বঙ্গবাজার ও ঢাকা ট্রেড সেন্টারে অবৈধ বরাদ্দ : শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আফজালের বিরুদ্ধে

আগের সংবাদ

যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ : এনইসি সভায় ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

পরের সংবাদ

সিলেট সিটি নির্বাচন : হিসাব মেলাচ্ছেন আরিফ > নগরবাসীর চোখ ২০ মের দিকে

প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ১১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সিলেট অফিস : সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে এখনো নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেননি বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। ফলে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খোদ ভোটাররা। আরিফের এমন লকোচুরিকে তারা কৌশল বলেই মনে করছেন।
রাজনীতির মাঠে পাকা খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত আরিফ শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করেন নগরের বিশিষ্টজনেরা। কারণ আরিফ বরাবরই সুকৌশলী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও তিনি শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ এনে নগরীতে কাজ করার চেষ্টা করেছেন। যদিও অনেকের অভিযোগ, তিনি কখনো সরকারের এই বরাদ্দের কথা স্বীকার করতে রাজি হননি।
এদিকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে কঠোর অবস্থানেই রয়েছে বিএনপি। এ পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দোটানায় আছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের দুবারের নির্বাচিত মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। প্রার্থিতার বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেননি। আগামী ২০ মে জনসভার মাধ্যমে তিনি নিজ অবস্থান ঘোষণা করবেন।
তবে এর ফাঁকে ৩টি হিসাব মেলাচ্ছেন আরিফ। প্রথমত, দলের বিরোধিতা করে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলে বিএনপির রাজনীতিতে পুনরায় ফিরতে পারবেন কি না। দ্বিতীয়ত, সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রভাবিত করার চেষ্টা থাকবে কিনা। তৃতীয়ত, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় আরিফুল সমর্থিত দলীয় নেতাকর্মীর প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে শঙ্কা আছে। নির্বাচনে তারা এজেন্টের দায়িত্বও পালন করতে পারবেন না। এতে ৪২টি ওয়ার্ডের মোট ১৯০টি কেন্দ্রে বিশ্বস্ত এজেন্ট পাওয়া দুষ্কর। মূলত, এই তিন হিসাবের সমীকরণ তিনি ইতিবাচকভাবে মেলাতে পারলেই নির্বাচনে যাবেন, নতুবা প্রার্থী হবেন না। বিএনপির একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছে, আরিফুল বিএনপির মনোনয়নে মেয়র হয়েছেন। এখন

তিনি যদি প্রার্থী হন, তাহলে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন কিছুটা প্রশ্নের মুখে পড়বে। তাই আরিফুল যেন প্রার্থী না হন, এ জন্য বিএনপির ভেতর থেকে তীব্র চাপ আছে। অন্যদিকে, সরকার চাইছে আরিফুল নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করুন। এতে একদিকে যেমন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির জন্য এটি একটি বিরাট ধাক্কা হবে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ।
গত ১ মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নিজের প্রার্থিতার বিষয় স্পষ্ট না করলেও সিলেটের প্রেক্ষাপটে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। এ সময় তিনি বলেন, ২০ মে বেলা আড়াইটায় নগরের রেজিস্ট্রারি মাঠে ৪২টি ওয়ার্ডের বাসিন্দা, দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জনসভা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। জনসভা করে সিদ্ধান্ত জানানোর খবর চাউর হতেই আরিফুলের পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। তিনি নির্বাচন করবেন কি না, এ নিয়েও সংশয় দেখা দেয় তার কর্মী-সমর্থকদের মনে।
নগরের রাজনীতিসচেতন একাধিক ব্যক্তি বলছেন, আরিফুল প্রার্থিতার বিষয়ে ‘রহস্য রাখায়’ দ্বিধাদ্ব›দ্ব তৈরি হয়েছে। প্রার্থিতার বিষয়টি ‘এত নাটকীয়ভাবে’ ঘোষণার কী আছে এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে নগরবাসীর চোখ এখন ২০ মে’র দিকে।
২০ মে আরিফুল নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিন- এমনটা প্রত্যাশা করেন নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আবদুল করিম চৌধুরী কিম। তিনি বলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরী দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার অনেক কাজ এখনো বাকি। এই মহানগরের কার্যক্রমের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের একটা সংশ্লিষ্টতা আছে। এ অবস্থায় তিনি নির্বাচনে আসবেন না- এটা আমি কোনোভাবেই মনে করি না। যেহেতু তিনি সিলেট নগরের মানুষের জন্য কাজ করছেন, তাই মনে করি, অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য সিটি নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়া উচিত।’
আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঈদের পর থেকেই আরিফুল বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। বিশেষ করে নগরের বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডের ভোটারদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছেন। নগরের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধি, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতা, বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর এবং বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে প্রায় সবাই তাকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন।
একই সূত্র বলেছে, আরিফুল বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে জয় অনেকটা নিশ্চিত থাকা সত্ত্বেও দলের সিদ্ধান্ত মেনে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন না। এ জন্য দলে তাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে বসানোর সম্ভাবনা আছে। তাই নির্বাচন করবেন কিনা, সেটা সব বুঝেশুনে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। ফলে, ২০ মে’র আগে অন্যদের এ বিষয়ে ধারণা করা একটু কঠিন। শেষ পর্যন্ত আরিফ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনেই যাচ্ছে না। আরিফুল হক চৌধুরী যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মানুষ, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, তাই তিনি নিশ্চয়ই দায়িত্বশীল সিদ্ধান্তই নেবেন।
যোগাযোগ করলে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হব কিনা, এ নিয়ে ২০ মে’র আগে কিছু বলতে চাই না। ওই দিনই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করব।’ কিন্তু এই সিদ্ধান্ত জানাতে এতটা সময় নেয়ার কারণ কী, এ প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘৪২টি ওয়ার্ডে আমার কর্মী-সমর্থক-ভোটারদের সঙ্গে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছি। তাদের পরামর্শ নিচ্ছি। তাদের পরামর্শের আলোকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব।’
এদিকে মেয়র পদে আরিফুল হকের বিষয়টি স্পষ্ট না হলেও বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের পদধারীসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী কাউন্সিলর পদে মাঠে রয়েছেন। তারা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। অনেকেই দলের কঠিন সিদ্ধান্তকেও তেমন আমলে নিচ্ছেন না। ৪২টি ওয়ার্ডে কমপক্ষে শতাধিক নেতানেত্রী প্রার্থী হওয়ার তালিকায় রয়েছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ থেকে ৫ জন পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছেন বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়