে বরাদ্দ প্রসঙ্গে জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম বলেন, জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এটার প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমরা দেখছি, বরাবরই মোট বরাদ্দের টাকার বিদ্যুৎ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হচ্ছে। সেই তুলনায় জ¦ালানি খাতে বরাদ্দ অনেক কম। এবারো তাই হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের তুলনায় জ¦ালানি খাতে কম বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জ¦ালানি খাত শক্তিশালী না হলে বিদ্যুৎ খাতে সুফল মিলবে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, খনন, পুনর্খনন জরুরি। তাই এই খাতের বরাদ্দ বেশি হওয়া জরুরি বলে আমি মনে করি। তার মতে, আমদানিনির্ভরতার কারণেই বিদ্যুৎ খাতে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়। এখান থেকে আস্তে আস্তে সরে আসতে হবে। তবে চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে সঞ্চালন ব্যবস্থাপনায় ভালো কাজ হয়েছে। এছাড়া বিশেষ সফলতা নেই। জ¦ালানি খাতের

অনুসন্ধান, উত্তোলন ও সরবরাহের ওপরই আমাদের ভবিষ্যৎ জ¦ালানি নিরাপত্তার বিষয়টি নির্ভর করছে।
জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতাকালে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতের বিস্তারিত উন্নয়ন তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছিলাম। ইতোমধ্যে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালের ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেছি। সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ বর্তমানে ১৬ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া, বিতরণ লাইনের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটার করা হয়েছে। ফলে, বিদ্যুতের সিস্টেম লস ১৪ শতাংশ হতে কমে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, ডুয়েল-ফুয়েল, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পায়রা, মহেশখালী ও মাতারবাড়ী এলাকায় নির্মিত পাওয়ার হাবগুলোতে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রামপালে কয়লাভিত্তিক ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল প্রজেক্ট (প্রথম ইউনিট) ও পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে জীবাশ্ম এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন আছে। ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া সরকার মোট ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরো ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ সংগ্রহ করছি। ২০৪১ সালের মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে আন্তঃদেশীয় গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ডে নির্মিত ২ ইউনিটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। নেপালের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে নির্মিয়মান জল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ, ভুটান এবং ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ আমরা পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হতে সংগ্রহ করতে চাই। কার্বন নিঃসরণ কমানোর উদ্দেশ্যে ডিজেলচালিত পাম্পের স্থলে সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করা হচ্ছে।
২০০৯ সালের তুলনায় জ্বালানি তেলের মজুত ক্ষমতা ৮ দশমিক ৯৪ লাখ মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন করা হয়েছে। এছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জ্বালানি তেলের মজুত ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে পর্যায়ক্রমে ৬০ দিনে উন্নীত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়