টিসিবির জন্য চিনি ও ভোজ্য তেল কিনবে সরকার

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কোন পথে : মূল্যস্ফীতি > ডলার সংকট > বৈদেশিক ঋণের সুদ ও ভর্তুকি ব্যয় > কর ও ব্যক্তি করদাতা বাড়ানো

পরের সংবাদ

নিষেধাজ্ঞা নয়, হুঁশিয়ারি : সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে মার্কিন ভিসানীতি, সরকার-বিরোধী দল উভয়পক্ষের জন্যই সুস্পষ্ট বার্তা

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দেখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছে দেশটি। বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে একের পর এক গোপন ও প্রকাশ্য বৈঠক করেছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তাদের প্রত্যাশার কথা। সবশেষ গত বুধবার এ লক্ষ্যে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার দেশ। এই ভিসানীতি অনুযায়ী- সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করলে অভিযুক্ত ব্যক্তি মার্কিন ভিসা পাবেন না। এরপরই দেশজুড়ে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় নানা তুমুল বিশ্লেষণ। তবে এটা স্পষ্ট- নতুন মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এটা রাজনৈতক দল, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি সুস্পষ্ট হুঁসিয়ারি। তবে বাংলাদেশে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিয়ে যে যার মতো ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। যদিও নির্বাচন নিয়ে মার্কিন হুঁশিয়ারি কার্যত কার পক্ষে বা বিপক্ষে গেল- তা নিয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য দেননি কেউ। সব মিলিয়ে কূটনীতিতে এক প্রকার ‘চাপ’ ও নানা ধরনের ‘যোগবিয়োগ’ নিয়েই দিন পার করল বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশ কিছু দিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল- বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নতুন পদক্ষেপ আসছে। এমন প্রেক্ষাপটেই এলো বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা। আগের দিন রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টুইট বার্তায় নয়া ভিসানীতি ঘোষণা করেন। এর পরদিন সকালেই বাংলাদেশ বিবৃতি জারি করেছে। এত দ্রুত বিবৃতির জারির মধ্যেই ‘চাপ’ লুক্কায়িত ছিল বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়াও নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সরকারের ওপর ন্যস্ত হওয়ার কারণে এই ঘোষণা তাদের জন্য এক প্রকার চাপ। যদিও ভিসানীতির ঘোষণায় সরকার ও বিরোধী পক্ষ উভয়ের কথাই স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে। এতে বলা হয়- কোনো বাংলাদেশি যদি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়; তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। এর আওতায় পড়বেন বর্তমান এবং সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরা। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে শুধু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করায় খানিকটা স্বস্তি বোধ করছে বাংলাদেশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা নীতি আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়। আমাদের দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু নির্বাচন করা। এ জন্য যা যা দরকার আমরা তা করব। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, এই ভিসা নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো দুটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে- প্রথমত, যারা ইতিবাচকভাবে বা স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে তাদের এই ভিসানীতি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দ্বিতীয়ত, যারা এই প্রক্রিয়াকে যে কোনোভাবে ব্যাহত করার চেষ্টা করবে- ভোট প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি ও কারচুপির মতো কাজ দিয়ে- তারা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা ভিসার জন্য বিবেচিত হবেন না। এর মাধ্যমে তারা যে বার্তা দিতে চেয়েছে তা হলো, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা স্বাভাবিক গতিতে চলার জন্য যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাহলে তিনি যেই হোন না কেন, তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক অবস্থান থাকবে। এই ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই- এমন মন্তব্য করে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, বাংলাদেশের ভেতরে যেমন এই বিষয়টা নিয়ে কথা হচ্ছে; তেমনি বাংলাদেশের বন্ধু বা সহযোগী যারা আছেন তারাও এই ব্যাপারটাতে বেশ চিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন কিছুদিন যাবত। প্রায় সবাই এটা নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। জাতিসংঘও এটা তুলে ধরেছে। তবে বিষয়টা নিয়ে সবার মধ্যেই স্বাচ্ছন্দ্যহীনতা ও উৎকণ্ঠা আছে সেটা তো আমরা বুঝতেই পারছি।
নিষেধাজ্ঞা নয় : গত বুধবার মধ্যরাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেনের ওই টুইট বার্তার পর তাৎক্ষণিক

