১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ : হোমল্যান্ড লাইফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

আগের সংবাদ

মনোনয়নে আ.লীগের গুরুত্ব তৃণমূল : চ্যালেঞ্জে শতাধিক এমপি, চাপের মুখে সাংগঠনিক সম্পাদকরা, জেলার পর উপজেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

পরের সংবাদ

১৫ মিনিটেই পানি নিষ্কাশনের দাবি সিটি করপোরেশনের : জলাবদ্ধতামুক্ত রাজধানী শিগগিরই মিলছে না

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : শিগগিরই নিরসন হচ্ছে না ঢাকার জলাবদ্ধতা। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে অতিবৃষ্টিতেও মাত্র ১৫ মিনিটেই জলাবদ্ধতা নিরসনের সক্ষমতা তাদের আছে। এজন্য রয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। নগরবিদরা বলছেন, ওয়াসা থেকে খাল পেয়ে দৃশ্যমান কার্যক্রম নিয়েছে সিটি করপোরেশন। এতে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ঢাকার আরবান প্রক্রিয়ায় এখনো অতিবৃষ্টিতে নাজেহাল হওয়ার মতো বাস্তবতা রয়ে গেছে। কেননা অতিবৃষ্টিতে সামাল দেয়ার মতো ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসার অধীনে থাকা খালগুলো দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকেই এসব খাল রক্ষণাবেক্ষণের কার্যক্রম শুরু করেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। অবৈধ দখলে থাকা খাল উদ্ধারেও তৎপরতা শুরু করেন তারা। অভিযান চালিয়ে খালের ওপর অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়। খাল থেকে শুরু হয় বছরের পর বছর জমে থাকা বর্জ্য অপসারণ। এর ফলে

