জাহাঙ্গীরের প্রক্সি জায়েদার জয় : মোট ৪৮০টি কেন্দ্রের ফলাফলে জায়েদা খাতুন ২,৩৮,৯৩৪ ও আজমত উল্লা ২,২২,৭৩৭ ভোট

আগের সংবাদ

নতুন শঙ্কায় পোশাক খাত : যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে ক্রয়াদেশ কমছে > বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক কারখানা

পরের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কোন পথে : মূল্যস্ফীতি > ডলার সংকট > বৈদেশিক ঋণের সুদ ও ভর্তুকি ব্যয় > কর ও ব্যক্তি করদাতা বাড়ানো

প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেট ঘোষণার আর মাত্র চার দিন বাকি। নতুন বাজেট ঘোষণার আগেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির শঙ্কায় দেশের সাধারণ মানুষসহ অর্থনীতিবিদরা। সরকারও বাজেট বাস্তবায়নে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে। এছাড়া বাজেটে আরো পাঁচ চ্যালেঞ্জ দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রতি বছর বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করলেই হবে না- এগুলোর সমাধানের পরিকল্পনাও থাকতে হবে। তাদের মতে, মূল চ্যালেঞ্জ দুটি- ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতি; এ দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা গেলে বাকি চ্যালেঞ্জগুলোও মোকাবিলা হবে। তারা আরো বলেন, চ্যালেঞ্জ খুঁজে বের করে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জানা গেছে, গত ১০ মে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আগামী বাজেটের রূপরেখার পাশাপাশি সব ধরনের চ্যালেঞ্জ, জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিগুলো তুলে ধরা হয়। অর্থমন্ত্রণালয় আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটিয়ে রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা, বৈদেশিক ঋণের সুদ ও বিশাল ভর্তুকি ব্যয়ের টাকার সংস্থান, কর ও ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা বাড়ানো, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানো ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ মোট ৬ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে। এমন পরিস্থিতিতেও উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছেন অর্থমন্ত্রী। সরকারের বর্তমান মেয়াদের শেষ বাজেট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেই তৈরি করা হয়েছে, যা আগামী ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে উপস্থাপন করবেন।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বাজেটের চ্যালেঞ্জগুলোর একটি থেকে আরেকটি আলাদা নয়। তিনি বলেন, আমরা একদিকে বলছি- মুল্যাস্ফীতির চ্যালেঞ্জ, আবার বলছি বৈদেশিক মুদ্রার চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জও দেখছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গেলে আরেকটি চ্যালেঞ্জ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই যে একটির সঙ্গে আরেকটির সম্পর্ক- এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে ঠিক করতে হবে, কোন সমস্যাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, গত বছর বলা হয়েছিল, মূল্যস্ফীতি আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেই

