মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে রাজাকার যুদ্ধাপরাধী মতিন গ্রেপ্তার

আগের সংবাদ

গ্যাস লাইন ঝুঁকিমুক্ত হবে কবে

পরের সংবাদ

তিতাসের গ্যাস সরবরাহ পাইপলাইনের দুরবস্থার কারণেই লিকেজ : বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ২৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : তিতাসের গ্যাসলাইনে গ্যাসের ‘ওভার ফ্লো’ সমস্যার সমাধান হলেও নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক এখনো পুরোপুরি কাটেনি। তিতাসের ডিস্ট্রিক্ট রেগুলেটিং স্টেশনের মাধ্যমে ঢাকায় গ্যাসের চাপ কমিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গ্যাসের লাইনের একাধিক বড় লিকেজ থেকেই মূলত গ্যাস নির্গত হয়ে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিতাসের গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইনের দুরবস্থার কারণেই লিকেজ সমস্যার সৃষ্টি হয়। লাইনের লিকেজ বন্ধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে।
এদিকে মঙ্গলবার সকালেও বিভিন্ন এলাকায় অনেকে গ্যাসের চুলা জ¦ালাতে গিয়ে দোটানায় ছিলেন। এক বাসার লোকজন অন্য বাসায় চুলা জ¦ালানোর খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়ে তারপরে চুলা জ¦ালিয়েছেন।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, তিতাসের গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইনে নিশ্চয়ই ফুটো আছে। গ্যাসের পাইপলাইনে ফুটো থাকা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই ফুটো থেকে স্বাভাবিক সময়েও গ্যাস বের হয়। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে চাপ কম থাকায় কম পরিমাণ বের হয় এবং গন্ধ পাওয়া যায় না। তাই ধরাও পড়ে না। ঈদের ছুটিতে কলকারখানার গ্যাস ব্যবহার বন্ধ থাকায় চাপ বেড়ে লিকেজ থেকে বেশি গ্যাস বের হয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকার মানুষ গ্যাসের গন্ধ পেয়েছে। তিতাস তাদের পাইপলাইনে লিকেজের বিষয়গুলো জানে না। লাইনে গ্যাসের চাপ বেড়ে যাওয়ায় একদিনে পাইপলাইনে অনেকগুলো লিকেজ হওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন ধরে এসব লিকেজ থেকে গ্যাস নির্গত হচ্ছে, কিন্তু মেরামত করা হয়নি।
তিনি বলেন, এভাবে গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে বিপুল পরিমাণ গ্যাস নির্গত হওয়া খুবই বিপজ্জনক। এই গ্যাস কোনো বন্ধ জায়গায় আটকে থাকলে একটি ম্যাচের কাঠিই ধ্বংসযঞ্জের জন্য যথেষ্ট; বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটবে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। তিতাস খুব সহজভাবে নিলেও সমস্যাটি মোটেও সহজ নয়। তারা ‘আশঙ্কা নেই’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছে তা খুবই দায়িত্বহীন কথা। দুর্ঘটনা ঘটলে

