টিসিবির জন্য চিনি ও ভোজ্য তেল কিনবে সরকার

আগের সংবাদ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কোন পথে : মূল্যস্ফীতি > ডলার সংকট > বৈদেশিক ঋণের সুদ ও ভর্তুকি ব্যয় > কর ও ব্যক্তি করদাতা বাড়ানো

পরের সংবাদ

ইভিএমে ভোট দিয়ে সবাই খুশি : কেন্দ্রে যাওয়ার আগে অজানা শঙ্কা

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান, গাজীপুরের কাশিমপুর ও শ্রীপুর থেকে ফিরে : রাজধানীর পাশের শিল্পনগরী গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক) নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিয়ে খুশি সববয়সি ভোটাররা। আদৌ ভোট দিতে পারবেন কিনা? এমন অজানা শঙ্কা নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিয়ে উচ্ছ¡াস প্রকাশ করেছেন সবাই। ব্যালটের বাইরে এ ধরনের পদ্ধতির সঙ্গে তারা আগে পরিচিত না থাকলেও আধুনিক এই পদ্ধতিতে ভোটাররা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন। কোনো কেন্দ্রের গোপন কক্ষেই ভোটার ছাড়া অন্য কারো উপস্থিতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এইচ এম কামরুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে ও কক্ষে একটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য পাঁচ হাজার ২৪৬টি ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইভিএমে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধানের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে মোট ৪৮০ জন ট্রাবলশুটার, প্রতি দুই কেন্দ্রে একজন করে মোট ২৪০ জন (ভ্রাম্যমাণ) টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ১৪ জন সহকারী প্রোগ্রামার এবং চারজন প্রোগ্রামার রয়েছে।
সারদাগঞ্জের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেরিগোল্ড হাইস্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রের ট্রাবলশুটার (টিএস) সুমন দাস ভোরের কাগজকে বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে টিএস রয়েছে। এছাড়া তিনটি ওয়ার্ড মিলিয়ে রয়েছে একটি ভ্রাম্যমাণ টিম। মূলত বাটনে চাপ দিয়ে ধরে রাখলে মেশিনে সমস্যা হয়। অনেকে না বুঝে চাপ দিয়ে ধরে রাখেন। বিশেষ করে লাল বাটনে চেপে ধরে রাখলে মনিটর সাদা হয়ে যায়। বয়স্করা এমনটা বেশি করছেন। তবে তা সমাধান করতে অল্প সময় লাগছে তার। প্রতিটি মেশিন ১২ ঘণ্টা চার্জ থাকে। তাই বিদ্যুৎ না থাকলেও ভোট বন্ধ হবে না। যারা এটা বুঝে ভোট দিচ্ছেন তাদের সময় খুবই কম লাগছে। টিএসরা সমস্যা সমাধান না করতে পারলে ভ্রাম্যমাণ টিমের ডাক পড়ছে।
গাসিকের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিমপুরে সিনকাপ প্রি-ক্যাডেট স্কুল কলেজ কেন্দ্রে সকাল ১০টা আট মিনিটে ভোট দেন গার্মেন্টসকর্মী মর্জিনা বেগম (৩২)। কেসি গার্মেন্টের এই কর্মী একমাত্র মেয়ে সোহানাকে (৬) সঙ্গে নিয়ে ৮ নম্বর কক্ষে ঢুকেন। মাত্র এক মিনিটে ভোট দিয়ে বের হন তিনি। পরে এ প্রতিবেদককে বলেন, কোনো ঝামেলা নেই। প্রতীকের পাশের সবুজ বোতামে টিপ দিয়ে

