সিজার হত্যায় গ্রেপ্তার ৬ : অটোরিকশা ছিনতাই করা তাদের পেশা

আগের সংবাদ

বৃষ্টি ও জোয়ারের অপেক্ষায় হালদা নদীতে মাছের পোনা সংগ্রহকারীরা

পরের সংবাদ

বঙ্গবাজার ও ঢাকা ট্রেড সেন্টারে অবৈধ বরাদ্দ : শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আফজালের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মে ১০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ও গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টারে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দোকান বরাদ্দ দিয়ে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে। সেইসঙ্গে ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার পর মার্কেট কমিটিতে আর নির্বাচন না দেয়া, পছন্দের লোককে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মার্কেট দুটিতে অবৈধভাবে দোকান বরাদ্দ দেয়া, বঙ্গবাজারে বহুতল ভবন করতে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো, আগুনে পুড়ে যাওয়া টিন ও লোহার সামগ্রী টেন্ডার ছাড়াই অর্ধেকের কম দামে বিক্রির অভিযোগও এনেছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, তাদের কাজে বাধা দিলে মারধর এবং নিয়মিত হত্যার হুমকি ও দোকান দখল করে নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে এ অভিযোগ করেন মো. কামাল হোসেন রিপন নামে এক ব্যবসায়ী। এ সময় বঙ্গবাজারের আরো কয়েকজন ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই প্রশ্ন তোলেন- বঙ্গবাজারে এমপি আফজালের দাপট আর কত দিন চলবে? তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ী মো. কামাল হোসেন রিপন বলেন, গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স আলাদা দুটি মার্কেট হলেও কমিটি একটি। ডিএসসিসির মালিকানাধীন ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেট করার উদ্যোগ নেয়া হলে মার্কেট কমিটির তখনকার সাধারণ সম্পাদক এমপি আফজাল হোসেন ও সিটি করপোরেশনের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী কমপ্লেক্সটি যত্রতত্রভাবে নির্মাণ করে দোকান বরাদ্দ দেয়া শুরু করে। তখন মার্কেটের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা, লিফট ও সিঁড়ির জায়গায় অবৈধভাবে ৫২৫টি দোকান করে প্রতি দোকান থেকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা করে মোট শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে পেরে না উঠায় ২০১২ সালে আমি (রিপন) হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করি- যা আমলে নিয়ে আদালত রুল জারি করে নিষেধাজ্ঞা দেন। আদালতের ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়। নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের হকার বানিয়ে ৪টি দোকান বরাদ্দ নিয়েছিলেন এমপি আফজাল নিজেও। পরে কমিটির এ ধরনের অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে ডিএসসিসি ও তৎকালীন যুগ্ম শ্রম পরিচালককে জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমি সংবাদ সম্মেলন (২০১৩ সালে) করায় আমাকে জীবন নাশের হুমকি দেন এমপি আফজাল। বিভিন্ন সময় দেয়া হুমকির ভিত্তিতে আমি তার বিরুদ্ধে আদালতে ৩টি মামলা দায়ের করি। ওই মামলাগুলোতে মুচলেকা দিলেও থেমে থাকেনি হুমকি। পরে নিরুপায় হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দেই।
মো. কামাল হোসেন রিপন বলেন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ও ঢাকা ট্রেড সেন্টারসহ মোট ৬টি মার্কেট এমপি আফজালের দখলে। শুধু ঢাকা ট্রেড সেন্টার নয়, বঙ্গবাজারের বিভিন্ন খালি জায়গায় অবৈধভাবে ৪ শতাধিক দোকান বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। বর্তমানে সরকারি আইন অনুযায়ী কোনো এমপি-মন্ত্রী কোনো স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও মার্কেটের পরিচালনা কমিটিতে থাকতে পারবেন না। এজন্য ২০২১ সালে নিজের ঘনিষ্ঠ লোক জহির মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদে বসিয়ে অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। সবশেষ বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া ২-৩ কোটি টাকার মালামাল কোনো টেন্ডার ছাড়াই মাত্র ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এর প্রতিবাদ করায় গণমাধ্যমের সামনেই আমাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় প্রায় একমাস হতে গেলেও এখনো মামলা নেয়নি পুলিশ।তিনি আরো বলেন, বঙ্গবাজারের নিচতলায় ২০০৯ নম্বর দোকান আমার মৃত মা জরিনা বেগমের নামে বরাদ্দকৃত। এছাড়াও ২য় তলায় ৩টি দোকান ভাড়া নেয়া। এমপি আফজাল ও জহির মিয়া আমাদের দোকানের ভেতর আরেকটি দোকান বসিয়ে ৮৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। পরে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করি আদালতে। ওই মামলা চলমান রয়েছে। এভাবে দোকান বরাদ্দ দিতেই বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ভেঙে ১০ তলা নতুন ভবন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেখানে বাড়তি প্রায় ২ হাজার দোকান ঘিরে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন এমপি আফজাল। যা ব্যবসায়ীরা বুঝতে পেরে আদালতে রিট করেন।

পরে আদালতের স্থগিতাদেশে বঙ্গবাজার ভাঙা সম্ভব হয়নি। এজন্যই পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবাজারে আগুন লাগিয়েছে এমপি আফজাল ও তার শুভাকাক্সক্ষী মহল।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে এমপি আফজাল হোসেনের একাধিক নাম্বারে ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়