পরের দুই বছর ঢাকায় জলাবদ্ধতা বেশি সময় টিকতে পারেনি। গত বছরও এর সুফল দেখা গেছে। কিন্তু খাল বুঝে নেয়ার পর পরিষ্কারের যে তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, ধীরে ধীরে তাতে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। এ বছর খাল পরিষ্কারের খুব একটা তৎপরতা চোখে পড়েনি। অথচ আর দুই মাস পরেই শুরু হচ্ছে বর্ষাকাল। যদিও দুই মেয়র আশাবাদী, ভারী বৃষ্টিতেও ঢাকায় আর জলমগ্ন বা জলাবদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। মাত্র ১৫ মিনিটেই পানি নিষ্কাশনের সক্ষমতা করপোরেশনের আছে। সেজন্য নেয়া আছে সব ধরনের প্রস্তুতিও।
রাজধানীর জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। আমরা নর্দমাগুলো পরিষ্কার করছি। ঢাকা ওয়াসা থেকে খাল ও নর্দমাগুলো পাওয়ার পর থেকে সূচি অনুযায়ী বছরের প্রথম থেকেই পরিষ্কার করা শুরু করি যাতে জলাবদ্ধতা না হয়। এরই মাঝে বৃষ্টি হয়েছে কয়েক পশলা বৃষ্টি। তাতে কোথাও কোনো জলাবদ্ধতা হয়নি। আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে পারি। আমাদের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো আমরা করছি। আগামী বর্ষাতেও আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি আছে। আমাদের টার্গেট, নগরীতে অতিবৃষ্টি হলেও মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই যেন জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারি।
নগরবিদদের মতে, দুই সিটি করপোরেশন দায়িত্ব পেয়েই অনেক খাল সংস্কার করেছে। কিছুদিন পর সেখানে আবার ময়লা পড়ে গেছে। এমনকি খালের ময়লা পাশেই রাখার ফলে সেগুলো আবার খালেই পড়েছে, এমন ঘটনাও আছে। তাছাড়া জনগণ প্রতিনিয়তই খালে ময়লা ফেলছে, তা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। না হলে যতই সংস্কার করা হোক না কেন, কাজের কাজ কিছুই হবে না। এজন্য নগরবিদরা কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম গত বুধবার ভোরের কাগজকে বলেন, বৃষ্টি হলে আগে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা, এমনকি ১২ ঘণ্টাও পানি জমে থাকত। এখন তা অনেক কমে গেছে। গত নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে খুব একটা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। আমরা কাভার করেছি। খাল উদ্ধার ও পরিষ্কারে আমাদের কাজ চলছে। আমরা আশাবাদী গত বছরের থেকে এবার জলাবদ্ধতা আরো কমবে। আমরা সব খাল যখন দখলমুক্ত করতে পারব, নগরবাসী তখন আরো বেশি সুবিধা পাবেন। এ কাজ আমাদের চলমান আছে।
তিনি বলেন, খাল উদ্ধারে এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা- অনেক সিএস দাগ মুছে ফেলে অনেকেই তা মহানগর জরিপের আওতায় নিয়ে এসেছেন। এর সমাধান করা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ আইনগতভাবে তারা বৈধ হয়ে গেছেন। ফলে তাদের স্থাপনাগুলো ভাঙতে পারছি না। যেখানে আইনগত সমস্যা নেই, সিএস দাগ দেখে সেখানে আমরা পিলার দিচ্ছি। সেই সঙ্গে খালের গভীরতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম আমাদের চলমান আছে।
নগরবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ওয়াসা থেকে দুই সিটি করপোরেশন খালগুলোর দায়িত্ব নেয়ার পর দুই মেয়র পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন। খাল রক্ষণাবেক্ষণে ওয়াসার তুলনায় সিটি করপোরেশন কিছু কৌশলগত পরিবর্তন এনেছে। দুই মেয়রের মনোযোগ ছিল খালগুলো কীভাবে সচল করা যায়। ওয়াসার আগ্রহ ছিল ড্রেনেজ প্রকল্পের দিকে। এখন খালগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। ফলে কয়েক বছরের তুলনায় বর্তমানে জলাবদ্ধতা কিছুটা কম হয়। কিন্তু ঢাকার বাস্তবতা হচ্ছে বৃষ্টিপ্রবণ শহর হওয়ায় অতিবৃষ্টিতে সামাল দেয়ার মতো ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখানে নেই- এটা স্বীকার করতেই হবে।
ড. আদিল বলেন, মেয়ররা যতই বলুন না কেন, অতিবৃষ্টিতেও ১৫ মিনিটে পানি নেমে যাবে- সেটা বাস্তবতাপূর্ণ না। মেয়ররা যেটা বলতে পারেন সেটা হলো- তারা কী কী কাজ করেছেন, সেই সক্ষমতায় তারা কত মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত সামাল দিতে পারবেন সেটা বৈজ্ঞানিক বিষয়। আমাদের মূল সমস্যা হলো- সিটি করপোরেশন বা ওয়াসা বা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এখনো সমন্বয় করেই কাজ করতে হচ্ছে। এটা পরিবর্তনের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ খুব বেশি বিস্তৃত হয়নি। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের সঙ্গে কমিউনিটিভিত্তিক উদ্যোগ আরো বাড়ানো দরকার। তবে এটা ঠিক যে দুই মেয়র কাজ করে যাচ্ছেন। যেমন দক্ষিণের পক্ষ থেকে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের উদ্ধার কার্যক্রম প্রশংসনীয়। এর সঙ্গে শহরের মাঝের নেটওয়ার্ক এফিশিয়েন্ট করা দরকার। সেগুলো নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। এচিভমেন্ট (অর্জন) আছে তবে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। কেননা ঢাকার আরবান প্রক্রিয়ায় এখনো অতিবৃষ্টিতে নাজেহাল হওয়ার মতো বাস্তবতা আছে। গত বছরও সেটি হয়েছে। অল্প বৃষ্টিতে অনেক জায়গাতেই জলাবদ্ধতা ছিল। অর্থাৎ মোটাদাগে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্পূর্ণরূপে হবে- সেই বাস্তবতা এখনো আসেনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়