তিনি পর পর তিনটি ভোট দিয়েছেন (মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর)। তার মতো খুশি পঞ্চাশোর্ধ হালিমা বেগমও। নারী ভোটারদের এই কেন্দ্রে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন ছিল বলে জানান কর্তব্যরত পুলিশের এসআই মাসুদ। প্রিসাইডিং অফিসার তরিকুল ইসলাম সেগুন জানান, ৮টি কক্ষের কোনটিতে ইভিএম মেশিনে সামান্য ত্রæটি হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তা ঠিক করা যাচ্ছে। বয়স্করা একটু সময় বেশি নেন। অনেকে বুঝেন না, লাল সবুজ বোতামে উল্টাপাল্টা চাপ দিলে বিপত্তি হয়। এই কেন্দ্রের কোনো বুথে নৌকা প্রতীক ছাড়া অন্য কোনো মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়নি। লাঙল প্রতীকের একজন এজেন্ট সকালে গেলেও পরে ঘুরতে বের হয়ে যান। ওই কেন্দ্রে ২ হাজার ৭৯৭ জন ভোটারের মধ্যে প্রথম দুই ঘণ্টায় ২৩০ জন ভোট দিয়েছেন। লতিফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ২৮৮ জন পুরুষ ভোটার। ১০ বুথে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন ছিল সকাল থেকেই। গার্মেন্টকর্মী ফরিদুল ইসলাম ইভিএমে ভোট দিয়ে এ প্রতিবেদককে জানান, লাইনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও গোপন কক্ষে তার দুই মিনিট লেগেছে ভোট দিতে। কারো সহায়তা ছাড়াই তিনি একাই ভোট দিতে পেরেছেন। সারদাগঞ্জের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেরিগোল্ড হাইস্কুল এন্ড কলেজে নারী ভোটারদের দুটি কেন্দ্র। রোদের মধ্যেও ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা ভোটারদের কাছে লাইন ধরে ভোট চাইলেও মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে শুধু নৌকার সমর্থকরা ছিলেন। প্রিসাইডিং অফিসার নেওয়াজ শরীফের কক্ষের সামনে চেয়ারে বসে থাকা মারিয়া আক্তার মিম দুপুর ১২টায় জানান, সকাল ৯টায় জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে এলেও কেন্দ্র্রের বাইরে প্রার্থীদের লোকজন যারা ভোটার নম্বর সরবরাহ করেন তারা বলছেন, তার ভোট হয়নি। এনআইডিতে তার জন্ম ২০০৫ সালের ১১ মে। জন্ম সনদে মীমের বড়ভাই মেহেদী হাসান হাসিবের জন্ম ২০০০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। ভোটার তালিকায় তারও নাম নেই। মীম প্রসঙ্গে প্রিসাইডিং অফিসার বলেছেন, তার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। ওই কেন্দ্রে ১২টা পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
গাজীপুরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে সিটি নির্বাচনের ভোট দিতে যান ষাটোর্ধ্ব হযরত আলী। ইভিএমে আঙুলের ছাপে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করে ভোটকক্ষেও ঢোকেন। কিন্তু ভোট দিতে লাল সবুজ কোন বোতামে চাপ দেবেন বুঝতে পারছিলেন না। তিনবার তিনি ছুটে আসেন নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে। কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টরা তাকে ভোট দেয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিলে পরে ভোট দিয়ে খুশি ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের এই ভোটার। একই কেন্দ্রে ৬৮ বছর বয়সি মোক্তার হোসেন একবারের চেষ্টাতেই ভোট দিতে পেরেছেন।
এদিকে বয়স্করা একটু সমস্যায় পড়লেও তরুণরা ছিলেন বেশ এগিয়ে। মূলত যারা এনড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন তাদের লাল সবুজের বাটন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। ১৯ বছর বয়সি সুরভী আক্তার জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছেন। উত্তরা ইউনাইটেড কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, ইভিএম নিয়ে অনেক আগ্রহ ছিল। গোপন কক্ষে ঢুকে মুহূর্তে বাটন চেপে ভোট দিয়েছি। তার কাছে এভাবে ভোট দেয়া খুবই সহজ।
প্রসঙ্গত, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি। ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪৮০ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৩ হাজার ৪৯৭ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, ৬ হাজার ৯৯৪ জন পোলিং অফিসারসহ ১০ হাজার ৯৭১ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়