১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ : হোমল্যান্ড লাইফের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ

আগের সংবাদ

মনোনয়নে আ.লীগের গুরুত্ব তৃণমূল : চ্যালেঞ্জে শতাধিক এমপি, চাপের মুখে সাংগঠনিক সম্পাদকরা, জেলার পর উপজেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

পরের সংবাদ

চিকিৎসার ফি নির্ধারণ কতদূর? : বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নেন ৮৬ শতাংশ মানুষ, স্বাস্থ্য খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে

প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ৩১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবকাঠামো বাড়লেও সেবার সক্ষমতা বাড়েনি। এতে সেবা নিতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হন রোগীরা। দুর্ভোগ এড়াতে এবং দ্রুত চিকিৎসাসেবা পাওয়ার আশায় বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন সাধারণ মানুষ। প্রিয়জনকে বাঁচানোর আশায় সাধ্যের বাইরে গিয়েও অনেকে ছুটছেন বেসরকারি হাসপাতালে। বিভিন্ন সময় বিষয়টি উঠে এসেছে গণমাধ্যমে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন হাসপাতালের সংখ্যা ও বেড সংখ্যা এখন অনেক বেশি। একই সঙ্গে রোগনির্ণয়ের সুযোগ এখন বেসরকারি খাতেই বেশি। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত সরকারি খাতের চেয়ে এগিয়ে।
২০২০ সালে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক গবেষণায় দেখা যায়, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ কম। কিন্তু মাত্র ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ মানুষ সরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নিতে যায়। এর অর্থ হচ্ছে দেশের ৮৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসাসেবা নেয় বেসরকারি খাত থেকে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ও গবেষকরা মনে করছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ছাড়াও আর্থসামাজিক কিছু কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। তারা বলছেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন ক্লিনিক ও হাসপাতাল গড়ে ওঠার পেছনে কাজ করেছে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আয় বাড়ায় চিকিৎসা খাতে ব্যয়ের সামর্থ্যও বেড়েছে। অন্য কারণটি হচ্ছে, সরকারি সমর্থন ও সহযোগিতা। ক্ষমতায় থাকা বিভিন্ন সরকার দেশের উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। বেসরকারি খাতের বিকাশ ত্বরান্বিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন সময় আর্থিক প্রণোদনা ও নীতিসহায়তা দিয়েছে। বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের মালিকরা সেই সুবিধাও পেয়েছেন।
করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন দুর্যোগে সেবা দিয়ে সরকারের পাশে থেকেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। তবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে রোগীদের জিম্মি করার অভিযোগ পুরনো। সেই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে একই পরীক্ষা কিংবা সেবার জন্য একেকটিতে একেক অঙ্কের ফি নিয়ে

সেবাপ্রার্থীদের অসন্তোষও দীর্ঘদিনের। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারও। আর তাই বেসরকারি হাসপাতালগুলোর খরচ নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়ে বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। সর্বশেষ গত বছর ৬ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছিলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে মান অনুযায়ী শ্রেণিতে ভাগ করে সে অনুযায়ী ফি নির্ধারণ করে দেয়া হবে। যে হাসপাতালের যে সক্ষমতা আছে, সেই সক্ষমতার বাইরে ওই হাসপাতাল চিকিৎসা দিতে পারবে না।
কিন্তু মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও সেই কাজের কোনো অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমান নয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ ই মাহবুব বলেন, বেসরকারি খাতকে বাদ দিয়ে চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখা যাবে না। তবে রাষ্ট্র স্বাস্থ্যসেবার মূল্য চূড়ান্ত করতে চায় কিনা তা আগে দেখতে হবে। আগে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। এরপর হাসপাতালগুলোকে গ্রেডিং সিস্টেমের আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্যকে পণ্যের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হতে হবে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজধানীর একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও মফস্বলের একটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি করার কাজ হচ্ছে। এরপর মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করা হবে।
এদিকে বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে হয়, বাকি ৭০ শতাংশ হয় বেসরকারি হাসপাতালে। ফলে বেসরকারি খাতের অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় আমাদের এখানে যে চিকিৎসাটা হয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না।
বেসরকারি চিকিৎসা খাত নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি গবেষণা প্রতিবেদনের সুপারিশ উল্লেখ করে এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্য খাতটিতে দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সংশ্লিষ্টরা নিয়ন্ত্রণহীনতাকে বাস্তবতা ধরে নিয়েছে। এমনকি যাদের লাইসেন্স আছে সেটি প্রদর্শন করলে স্বচ্ছতা বাড়বে সে উপলব্ধিটাও তাদের মধ্যে নেই। এখন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে নিজেদের স্বার্থেই বিষয়গুলো মান্য করে। একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পুরো স্বাস্থ্য খাতকে সংস্কার করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়