তিতাস কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারবে না।
বদরূল ইমাম আরো বলেন, গ্যাস সরবরাহ লাইনের কোথায় কোথায় লিকেজ আছে তা খুঁজে বের করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কাজ শুরু করা উচিত। ঢাকা শহরের গ্যাস পাইপলাইনের সম্পূর্ণ ম্যাপিং করতে হবে। লিকেজের পয়েন্টগুলোকে খুঁজে বের করে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে। সবচেয়ে উত্তম হবে বহু পুরনো সব পাইপলাইন ফেলে দিয়ে নতুন পাইপ স্থাপন করা। পুরনো পাইপলাইন রেখে সমস্যার ভালো কোনো সমাধান হবে না।
এদিকে গ্যাস লিকেজের বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ পৃথক পৃথক ব্যাখ্যা দিয়েছে। আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজেও তার ফেসবুক পেজে সোমবার রাত ১২টার দিকে গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার খবরে নাগরিকদের আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার পর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এখন সবাই নিশ্চিন্তে গ্যাসের চুুলা জ্বালাতে পারেন। একটি জোনের কিছু এলাকায় পাইপলাইনে গ্যাসের ‘ওভার ফ্লো’ হওয়ার কারণে সমস্যা হয়েছিল। অভিযোগ আসার পর তিতাসের ১৪টি জরুরি টেকনিক্যাল টিম কাজ শুরু করে। ডিস্ট্রিক্ট রেগুলেটিং স্টেশনের মাধ্যমে ঢাকায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়। সমস্যা হওয়ার পর ওইসব স্টেশন থেকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয়া হয়। এরপরই দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এখন সব জায়গায় পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরো বলেন, গ্যাসের মধ্যে যে গন্ধ আমরা পাই তা দেয়া হয়। বিভিন্ন গ্যাসের বিভিন্ন ধরনের গন্ধ রয়েছে। তিতাসের লাইনের কোথাও লিকেজ হলে এই গন্ধ পেয়েই সমস্যাস্থল শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এরপর লিকেজ বন্ধ করা হয়। মূলত শনাক্ত ও নিরাপত্তার জন্যই তিতাসের গ্যাসে ওই গন্ধ দেয়া হয়।
তিতাসের টেকনিক্যাল টিমের কর্মকর্তারা জানান, লাইন লিকেজ হয়ে গ্যাস বের হলেই বা গন্ধ হলেই যে আগুন ধরবে বিষয়টি এমন নয়। যে গ্যাস নির্গত হচ্ছে তার আগুন জ¦ালানোর মতো নিজস্ব শক্তি বা সক্রিয়তা থাকতে হবে, তবেই সেখানে আগুন জ¦লবে। গ্যাসের গন্ধ বাসিন্দাদের নাকে আসার পরও হাজার হাজার চুলা জ¦লেছে; কিন্তু আগুন লাগেনি। গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণ হলে আগুন ধরতে পারে, তবে তা হয়নি। এখন সবাই নিশ্চিন্তে চুলা জ্বালাতে পারবেন।
অপরদিকে মঙ্গলবার সকালেও বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা গ্যাসের চুলা জ¦ালাতে গিয়ে দোটানায় ছিলেন। মগবাজারের নয়াটোলা এলাকার বাসিন্দা ফারুক আহমেদ জানান, সোমবার রাতে গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার পর আর চুলা জ¦ালানো হয়নি। এক বাসার লোকজন অন্য বাসায় চুলা জ¦ালানোর খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয়ে তারপর চুলা জ¦ালিয়েছেন। অনেকে আবার তিতাসের অফিসে ফোন করে নিশ্চিত হওয়ার পর চুলা জ¦ালিয়েছেন। অনেকে গণমাধ্যমে তিতাসের বিজ্ঞপ্তির খবর পেয়ে নিশ্চিত হয়ে চুলা জ¦ালিয়েছেন।
মগবাজারের পেয়ারাবাগ এলাকার বাসিন্দা সামশুল আমিন খান জানান, গ্যাসের গন্ধ পাওয়ার পর তার বাসাতেও লোকজন আতঙ্কে ছিল। দুর্ঘটনার ভয়ে তার মতো অনেকে গ্যাসের মেইন সুইচ বন্ধ করে রাখেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে আর গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়নি। আতঙ্ক কেটে যাওয়ার পর চুলা জ¦ালানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, বেইলি রোডসহ কয়েকটি এলাকায় তিতাসের গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের ছুটিতে কলকারখানায় গ্যাসের ব্যবহার কমে যাওয়ায় গ্যাস সরবরাহ লাইনে চাপ বেড়ে যায়। বিভিন্ন এলাকায় তিতাসের পাইপলাইনে লিকেজের কারণে গ্যাস নির্গত হয়ে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এতে জনমনে আতঙ্ক দেখা দেয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়