ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড : সাবেক পরিচালক এজাজ আহমেদ মারা গেছেন

আগের সংবাদ

সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্রের মজুত : অরক্ষিত মিয়ানমার-ভারত সীমান্ত পেরিয়ে পাহাড়ে আসছে অত্যাধুনিক অস্ত্র

পরের সংবাদ

বঙ্গবাজার ফের চক্রের কবজায়! : অস্থায়ী দোকান বসবে শনিবার, আগুন নির্বাপণ হয়নি পুরোপুরি

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা নাশকতার প্রসঙ্গই সামনে আনছেন বারবার। এর যুক্তি হিসেবে দেখানো হচ্ছে সিটি করপোরেশনের বহুতল ভবন নির্মাণ ও দুই সংস্থার জায়গার বরাদ্দ নেয়ার তোড়জোড়কে। আগে দুবার আগুন লাগলেও এবারের আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে ৪টি মার্কেট। এই জায়গাটিকে নিজেদের কবজায় রাখতে হাইকোর্টে রিট করে থামিয়ে দেয়া হয় সিটি করপোরেশনের উদ্যোগকে। সে সময় সুবিধাভোগী চক্রের সদস্যরা ব্যবসায়ীদের ভুল বুঝিয়ে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সক্ষম হয়। এবারো বঙ্গবাজারকে নিজেদের কবজায় রাখতে তৎপর হয়ে উঠেছে চক্রটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই সুবিধাভোগী চক্র চায় না এখানে বহুতল ভবন হোক। এজন্য তারা অস্থায়ী দোকান করার দাবি তোলে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এ বিষয়ে মৌখিক সম্মতি দিয়েছেন। আগামীকাল শনিবার থেকে অস্থায়ী দোকান বসবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। অস্থায়ী দোকান চালু হলে পুরনো ব্যবসায়ীরা আবার জায়গা বুঝে পাবেন। এর ফলে বঙ্গবাজার মার্কেটটি আবারো বাঁশ-কাঠ-টিন দিয়ে দখলে নেয়া সুবিধা হবে। পরে সিটি করপোরেশন ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা খালি করতে বললেও আগের মতোই ভেটো দিতে পারবে ওই সুবিধাভোগী চক্রের সদস্যরা। একবার জায়গা বুঝে পেলে দোকানিরাও থাকবেন ওই চক্রের পকেটে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে যত দ্রুত সম্ভব দোকান চালু করতে চান ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ঈদের আগে যে কয়দিন দোকানদারি করতে পারবেন, সে কয়দিনই তাদের জন্য আশীর্বাদ। এজন্য সরকার যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটগুলোয় দোকান খোলার অনুমতি দেয়। সূত্র জানিয়েছে, ব্যবসায়ীদের এই দাবির সঙ্গে সুর মিলিয়ে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের স্থান নিজেদের দখলে রাখতে চেষ্টা তদবির ও ফন্দিফিকির করছে ওই সুবিধাভোগী মহল। সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে তারা দেনদরবারের চেষ্টা করছেন। ওই সুবিধাভোগী মহলে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন এমনকি জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গত বুধবার মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মেয়র তাপস। নিজ কার্যালয়ে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চলা বৈঠকে যোগ দেন সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, আফজাল হোসেন, মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের

চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, বঙ্গবাজার মার্কেটের সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম ও গুলিস্তান মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদাসহ একটি প্রতিনিধিদল।
বৈঠক শেষে পোড়া মার্কেটের নিরাপত্তায় ১ প্লাটুন আনসার ও সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দেন মেয়র। দ্রুত ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে দোকান বসিয়ে ঈদের আগে ব্যবসা করার সুযোগ চান ব্যবসায়ী নেতারা। এ ব্যাপারে মেয়র তাদের আশ্বস্ত করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সালমান এফ রহমান বলেন, কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঈদের আগে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এই জায়গা পরিষ্কার করে দিলে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে বসেও যদি ঈদের আগে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন, সেটিই ভালো। পুরোটা তো রি-কভার করা যাবে না। কিছুটা যদি রি-কভার করা যায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই পোড়াস্তূপ পরিষ্কার করে তাদের বসার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। কিন্তু এখানে কিছু আইনের ব্যাপার আছে। তাই আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার আগে এই জায়গা পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। আমি এই বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিজি এবং ডিএসসিসি মেয়রের সঙ্গে কথা বলব। আশা করছি, সিটি করপোরেশনকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার থেকে অস্থায়ীভাবে দোকান খোলার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে।
ব্যবসায়ীদের কয়েকদিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণও দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মালিক সমিতিকে দুটি তালিকা করতে বলেছি। একটি ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের এবং আরেকটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের। আগামী রবিবারের মধ্যে এই তালিকা হয়ে যাবে। এই তালিকা প্রয়োজন। কারণ কাকে আমরা ক্ষতিপূরণ দেব, কতটুকু সাহায্য করব এটা জানার জন্য। তিনি আরো বলেন, ‘অনেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে চাচ্ছেন। এজন্য আমরা বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিকে বলেছি, ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের মালিক সমিতির সঙ্গে এটি যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে। অ্যাকাউন্ট করা হলে সেটির নম্বর আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করে দেব। পাশাপাশি নগদ ও বিকাশ নম্বরও করে দেয়া হবে। এর মাধ্যমে সহায়তাকারী সেসব নম্বর ও অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারেন।
শনিবার থেকেই ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে দোকান পরিচালনার সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আমাকে কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানিয়েছেন, আগামীকাল (শুক্রবার) এই জায়গা পরিষ্কার করে ফেলা হবে। পরশু থেকে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। তবে শুধু যারা এখানকার প্রকৃত ব্যবসায়ী তারাই এখানে বসার সুযোগ পাবেন। নতুন করে অন্য কাউকে বসতে দেয়া হবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরজমিন দেখা যায়, এনেক্সকো টাওয়ার থেকে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরে যাওয়ার রাস্তার দুপাশে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ। শুধু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ ভেতরে ঢুকে পোড়া ও ভেজা মালামাল বের করে আনছেন। আবার অনেকে ভস্মীভূত দোকানের পোড়া টিন ও লোহা দিয়ে দোকানের সীমানা নির্ধারণের কাজ করছেন। অগ্নিকাণ্ডের তৃতীয় দিনেও দোকানের কাছে এসে বিলাপ করছিলেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা মার্কেটের কাছ থেকে সব ব্যবসায়ীকে সরিয়ে দেন। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদেরও বাইরে যেতে অনুরোধ করে পুলিশ।
দোকানের সামনে বসে থাকতে দেখা যায় এনেক্সকো টাওয়ার, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সের দোকানিদের। এনেক্সকো টাওয়ারের ব্যবসায়ী মীর মনির হোসেন পলাশ ভোরের কাগজকে বলেন, দোকানই আমাদের রুটি-রুজি। যত দ্রুত খুলতে পারব ততই ভালো। আমরা সবাই সিটি করপোরেশনের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। হাসিবুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী পুড়ে যাওয়া কাপড় দেখিয়ে বলেন, এগুলো তার দোকানের মালামাল। ঈদ উপলক্ষে শিশুদের পোশাক তুলেছিলেন তিনি। তার দোকানে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। শাহীনুর রহমান বলেন, এমনভাবে পুড়বে তা কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি।
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী মো. রাসেল জানান, নিউ রাসেল কালেকশন নামে নিচতলায় (দোকান নম্বর ১৩১৬) ও দোতলায় (দোকান নম্বর সি-৬৬) দুুটি দোকান ছিল। দুটি দোকানই তিনি কিনেছিলেন ৬২ লাখ টাকা দিয়ে। এখন তো কিছুই অবশিষ্ট নেই। তবুও পোড়া লোহা ও টিন দিয়ে নিজের দোকানের জায়গা চিহ্ন দিয়ে রাখছেন তিনি। অস্থায়ী দোকান করার সময় যেন অন্য কেউ দখলে নিতে না পারে।
আগুন এখনো নেভেনি : রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুনে পুড়ে যাওয়া এনেক্সকো টাওয়ারের আগুন এখনো নেভাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। গতকাল বিকাল ৩টার দিকেও মার্কেটটির ৫ম তলায় আগুনের ধোঁয়া দেখা যায়। আগুন নির্বাপণে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটকে কাজ করতে দেখা যায়। তবে, বঙ্গবাজার মার্কেটে এখন আর কোনো দৃশ্যমান আগুন নেই। তবে পোড়া স্তূপ থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ডাম্পিং ডাউনের (আগুন পুরোপুরি নেভানো) কাজ করছিলেন।
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দায়িত্ব¡রত কর্মকর্তা মো. হাবিব বলেন, ধ্বংসস্তূপের ভেতরে কিছু কিছু স্থানে হঠাৎ হঠাৎ আগুন জ্বলে উঠছে। সেই আগুন নেভাতে আমাদের এ কর্মকাণ্ড। এ ছাড়াও ঘটনাস্থলের পোড়া স্তূপ ঘুরে দেখেছে সিআইডি ক্রাইম সিন টিম ও সিটিটিসির বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এখানে ৬ জনের একটা দল এসেছি। এখানের পোড়া স্তূপ থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) বায়জীদ জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কষ্ট করে অভিযোগ জানাতে আর থানায় গিয়ে অপেক্ষা করতে হবে না। তাদের জন্য আমরা এখানে অস্থায়ী বুথ বসিয়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখানে জিডি করতে পারবেন। এজন্য জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) ও নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিতে হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুনের সূত্রপাত হয়। বঙ্গবাজার থেকে আশপাশের আরো ৪টি মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করে। প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টায় বুধবার দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, এখনো আগুন পুরোপুরি নেভার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি ফায়ার সার্ভিস।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়