পাটগ্রামে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

আগের সংবাদ

বার্সেলোনা ছাড়লেন শাকিরা

পরের সংবাদ

৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: এপ্রিল ৪, ২০২৩ , ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

** আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের ** জনগণ ও বিএনপির দাবি মানতে বাধ্য হয়েছে **

কাগজ প্রতিবেদক : অনেক অপেক্ষা, আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে ব্যালটেই হচ্ছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে কমিশনের ১৭তম সভা শেষে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আগামী সংসদ নির্বাচন দাবি করলেও ইসির সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, ইভিএম বাতিলের দাবিতে নিজেদের আন্দোলন সফল হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইভিএমের পক্ষে মত দিলেও অনেক দলই ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট দাবি করছিল। রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ইসির সংলাপে না গেলেও তারা ব্যালটে ভোটের পক্ষে দাবি জানিয়ে আসছিল। এ পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশন তাদের কাছে থাকা ইভিএম পরীক্ষা করে অধিকাংশই ব্যবহার অনুপযোগী পায়। এসব মেরামত করতে সরকারের কাছে এক হাজার ২৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় ইসির বরাদ্দ অনুমোদন করেনি। এ পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা হয়। বৈঠকে অন্য চার কমিশনার, ইসি সচিব, ইসির অতিরিক্ত সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ব্যালট পেপারে ও স্বচ্ছ ব্যালটবাক্সে ভোট নেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তিনি জানান, ইভিএম মেরামতে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এবং ইভিএমে ভোটে সব দল সম্মত না হওয়ার কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ইসির কর্মপরিকল্পনায় সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ইভিএম মেরামতের জন্য প্রায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। যেহেতু ইসির হাতে থাকা ইভিএম প্রায় সবগুলো ত্রæটিযুক্ত, সবই মেরামত করতে হবে। সে পরিমাণ অর্থ নির্বাচন কমিশনের কাছে নেই। এ ছাড়া বিষয়টি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোর সিংহভাগই ইভিএমে ভোট করার বিরোধিতাও করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে ইভিএমে সংসদ নির্বাচনে ভোট করা থেকে সরে এলো কমিশন।
এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে অনধিক দেড়শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছিল কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। সে লক্ষ্যে তারা সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার একটি ইভিএম ক্রয় প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করে। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনা পর্যালোচনার পরে পরিকল্পনা কমিশন তথা সরকার ইসির সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ইভিএম কেনার প্রকল্পে সায় দেয়নি। ফলে প্রস্তাবিত প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়। পরে ইসির হাতে থাকা ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএমে মেরামতের জন্য চাহিদামত ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। যার ফলে ইভিএম নিয়ে দীর্ঘদিনের ইসির তর্জন গর্জন একেবারে বিফলে গেল।
এ বিষয়ে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, নতুন ২ লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প বাতিল হওয়ায় পরে ইসি ৭০-৮০টি আসনে ইভিএমে ভোট নেবার পরিকল্পনা করে। ইসির হাতে থাকা দেড় লাখ মেশিনের মধ্যে ৪০ হাজার মেরামত অনুপযোগী। অবশিষ্ট এক লাখ ১০ হাজার মেশিন মেরামতে জন্য এক হাজার ২৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন। সেজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চেয়ে বেশ কয়েক দফা চিঠিও দেয় ইসি। সেই অর্থ দিতে অর্থমন্ত্রণালয় অপারগতা জানানোর ফলে ইভিএম মেরামত সম্ভব হচ্ছে না। ইসির হাতেও এত টাকা নেই। ইসির বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সবগুলো অর্থাৎ ৩০০ আসনেই ব্যালটে ভোট নেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর সাথে থাকবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স।
৩০০ আসনে স্বচ্ছ ব্যালটে ভোটে ইসির সিদ্ধান্তে আপত্তি নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। এ বিষয়ে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান ভোরের কাগজকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হোক- আমরা এই দাবি করে আসছিলাম। এখন ইসি যে সিদ্ধান্ত নেবে- তাতে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি নেই। কারণ ইসি স্বাধীন।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে আমাদের প্রস্তাব ছিল ৩০০ আসনেই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেয়ার। এখন নির্বাচন কমিশন মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবে না। ব্যালটেই ভোট নেবেন। ইসি যেটা ভাল মনে করেছে, তারা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসির সিদ্ধান্ত বিষয়ে আমাদের দ্বিমত নেই। কারণ নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। বাংলাদেশের সংবিধান তাদের সেই ক্ষমতা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল হয়েও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ওপর আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করব না। একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে যা করার তারা করবে। এখানে তো আমাদের বলার কিছু নেই।
ব্যালটে ভোট নেয়ার ইসির সিদ্ধান্তকে নিজেদের আন্দোলনের প্রথম ধাপের জয় হিসেবে চিহ্নিত করছে বিএনপি। এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, ইভিএম বাতিলের দাবিতে নিয়ে বিএনপি বহুদিন ধরে আন্দোলন করে এসেছে। এছাড়াও বিএনপির ১০ দফার মধ্যেও স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে জনগণ নিজের হাতে ব্যালটে ভোট দিয়ে তাদের মত প্রকাশ করবে। বিষয়টি তুলে ধরে আমরা ইভিএমের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কথা বলেছি। তাই আমরা মনে করি, জনগণের পক্ষে বিএনপির একটি দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামীতে সব ভোটেই ইভিএম না থাকার পেছনে চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও কিছুটা দায়ি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমরা মনে করি না। এখানে রাজনৈতিক দাবির বিষয়টিই মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার ঘোষণা দিলেও এখন সব কটি আসন অর্থাৎ ৩০০ আসনে ব্যালটে ভোট নেবার ঘোষণা দিয়ে অন্তত একটি বড় রাজনৈতিক দলের চাহিদা বা ইভিএমে না করে ব্যালটে ভোট করা দাবি পূরণ করেছে। গতকাল ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে একটি বড় রাজনৈতিক দলসহ বেশ কয়েকটি দল ইভিএমে ভোটের বিরোধিতা করে আসছে। ইসি তাদের দাবি কিছুটা হলেও পূরণ করল। এখন তাদের ইসি বলতে পারবে আমাদের হাতে যতটুকু করার আমরা করেছি। আপনারা এবারে নির্বাচনে আসুন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়