মার্কিন সেনা অভিযান : সিরিয়ায় জ্যেষ্ঠ আইএস নেতা নিহত

আগের সংবাদ

বঙ্গবাজার ফের চক্রের কবজায়! : অস্থায়ী দোকান বসবে শনিবার, আগুন নির্বাপণ হয়নি পুরোপুরি

পরের সংবাদ

ঈদ সামনে রেখে কর্মমুখর ঈশ্বরদীর বেনারসি পল্লী

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোস্তাক আহমেদ কিরণ, ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে : দেশভাগের পর উত্তর ভারতের কয়েকটি অঞ্চল থেকে কয়েকজন বেনারসি কারিগর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ফতেহ মোহাম্মদপুর এলাকায় বসতি স্থাপনের পর সেখানে তারা বেনারসি-কাতানসহ বেশ কয়েক ধরনের অভিজাত শাড়ি বোনার কাজ শুরু করেন।
সে সব পুরনো কারিগরদের সবাই মারা গেছেন। তাদের উত্তরসূরিরা এ অঞ্চলে এখনো ঐতিহ্যবাহী বেনারসি শাড়ি বোনার কাজ করছেন। এ অঞ্চলে এখনো প্রায় ২ শতাধিক বেনারসি কারিগর পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রেখে বেনারসি-কাতান বুনে চলছেন।
উপজেলার ফতেমোহম্মদপুর ও লোকশেড এলাকা সারাদেশে পরিচিত বেনারসি পল্লী হিসেবে। এ অঞ্চলের তাঁতি ও ব্যবসায়ীরা যুগযুগ ধরে দেশি প্রযুক্তি হ্যান্ডলুম ব্যবহার করে তৈরি করছে বেনারসি শাড়ি। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাহারি রঙের নানা সাজের বেনারসি শাড়ি তৈরি করছে এখানকার দক্ষ তাঁতিরা।
ঈদ সামনে রেখে কর্মমুখর ঈশ্বরদীর বেনারসিপল্লী। নকশা এবং বিন্যাসে নির্ভরশীল একটি শাড়ি তৈরি হতে সময় লাগে ১৫ দিন থেকে এক মাস বা কখনো ছয় মাস পর্যন্ত। ঈদের বাজার ধরতে বেনারসি পল্লীগুলোতে তাই ব্যস্ততা শুরু হয়েছে রমজানের অনেক আগে থেকেই। তবে শ্রমিক সংকট, সুতার মূল্য বেড়ে যাওয়া ও ভারতীয় শাড়ির দাপটে লাভ কম হচ্ছে তাঁতিদের।
হাতে তৈরি বেনারসি শাড়ির চাহিদা রয়েছে সারা দেশে। তাইতো ঈদ, বিয়ে বা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে বেনারসি শাড়ির বিকল্প নেই অনেক নারীর কাছে। শত বছরের ঐতিহ্য হস্তশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ এ বেনারসী পল্লীর শাড়ির সুনাম রয়েছে দেশ ও বিদেশে।
তবে সুতা, রং আর জরির দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্য উৎপাদন করতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বাজারে কারসাজি আর ভারতের কম মূল্যের মানহীন বেনারসি শাড়ি বাজারে বিক্রি হওয়ায় অনেকেই এই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। সমিতি থেকে লোন নিয়ে হাতে তৈরি বেনারসি শাড়ি তৈরি করে মালিক পক্ষ কোনো রকমে টিকে আছেন। তবু ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো শতাধিক কারিগর আর অর্ধশত ছোট-বড় মালিক বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ করছেন। সময়ের সঙ্গে মজুরি বৃদ্ধি হয়নি শ্রমিকদের। শাড়ির নকশার ওপরে নির্ভর করে কোনোটা ২ দিন আবার কোনোটা ৭দিন ধরে কাজ করতে হয় তাদের। একটি শাড়ি তৈরি করে একজন শ্রমিক এক হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা আয় করে থাকেন। তবে যে পরিমাণ শ্রম ও সময় দিতে হয় একটি শাড়ি তৈরিতে সেই পরিমাণ পারিশ্রমিক তারা পান না।
কারিগররা জানান, একটা শাড়ি তৈরি করতে এক সপ্তাহ লাগে। আবার কিছু কিছু শাড়ি আছে তাতে অনেক দিন সময় লাগে। ঈদের সময় মার্কেট কিছুটা চলে। সিজন আসলে সুতার দামও বেড়ে যায়।
কিছু তাঁতি অভিযোগ করে বলেন, সময়ের সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও তাঁতিদের মজুরি বৃদ্ধি হয়নি। অনেক তাঁতি এই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। আগে পুরো এলাকায় বেনারসি শাড়ির তাঁত ঘর ছিল। আর এখন হাতেগোনা কিছু রয়েছে। ভালো ভালো কারিগর চলে গেছে বাইরে।
ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর তাঁত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াকিল বলেন, ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর বেশ সুনাম ছিল সারাদেশে। আমাদের দেশের শাড়ি নিয়ে গিয়ে ভারতের শাড়ি বলে

বাজারে বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। আবার ভারতে মেশিনের তৈরি কমদামের মানহীন শাড়িকে বেনারসি বলে ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে। যদি ভারতীয় শাড়ি বাংলাদেশে না আনা হয় তাহলে আমাদের শাড়ির চাহিদা বাড়বে।
বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার ওবাইদুর রহমান জিলানী বলেন, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ঈশ্বরদী বেনারসি পল্লীর ৩২ জন তাঁতিকে ৪০ লাখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক ঋণ প্রদান করেছেন। বর্তমান বাজারে সুতা ও রঙের দাম বৃদ্ধির কারণে তাঁতিরা প্রত্যাশার মূল্য পাচ্ছেন না। তবে ঈদকে সামনে রেখে বেশ কর্মব্যস্ত সময় পার করেছেন তারা।
তাঁতবোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছে। সরকারের এই আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঈশ্বরদীর বেনারসি পল্লীর তাঁতিরা। দেশি তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কাজ করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়