বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের : গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বিএনপির কারণেই বারবার হোঁচট খায়

আগের সংবাদ

আত্রাই উপজেলা মিলনায়তনের পাশে জলাবদ্ধতা

পরের সংবাদ

রোজা ইসলামের স্তম্ভ : অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন

প্রকাশিত: মার্চ ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৯, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিশুদ্ধ হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী পঞ্চ-স্তম্ভের ওপর দণ্ডায়মান রয়েছে ইসলামের শান্তি-গৃহ। মানবমণ্ডলীর জন্য পরম করুণাময়ের মনোনীত জীবনবিধান পবিত্র ইসলামকে যদি একটি ঘরের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে তার রয়েছে পাঁচটি সুদৃঢ় খুঁটি, স্তম্ভ বা ভিত্তি; যেই ভিত্তিমূলের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বমানবতার কল্যাণকামী এই ব্যবস্থা। মহান আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি প্রদান, তিনি এক এবং একক, তাঁর শক্তিমত্তা ও গুণাবলির সঙ্গে কোনো অংশীদার নেই- এই ঘোষণা দেয়া, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত আদায় করা, হজকার্য সম্পন্ন করা এবং মাহে রমজানের সিয়ামব্রত পালন করা- এই পাঁচটি ভিতের ওপর ইসলামের অনুপম সৌধ নির্মিত হয়েছে। ইসলামের এই পঞ্চ-স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক দলিল; যার মাধ্যমে মানবতাবাদী ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য, সৌকর্য ও নান্দনিক দিকটি পরিস্ফুট হয়ে ওঠে।
মহান আল্লাহর ঘোষণা- ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ রমজান মাসকে পাবে, সে যেন এ মাসের রোজা রাখে’। ‘তোমাদের জন্য রমজানের রোজা রাখা অবশ্য করণীয় হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে’। রমজানের সিয়াম-সাধনার কেন এত গুরুত্ব কিংবা ইসলামে রোজাব্রত পালনের কেনই বা এত তাগিদ- আমরা এর জবাব খুঁজলে মানবতার পরম বন্ধু প্রিয় নবী (সা.)-এর অমোঘ বাণীর তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারব। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও সত্যনিষ্ঠতার সঙ্গে রমজানের রোজা পালন করল, মহান আল্লাহ তার জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন’। বান্দাহর সব প্রকার পাপাচার থেকে মুক্তিলাভের প্রকৃষ্ট মৌসুম হচ্ছে মাহে রমজান। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত বরকতে ভরপুর, রহমতে পরিপূর্ণ এবং নাজাতের বার্তায় সুষমামণ্ডিত। মহান আল্লাহর প্রতি একান্ত আনুগত্য প্রদর্শনের সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত ইবাদতের মাধ্যম হলো রোজা। আর সে কারণেই রোজার প্রতিদান, পুরস্কার বা প্রতিফলের কোনো নির্দিষ্ট সীমা-সংখ্যা নেই; পরম প্রভু মুক্তহস্তে রোজাদারকে পুরস্কৃত ও সম্মানিত করবেন। হাদিসে কুদসিতে আছে- ‘রোজা আমার জন্য, তাই আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব’। অন্য বর্ণনায় এসেছে- ‘রোজা আমার জন্য, সুতরাং আমি নিজেই এর প্রতিদান বা পুরস্কার।’ অর্থাৎ রোজাদার রোজা পালনের বিনিময়ে মহান আল্লাহকে পাওয়ার এক উচ্চতর স্তরে উন্নীত হয়। আমরা সেটি জানতে পারি মহানবী (সা.) এর পবিত্র বাণীর মাধ্যমে- ‘লিস্ সায়েমে ফারহাতান ফারহাতু ইন্দা ফিতরিহি ওয়া ফরাহাতু ইন্দা লিকাই রাব্বিহি’ অর্থাৎ রোজাদারের জন্যে খুশির উপলক্ষ দুটি। প্রথমত, ইফতারের মুহূর্ত আর দ্বিতীয়ত, মহান প্রভুর দর্শন লাভের মুহূর্ত। উল্লিখিত হাদিসে এটি পরিষ্কার বুঝা যায়, রোজাদার ব্যক্তি রোজা পালনের মাধ্যমে ‘দিদারে ইলাহি’ তথা আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তাকে দর্শনের বিরাট নেয়ামত অর্জন করবে। এখানেই অন্যান্য ইবাদতের সঙ্গে রোজার পার্থক্য। মাহাত্ম্যের দিক থেকেও রোজা পালন অনবদ্য। পরম ¯্রষ্টার অপরিসীম শক্তিমত্তা, সামর্থ্য ও সবকিছু পর্যবেক্ষণের যে সক্ষমতা রয়েছে তার ওপর একনিষ্ঠ বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যম হলো রোজা। পাশাপাশি অনাহারী, দরিদ্র, প্রার্থী ও অভাবীদের কষ্ট-যাতনা অনুধাবনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় রোজা। যার মাধ্যমে রোজাদার আরো বেশি মানবিক, সহিষ্ণু, পরোপকারী ও মানবহিতৈষী রূপে নিজেকে তৈরি করার প্রেরণা লাভ করে।
রমজানের প্রতিটি ক্ষণ রোজাদারের জন্য পরম আশীর্বাদের। সে যখন নিজের ক্ষুধা নিবারণের প্রয়োজনে অথবা সারাদিন উপবাসের যাতনা লাঘবে সেহরিতে খাদ্য ভক্ষণ করে- এর মাধ্যমে নিজের উপকার হয়; কিন্তু সেহরি খাওয়ার মুহূর্তেও সে ক্রমাগত ফায়দা লাভ করতে থাকে। ‘ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু য়ুসাল্লুনা আলাল মুতাসাহ্হেরিন’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ এবং তদীয় ফেরেশতাগণ সেহরি ভক্ষণকারী বান্দাহর জন্যে নিরন্তর শুভকামনা করতে থাকেন। রোজাদার একটি নফল সম্পন্ন করলে এ মাসে একটি ফরজ পালনের সমান পুণ্য লাভ করে এবং একটি ফরজ আদায় করলে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াব প্রাপ্ত হয়। রোজার মধ্যে রয়েছে এতেকাফ পালনের হুকুম ও সওয়াব, রয়েছে সহ¯্র মাসের চাইতেও উত্তম এক মহিমান্বিত রাত্রি, যার নাম শবেকদর। রোজা পালনের মধ্যে রয়েছে সংযম, ধৈর্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণ; যার প্রতিফল হিসেবে নিশ্চিত জান্নাত প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতিটি মানুষের অবশ্যম্ভাবী প্রত্যাশা হলো জান্নাতের চির সুখ আর শান্তি; রমজানের রোজাব্রত পালনের কারণেই তা সুনিশ্চিত ধরা দেয়। সেজন্যই রোজা হলো পবিত্র ইসলামের অন্যতম এক স্তম্ভ; যার মাধ্যমে আমরা পরম ¯্রষ্টার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি বিধানে সক্ষম হতে পারি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়