প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মার্কিন সরকার ঘোষিত নতুন ভিসা নীতি বাংলাদেশ সরকারকে মোটেও বিচলিত করছে না। কারণ সরকার জনগণকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, এটি কোনো ধরনের স্যাংশন নয়। এই ব্যাপারে বরং বিএনপির উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। গতকাল সকালেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের নয়া ভিসানীতি সম্পর্কে বিবৃতি জারি করে। এতে বলা হয়, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের অঙ্গীকারের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক ও ভোটাধিকারের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ভোট কারচুপির মাধ্যমে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকার নজির নেই। জনগণের ভোটাধিকারকে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় পবিত্রতা বলে মনে করে। এই অধিকারের জন্য সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ ও বৈধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য সংগঠন ও সভাসমাবেশের স্বাধীনতাকে সরকার গুরুত্ব দেয়।
বিরোধী দলের জন্যও প্রযোজ্য : এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন ভিসা নীতির কথা ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে শুধু সরকারি দল বা কর্মকর্তা নয়; বরং বিরোধী দলের কেউ সহিংসতা বা ভোটারদের ভয় দেখালে সেই ব্যক্তিও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না বলে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশিদের কীভাবে এই নীতির আওতায় আনা হবে- জানতে চাইলে লু বলেন, এই নীতি সরকার ও বিরোধী দল সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, সামনের নির্বাচনে যদি আমরা দেখি যে, বিরোধী দলের কেউ সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছেন বা ভোটারদের ভয় দেখিয়েছেন, তাহলে সেই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না। তিনি বলেন, একইভাবে যদি আমরা দেখি- সরকারের বা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কেউ ভোটারদের ভয় দেখায় অথবা সহিংসতায় জড়ায় অথবা বাকস্বাধীনতাকে অগ্রাহ্য করে, তবে সেই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
কাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে : নতুন বিধিনিষেধ কার বা কাদের জন্য প্রযোজ্য হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকার দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, এ নীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্য অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারের সমর্থক এবং বিরোধীদলীয় সদস্যরা এর অন্তর্ভুক্ত। এমনকি এ ধরনের ব্যক্তিদের নিকটতম পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। নিকটতম পরিবারের সদস্য হিসেবে মা, বাবা, স্ত্রী ও সন্তানদের বোঝানো হয়ে থাকে বলে দূতাবাসের কনস্যুলার সেবায় জড়িত এক কর্মকর্তা জানান। তবে এখনই এই নীতিমালার আওতায় কোনো ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেমনটা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারকে আমরা স্বাগত জানাই। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কেন এত চিন্তিত- এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র সর্বত্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করার অঙ্গীকার করেছেন। এই নীতিটি সেই প্রচেষ্টাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করার জন্য প্রণীত হয়েছে- যাতে তারা তাদের নেতা বেছে নেয়ার জন্য নির্বাচন করতে পারে। এই বিধিনিষেধ সরকার বা আওয়ামী লীগের দিকে নির্দেশ করছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে- না; যুক্তরাষ্ট্র কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এই নতুন নীতির অধীনে বিধিনিষেধগুলো সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে সেইসব ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে পরিচালিত- যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন আচরণে/ কর্মকাণ্ডে জড়িত। উচ্চ স্তরের আদেশ অনুসরণ করে যারা অপরাধ করে, তাদের জন্য ভিসা বিধিনিষেধ কীভাবে প্রযোজ্য হবে? আদেশ পালনকারীদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের যুক্ততার বিষয়টি যদি কঠিন হয় তবে কী হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য। এই বিধিনিষেধ ১৪ মে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা হ্রাসের ঘোষণার প্রতিশোধ কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গত ৩ মে এই নীতিগত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাদের অবহিত করেছি।
মোমেনকে ব্লিঙ্কেনের চিঠি : বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না- এমন নীতি প্রণয়নের আগে সরকারকে গত ৩ মে জানিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। এ কথা সরকার এত দিন কেন জানাল না- এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, তাদের নীতি আমরা জানাব কেন? গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তাকে একটি ‘অপূর্ব’ চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে তিনি নতুন ভিসা নীতির কথা জানিয়েছিলেন। সেখানে ব্লিঙ্কেন বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করতে এই নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যারা বাধা দেবে তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা চাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্যে তা জোরালোভাবে এসেছে। এই ঘোষণার মাধ্যমে তিনি আশা প্রকাশ করেন, যেসব দল সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, তারা সতর্ক থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা কোনো বাড়তি চাপের মধ্যে নেই এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক চমৎকার। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান এবং এই নীতি তার অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে। মন্ত্রী আরো বলেন, এই নীতি সরকারের ওপর বাড়তি চাপ না। তারা তাদের কাজ করেছে। আমরা আমাদের কাজ করব।
রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে দেখছে : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তাদেরও চাওয়া। এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের আমরা অবশ্যই প্রতিহত করব। বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, নতুন ভিসা নীতি নিয়ে আমেরিকা যে ঘোষণা দিয়েছে সেটি নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং সরকার চিন্তিত নয়। স্যাংশন কারো ওপর তো দেয়নি। কেউ যদি করে তখন দেবে। আমাদের অবস্থান খুবই সুস্পষ্ট। কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেটা সঠিক নয়; সেটা করব না। এমন কিছু করব না যাতে আমাদের কেউ তাদের ভিসা থেকে বঞ্চিত হয়। তিনি বিষয়টিকে শুধু সরকারের প্রতি বার্তা হিসেবে দেখছেন না। তিনি মনে করেন এখানে বিরোধী দলের জন্যও বার্তা রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মনে করেন, এই মুহূর্তে অন্তত এ ধরনের একটি পদক্ষেপ বাংলাদেশে আগামী সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এর মাধ্যমে সব কিছু হবে তা নয়, তবে এটা একটা সিগন্যাল, একটা মেসেজ- বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে পারছে না। বিএনপির আরেক নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই বিবৃতিটি দেখেছেন তারা। তবে এ বিষয়ে ব্যক্তিগত কোনো মত দিতে চাননি তিনি। এটা আমরা দলে আলোচনা করব। পরে এটা আমরা কীভাবে দেখছি সেটা প্রকাশ করব। নতুন ভিসা নীতি প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসনকে যারা নষ্ট করেছে, এটা তাদের জন্য বড় নিষেধাজ্ঞা। দেশের বাইরে-ভেতরে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বহির্বিশ্ব থেকে সরকারকে সতর্ক করেছে। কিন্তু সরকার তো কারও কথা শুনছে না। তারা তাদের দৌরাত্ম্য ও লম্ফজম্প অব্যাহত রেখেছে। সুতরাং, যে জিনিসটা এসেছে, সেটা তাদের শেষ পরিণতির পূর্বমুহূর্ত বা লক্ষণ। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় সে কারণেই তারা ভিসানীতি ঘোষণা করেছে, এটা বোঝা গেছে। এ ব্যাপারে আমাদের দলও একমত। আমরা বলেছি, মার্কিন সরকার যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়