স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত না হওয়ায় স্কুলছাত্র সিয়াম খুন : পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার দুই

আগের সংবাদ

উৎসব-উৎকণ্ঠার ভোট আজ : কে হচ্ছেন গাজীপুরের নগরপিতা, ৪৮০ ভোটকেন্দ্রের ৩৫১টিই ঝুঁকিপূর্ণ, লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

পরের সংবাদ

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন ভিনি

প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : বর্ণবাদের বিষয়টি ইউরোপে নতুন নয়। আগে তুলনামূলক কম হলেও এখন সামান্য ঘটনাতেই বর্ণবাদের শিকার হন অনেকে। এই রেশ ছড়িয়ে পড়েছে ফুটবলেও। সম্প্রতি ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে বর্ণবাদের শিকার হন রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়াস জুনিয়র। গ্যালারি থেকে তাকে বানর বলে কটূক্তি করার পাশাপাশি মৃত্যুও কামনা করা হয়। এর আগেও একাধিকবার বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন তিনি। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে ফুটবল বিশ্বে। ফিফা সভাপতি থেকে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, সাবেক ও বর্তমান তারকাদের অনেকে ভিনির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বর্ণবাদ নিয়ে ভিনির বোমা বিস্ফোরণের পর সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, স্পেনের পুলিশ এ ঘটনায় গতকাল তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে।
বর্ণবাদের শিকার হওয়ার পর মাঠেই কান্না করতে দেখা যায় ভিনিকে। এজন্য খেলাও বন্ধ হয় কয়েকবার। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। নিজের এই কথা প্রমাণ করতে ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন ভিনি। সে ভিডিওতে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বর্ণবাদী আচরণের ঘটনাগুলো একত্র করার চেষ্টা করেন তিনি। ভিডিও পোস্ট করে তার নিজের মনের কথাগুলোও লিখেছেন ভিডিওর পাশে। তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বর্ণবাদী আচরণের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি লেখেন, ‘প্রতিটি অ্যাওয়ে ম্যাচই একেকটা বিস্ময়। এটা অনেক মৌসুম ধরে চলছে। হত্যার হুমকি, পুতুল টানিয়ে রাখা, অনেক অপরাধমূলক স্লোগান… সবকিছুই লেখা আছে।’
এই মৌসুমেই সাতবার বর্ণবাদের শিকার হন ভিনিসিয়াস। কখনো তাকে বানর বলা হয়, কখনো বা মরো বলে চিৎকার করা হয়। এছাড়া ভিনিসিয়াসের জার্সি পরা পুতুলকে ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখার ছবিসহ ব্যানারও দেখা যায় গ্যালারিতে। পত্রপত্রিকায়ও এসব প্রকাশিত হলেও শেষ পর্যন্ত কারো শাস্তি হয়নি। নতুন করে এই ঘটনা ঘটায় লা লিগার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে ম্যাচের সব ছবি ও ভিডিও নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে ঘৃণিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে নেয়া হবে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা। ভিনি প্রতিটি ঘটনাতেই প্রতিবাদ জানান। প্রতিবারই পাশে পেয়েছেন অনেককেই। তবে এখনো ভেঙে পড়েননি তিনি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এ রকম অবস্থা থেকে বাঁচাতে লড়াই চালিয়ে যাবেন বলেও জানান ভিনি। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাসে ব্রাজিল ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য জায়গা থেকে আমার প্রতি ভালোবাসা ও সমর্থনের যে স্রোত দেখেছি, তাতে আমি মুগ্ধ। আমি একদম পরিষ্কারভাবে জানি যে, কে কেমন। আমার প্রতি ভরসা রাখুন, কারণ ভালোদের সংখ্যাই বেশি এবং লড়াইয়ে আমি হাল ছাড়ব না। আমার জীবনে একটি লক্ষ্য আছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন এ রকম অবস্থার মধ্য দিয়ে না যেতে হয়, সেজন্য লড়াইয়ে আমাকে আরো অনেক ভুগতে হলেও আমি তৈরি ও প্রস্তুত।’
ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে বর্ণবাদের শিকার হয়ে এবং প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের আক্রমণের শিকার হয়ে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল ভিনিসিয়াসকে। এটাই এই ব্রাজিলিয়ান তারকার প্রথম সরাসরি লাল কার্ড দেখা। ম্যাচ শেষে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি লেখেন, ‘এবারই প্রথম নয়, নয় দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার। বর্ণবাদ এখন লা লিগায় নিয়মিত ঘটনা। এই প্রতিযোগিতায় এটা একদম স্বাভাবিক হয়ে গেছে। স্প্যানিশ ফেডারেশনও এটাকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নিয়েছে এবং প্রতিপক্ষরা এটায় উৎসাহ দেয়। যে লিগ একসময় রোনালদিনহো, রোনাল্ডো, ক্রিশ্চিয়ানো (রোনালদো) এবং লিওনেল মেসির ছিল সেই লিগ এখন বর্ণবাদীদের দখলে চলে গেছে। সুন্দর একটি জাতি, যারা আমাকে স্বাগত জানিয়েছিল, আমি যাদের ভালোবেসেছি, তারাই এখন বর্ণবাদী জাতি হিসেবে বিশ্বে নিজেদের তুলে ধরছে।’
বর্ণবাদের শিকার হওয়ার পর ভিনি পাশে পেয়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইফান্তিনো, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা, রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি, বার্সেলোনা কোচ জাভি হার্নান্দেজ, পিএসজি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পেসহ আরো অনেককেই। তারা সবাই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। ভিনিসিয়াসকে রক্ষা করতে ও বর্ণবাদী আক্রমণ বন্ধ করতে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান লুলা। এমবাপ্পে টুইট করে লেখেন, ‘ভিনি তুমি একা নও।’ জাভিও বার্তা দিয়েছেন ভিনিসিয়াসের পাশে থেকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাওয়ার।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানো স্টেডিয়ামের বাইরে ভিনিসিয়াসের নাম ধরে বর্ণবাদী গান ধরেছিল আতলেতিকো মাদ্রিদের সমর্থকরা। ম্যাচের সময় গ্যালারি থেকেও তাকে বর্ণবাদী গালি দেয়া হয়। ওই ম্যাচের আগে তার গোল উদযাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন স্প্যানিশ ফুটবল এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি পেদ্রো ব্রাভো। শুধু ভিনি একা নন, ইউরোপে এর আগে বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন আরো অনেক ফুটবলার। গত বছর কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে পেনাল্টি মিস করায় ফ্রান্সের রোনাল্ড কোম্যান ও আরেলিয়ে শুয়ামেনিও বর্ণবাদের শিকার হন। এর আগে ইউরো কাপের ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করেন ইংল্যান্ডের বুকায়ো সাকা, মার্কাস রাশফোর্ড, জর্ডান সানচো। তারাও বর্ণবাদের শিকার হন। বর্ণবাদী আচরণে টিকতে না পেরে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে আগেই বিদায় বলে দিয়েছিলেন জার্মানির মেসুত অজিল। ইউরোপে খেলতে গিয়ে বর্ণবাদের শিকার হওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন রোমেলু লুকাকুও। ফ্রান্স ও রিয়াল মাদ্রিদের স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাও শিকার হয়েছেন এ ধরণের আচরণের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়