টিসিবির জন্য চিনি ও ভোজ্য তেল কিনবে সরকার

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কোন পথে : মূল্যস্ফীতি > ডলার সংকট > বৈদেশিক ঋণের সুদ ও ভর্তুকি ব্যয় > কর ও ব্যক্তি করদাতা বাড়ানো

পরের সংবাদ

জাহাঙ্গীরের প্রক্সি জায়েদার জয় : মোট ৪৮০টি কেন্দ্রের ফলাফলে জায়েদা খাতুন ২,৩৮,৯৩৪ ও আজমত উল্লা ২,২২,৭৩৭ ভোট

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান ও এম নজরুল ইসলাম, গাজীপুর থেকে : গাজীপুর সিটির নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ভোটে চমক দেখালেন জায়েদা খাতুন। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে রাত দেড়টায় ৪৮০টি কেন্দ্রের সব ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, ৪৮০টি কেন্দ্রের ফলাফলে টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২,৩৮,৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী নৌকা মার্কার প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২,২২,৭৩৭ ভোট।
এছাড়া মেয়র পদে ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম (রনি সরকার) হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট, মো. হারুন-অর-রশিদ ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৪২৬ ভোট, জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন লাঙ্গল প্রতীকে ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম মাছ প্রতীকে পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, জাকের পার্টির মোহাম্মদ রাজু আহাম্মেদ গোলাপ ফুল প্রতীকে পেয়েছেন ৭২০৬ ভোট।
এদিকে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জায়েদা খাতুনের ছেলে ও গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, গাজীপুরের নির্বাচনে নৌকার জয় হয়েছে, ব্যক্তির পরাজয় হয়েছে। জাহাঙ্গীর আরো বলেন, মা বলেছেন সবাইকে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের গার্ডিয়ান। দেশের উন্নয়নে তাকে সহযোগিতা করতে চাই।
জায়েদা খাতুন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের মা। রাজধানীর বাইরে সাধারণ গৃহবধূ হিসেবে জীবন কাটিয়েছেন। শেষ বয়সে ছেলে জাহাঙ্গীরের প্রক্সি হিসেবে মেয়র প্রার্থী হন তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নেমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী প্রবীণ রাজনীতিবিদ আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিদ্ব›িদ্বতা গড়ে তুলেছেন। অন্যদিকে সাধারণ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের বেশির ভাগই আওয়ামী সমর্থক প্রার্থীরা জয় লাভ করেছেন এ নির্বাচনে।
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর গতকাল তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোট নেয়া হয়। বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষ ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলেও মূল লড়াই হয় নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। এছাড়া জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির রাজু আহমেদ ও গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম। এছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ছিলেন সরকার শাহানুর ইসলাম ও হারুন অর রশিদ। অন্যদিকে, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিলে ৩২৬ প্রার্থী মাঠে ছিলেন।
দেশের সবচেয়ে বড় এই শিল্পনগরীতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ ও মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটের আগে মোট ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৫১টি কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন করে সদস্য মোতায়েন ছিল। এই নির্বাচনের ৪৮০টি কেন্দ্রের সবকটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেয়া হয়। নির্বাচনে ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করেন ১০ হাজার ৯৭০ জন কর্মকর্তা। এছাড়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট নিশ্চিতে প্রায় ১৩ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক, ভোটার এবং স্থানীয় মাধ্যমের তথ্যানুসারে, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ হয়। তবে অনেক কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের কোনো এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
এদিকে গতকাল দিনের শুরুতে ফজরের নামাজের পরপরই স্বতঃস্ফূর্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা যায়। ভোট দিতে সাধারণ ভোটারদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে নারী, বয়োজ্যেষ্ঠ ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল বেশ লক্ষণীয়। দিনের শুরুতে ইভিএমে ভোট দিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোটাররা আনন্দ প্রকাশ করলেও দুপুর গড়াতেই তা অস্বস্তিতে রূপ নেয়। এর কারণ ইভিএমের ধীরগতি। ভোট নেয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলেছেন, ইভিএম বুঝতে অসুবিধা ও অভ্যস্ত না হওয়ায় এই ধীরগতি। আবার অসংখ্য ভোটারের আঙুলের ছাপ না মেলানোও ধীরগতির আরো একটি কারণ। এছাড়া কারিগরি ত্রæটিও ধীরগতির অন্যতম একটি কারণ বলে কর্মকর্তারা জানান।
এদিকে সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রেই নৌকার মূল প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি মার্কার কোনো এজেন্ট পাওয়া যায়নি। যদিও সব কেন্দ্রেই নৌকাসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতি দেখা যায়। টেবিল ঘড়ি মার্কার এজেন্ট না থাকার বিষয়ে প্রার্থী জায়েদা খাতুন নিজেই অভিযোগ করেছেন, পাশাপাশি প্রার্থীর ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও একই অভিযোগ করেন। তারা বলেন, আমাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। হুমকি-ধমকি দেয়া হয়েছে। টেবিল ঘড়ি মার্কার এজেন্ট না থাকার বিষয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারদের বক্তব্য প্রায় অভিন্ন। তারা বলেছেন, সব মার্কার এজেন্টরা কেন্দ্রে আসলেও টেবিল ঘড়ি মার্কার এজেন্টরা আসেননি। এজেন্ট না আসলে আমাদের কী করার আছে?
বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। নির্বাচন কমিশনের মতে ৫০ শতাংশ ভোটার তাদের অধিকার প্রয়োগ করেছেন। বিকাল ৫টায় গাজীপুর নগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে ভোটের ফল আসতে শুরু করে। রাতে একের পর এক কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। সন্ধ্যার পর থেকেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন। এ সময় তাদের উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। এর আগেই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ফল প্রকাশ করেন স্ব স্ব প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। তবে ফলাফল ঘোষণার ধীরগতির জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন জায়েদা খাতুনের ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির অধ্যাপক এম এ মান্নান। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকারকে হারিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। এ জয়ের মধ্য দিয়ে জায়েদা খাতুন হতে যাচ্ছেন এই সিটির প্রথম নারী মেয়র। জায়েদার এই জয়ের পেছনে তার ছেলে জাহাঙ্গীরের ঈর্ষান্বিত জনপ্রিয়তাই মুখ্য ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের জয়জয়কার : এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়ের পাল্লা বেশি। প্রসঙ্গত, ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত। এর মধ্যে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রমিক দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ সরকার সাধারণ কাউন্সিলর পদে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হন। বাকি ৫৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৪৭ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। যদিও নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচন করায় বিএনপি ২৯ জনকে কাউন্সিলর প্রার্থীকে বহিষ্কার করে। এ পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও প্রচার-প্রচারণায় দলীয় পরিচিতিই বড় হয়ে উঠে। এছাড়া সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডে ৭৯ জন নারী কাউন্সিলর প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়