১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ : হোমল্যান্ড লাইফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

আগের সংবাদ

মনোনয়নে আ.লীগের গুরুত্ব তৃণমূল : চ্যালেঞ্জে শতাধিক এমপি, চাপের মুখে সাংগঠনিক সম্পাদকরা, জেলার পর উপজেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

পরের সংবাদ

প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা : সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস কারাগারে

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এ আদেশ দেন। গত বুধবার রাতে রমনা থানায় দায়ের হওয়া মামলায় শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল সকাল ১০টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক আবু আনছার।
অন্যদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে শামসুজ্জামান শামসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গত মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে পরিচয় না দিয়ে শামসুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যায় সিআইডি। বুধবার দিনভর নাটকীয়তার পর বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও

ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এলাকা থেকে শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আসামি শামসুজ্জামান জামিনে মুক্তি পেলে তদন্তে বিঘœ ঘটতে পারে।
শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তথ্যভিত্তিক নয় এমন সংবাদ প্রকাশ করায় প্রথম আলোর সাংবাদিককে সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে মামলা হওয়ায় তাকে পরে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। এখন পর্যন্ত দু-তিনটি মামলার তথ্য জানি। আরো মামলা হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি।
এদিকে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে ২০ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়া এবং গত বুধবার গভীর রাতে রমনা থানায় দায়ের হওয়া আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার করার ঘটনায় নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় আরো তীব্র হয়েছে। প্রথম আলো-ঢাকা ট্রিবিউনসহ বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সা¤প্রতিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের (এমএফসি) ১২ সদস্য। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, গভীর রাতে তুলে নেয়া, এরপর ৩০ ঘণ্টা পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করার ঘটনা ন্যক্কারজনক।
এছাড়া বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ ও সংস্থা বিবৃতি দিচ্ছে। তবে সেগুলো আমলে নিচ্ছে না সরকার। এ ধরনের বিবৃতি সরকারের জন্য বাধার কারণ নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
এদিকে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে দৈনিক প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান বলেন, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় একটি খবরকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করতে চেয়েছিল। আমরা তা করতে দিইনি। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের ১১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া। এর পরের দিন গত বুধবার গভীর রাতে ডিএমপির রমনা থানায় একই আইনে আরেকটি মামলা করেন আইনজীবী আবদুল মালেক। মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস ও ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
রমনা থানায় মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক প্রথম আলো একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করে। ছবিতে একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি শিশুটির নাম জাকির হোসেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়ে কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব। সংবাদটি দেশ-বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন।
পরবর্তীতে ৭১ টিভির প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রথম আলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও সাক্ষাৎকার দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। শিশুটির বিষয়ে ভুল তথ্য, নামপরিচয়ও ভুল দেয়া হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এমন সংবাদ করেছে প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদক।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কৃষক লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতার দিনটি আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করি। সেইদিন তথ্যভিত্তিক নয় এমন সংবাদ প্রকাশ করে একটি পত্রিকা। যেভাবে বাংলাদেশ এগিয়েছে সেটাকে কটূক্তি করে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এমএফসির উদ্বেগ : প্রথম আলো-ঢাকা ট্রিবিউনসহ বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সা¤প্রতিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের (এমএফসি) ১২ সদস্য। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এমএফসি বলছে, স¤প্রতি অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিল নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের সময়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরার সাংবাদিকের ভাইয়ের ওপর হামলা, ঢাকা ট্রিবিউনের আলোকচিত্রী সাংবাদিকের ওপর হামলা এবং স¤প্রতি প্রথম আলোর সাংবাদিক আটকের খবরে তারা উদ্বিগ্ন। এমএফসির সদস্য হিসেবে এ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
টিআইবির উদ্বেগ : প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে বাসা থেকে গভীর রাতে তুলে নেয়া, এরপর গ্রেপ্তার দেখানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, গভীর রাতে তুলে নেয়া, এরপর ৩০ ঘণ্টা পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করার ঘটনা ন্যক্কারজনক। এই আইনের মাধ্যমে সংবাদকর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীরা নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সংস্থাটি মনে করে, শামসুজ্জামানকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা একজন সাংবাদিক, দেশের একজন নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনে ‘শায়েস্তা’ করার উদাহরণ তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার এ ধরনের মন্তব্য বা বিবৃতি সরকারের জন্য বাধার কারণ নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের সুরক্ষার জায়গাটি কোথায়? বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান, এটি এত ঠুনকো নয়। আমাদের সবার দায়িত্ববান হওয়ার প্রয়োজন আছে এবং যেটাই হোক, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে শক্ত হাতে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এ ধরনের মন্তব্য, বিবৃতি বা অন্য কোনো কিছু কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি এবং হবেও না।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়