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তাতে মূল্যস্ফীতিকে আরো বেড়েছে। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাজেটে অপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয় খরচ সংকোচন করে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং এর অর্থায়ন যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি- তাহলে দেখা যাবে, গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কিছুটা উদ্বৃত্ত ছিল। অথচ চলতি অর্থবছরের একই সময়ে কিছুটা ঘাটতিতে রয়েছে। গত বছর ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি অর্থায়ণ করা হয়েছে। এ বছরে বেশিরভাগ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপানোর মাধ্যমে নেয়া হচ্ছে। এ সবই মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলা নিয়ে ড. জাহিদ বলেন, এক্ষেত্রে আমরা শুধু আমদানিকে নিয়ন্ত্রণ করেছি, আসল জায়গায় হাত দেইনি। অথচ আমদানিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট তো কাটেইনি, আমরা মূল্যস্ফীতিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছি।
সাবেক এ ইকোনমিস্ট বলেন, সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সরকারি খরচ বাড়াতে হবে। খরচ বাড়লে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আরো গভীর হবে। কাজেই অবস্থা বুঝেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই চ্যালেঞ্জের লম্বা লিস্ট করলেই হবে না। এ বছর প্রধান কোন দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সেটা খুঁজে বের করতে হবে; যেগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখলে অন্য সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তিনি বলেন, আমার মতে, আমাদের চ্যালেঞ্জ দুটি। আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডলার সংকট, দ্বিতীয়টি মূল্যস্ফীতি। ডলার না থাকলে বিনিয়োগ হবে কীভাবে? সুতরাং আগে ডলার সংকট কাটাতে হবে। ডলার সংকট যদি আমরা প্রধান চ্যালেঞ্জ ধরি তবে সেই অনুযায়ী আমাদের বাজেট পলিসি তৈরি করতে হবে। এ দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলে বাকি চ্যালেঞ্জগুলোও মোকাবিলা হয়ে যাবে।
তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির কারণে দুই বছরে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছিল, তা চলতি অর্থবছরের বাজেটে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয় অভ্যন্তরীণ ডলার সংকট, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি। চলতি বছরও তার ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতির এ হারকে ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষকেরা। তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতিজনিত মানুষের যে টানাপড়েন- তা আরো কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। কারণ, আমদানিনির্ভর পণ্যের উচ্চ দাম, ডলারের বাড়তি দাম এবং শিল্প খাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এ সব সমস্যা যতদিন থাকবে; ততদিন উচ্চ মূল্যস্ফীতিজনিত চাপে থাকবেন দেশের মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) একজন বিশিষ্ট ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময়ে বাজেট আসছে। এছাড়াও এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং কোভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলোও বাজেটের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় এবারের বাজেট খুবই জটিল পরিস্থিতিতে তৈরি করতে হয়েছে। কারণ আগে দেশে আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকলেও, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে তুলনামূলক স্বস্তি থাকত। কিন্তু এবার তা নয়। তিনি বলেন, সরকারকে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং বিনিয়োগ কর্মসূচি সীমিত করতে হবে। ফলে আগামী বছরের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও পরিমিত হওয়া উচিত।
সিপিডির আরেক ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা বলছি- আমাদের বাজেটের আকার বড় হয়েছে। কিন্তু জিডিপির মাত্রায় যদি আমরা দেখি- রেভিনিউ যদি জিডিপির ৯ শতাংশ হয়, এর সঙ্গে যদি ঘাটতি যোগ করি আরো ৫-৬ শতাংশ। অর্থাৎ এটা ১৪-১৫ শতাংশের বেশি নয়। দক্ষিণ এশিয়ায় সরকারের যে ব্যয়, সে অনুযায়ী জিডিপির অংশ হিসেবে আমাদের এটা সবচেয়ে কম। সুতরাং আমাদের বাজেট প্রণেতাদের প্রথম যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়- সেটা হলো আমাদের আরো অর্থের প্রয়োজন। অর্থের সংকুলান করাটাই এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আমাদের যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ এবং সেখানে যে বিনিয়োগ, সেটা বাজেটে রাখতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। কারণ, এটি আমাদের সক্ষমতাকে হ্রাস করছে। বাজেটে আমাদের মূল লক্ষ্য হতে হবে, কীভাবে আমরা মূল্যস্ফীতিকে বাগে নিয়ে আসতে পারব। আমাদের চেষ্টা করতে হবে, কীভাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আবার আমরা ফিরিয়ে আনতে পারি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কী করা হচ্ছে, বাজেটে সেটার পরিষ্কার ধারণা তৈরি করতে হবে। তবে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বর্তমান মূল্যস্ফীতি বৈশ্বিক কারণে সৃষ্ট। সুদের হার বাড়িয়ে এর নিয়ন্ত্রণ হবে না। সরবরাহ বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাজেট হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। সেই সঙ্গে করোনার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়াই বাজেটের মূল লক্ষ্য। একই অনুষ্ঠানে অন্যে এক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। গত তিন-চার বছর ব্যক্তি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। তিনি বলেন, প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অসামঞ্জস্যতা আছে। এটি দূর করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালনাসহ অন্যান্য ব্যয়ের আকার ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন প্রকল্প এডিপির আকার ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
আসন্ন বাজেটে সম্ভাব্য ঘাটতির (অনুদান ছাড়া) অঙ্ক দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ঋণ নেয়া হবে ১ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক খাত থেকে নেয়া হবে ১ লাখ ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। এছাড়া আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উৎস থেকে (এনবিআর কর) ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, নন-এনবিআর কর ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি (এনটিআর) ৫০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
যদিও চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে, সেখানে এখনো ৩০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। আইএমএফের শর্তে জিডিপির অতিরিক্ত দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়