১ মিনিট ‘ব্ল্যাকআউট’ : আলোর মিছিলে গণহত্যার স্বীকৃতি দাবি

আগের সংবাদ

পাঠ্যবই কেলেঙ্কারি : গোয়েন্দা নজরদারিতে ৪ কর্মকর্তা

পরের সংবাদ

১৪৪ ধারা ভঙ্গ : রাহুল ঝড়ে সরগরম দিল্লি

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহরিয়ার বিপ্লব : গত বৃহস্পতিবার সুরাটের একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চার বছর আগে কর্ণাটকে করা মন্তব্যের জন্য কংগ্রেস নেতা রাজিব গান্ধির ছেলে রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। মানহানির মামলায় সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত ঘোষণার পরে তাকে লোকসভার সদস্য পদ থেকেও অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। রাহুল গান্ধীর কারাদণ্ড আর লোকসভার সদস্যপদ হারানোর ঘটনায় হঠাৎ করেই দেশটির রাজনীতিতে সৃষ্টি করেছে এক বিরাট আলোড়ন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লোকসভা ভোটের বছর খানেক বাকি। এ ঘটনায় রাহুল গান্ধীই ভোটের মাঠে মূল ইস্যু হয়ে উঠতে পারেন।
ভাইয়ের পক্ষে নেমেছেন বোন প্রিয়াংকা : ভাইয়ের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বোন প্রিয়াংকা গান্ধী। রবিবার দিল্লির রাজঘাটে কংগ্রেসের ‘সঙ্কল্প সত্যাগ্রহ’-এর জনসভায় ভাই রাহুলের পাশে দাড়িয়ে ভাইকে ‘পাপ্পু’ কটাক্ষের প্রতিবাদ করলেন। গতকাল মহাত্মা গান্ধী স্মৃতিসৌধে কংগ্রেসপ্রধান মল্লিকার্জুন খার্গকে নিয়ে দিল্লির রাজঘাটের বাইরে সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব দেন তিনি। দলের শীর্ষ নেতা পি চিদাম্বরম, জয়রাম রমেশ, সালমান খুরশিদ, প্রমোদ তিওয়ারি, অজয় মাকেন, মুকুল ওয়াসনিক এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরীকেও প্রিয়াংকার সঙ্গে বিক্ষোভে দেখা গেছে।
১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলেন প্রিয়াংকা : এর আগে গত শনিবার কংগ্রেসের তরফে সত্যাগ্রহের অনুমতি চাওয়া হলে দিল্লি পুলিশ অনুমতি দিতে চায়নি। উলটো রাজঘাট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না পেলেও কর্মসূচি বাতিল করেনি কংগ্রেস। গতকাল সকালেই রাজঘাটে বহু কংগ্রেস কর্মী জড়ো হন। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দলের একেবারে শীর্ষস্তরের নেতারাও সংকল্প সত্যাগ্রহে পৌঁছান। এরপরে খার্গেকে নিয়ে উপস্থিত হন প্রিয়াংকা গান্ধী।
নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে প্রিয়াংকা গান্ধী বলেন, আপনি আমার ভাইকে বিশ্বাসঘাতক এবং মীরজাফর বলছেন। আপনি তার মাকে অপমান করছেন। আপনার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন রাহুল গান্ধী জানেন না তার মা কে। আপনি প্রতিদিন আমার পরিবারকে অপমান করেন। কিন্তু কোনো মামলা হয় না। তিনি বলেন, আমরা বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়াই করব। ভয় দেখিয়ে এবং অপমান করে আমাদের চুপ রাখতে পারবেন না। আমরা থামব না। জনসাধারণের কষ্টার্জিত অর্থ লুট করা হয়েছে, এগুলি ফেরত আনতেই হবে। আমার বাবার মৃতদেহ এই তেরঙার নিচে আছে, আমার ভাই তাকে অনুসরণ করছে। আপনি শহীদের ছেলেকে মীরজাফর বলছেন, নেহরু পরিবারের দিকে আঙুল তুলেছেন। আপনি কাশ্মিরি ঐতিহ্যকে অপমান করছেন। রাহুল গান্ধী বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করে এসেছেন। কেমব্রিজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর, এমফিল করেছেন। ওর ডিগ্রি ওর যোগ্যতা সম্পর্কে না জেনেই ওকে পাপ্পু বানাচ্ছেন। সে যখন গোটা দেশজুড়ে পদযাত্রায় নেমেছে। তার সঙ্গে যখন লাখো মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেঁটেছে। তখন মনে হয়েছে, আরে! এ তো ‘পাপ্পু’ নয়! এ তো ভারতকে বুকে নিয়ে হাঁটছেন। যখন সাধারণ মানুষ রাহুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তখন ওদের মধ্যে ভয় ঢুকে গিয়েছে। সংসদে রাহুল কালো টাকার বিরুদ্ধে যে প্রশ্ন তুলেছেন, তার জবাবও এদের কাছে নেই। ফলে সর্বশক্তি দিয়ে তাকে আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সবাই একাট্টা : এনডিটিভির সুত্র অনুযায়ী, শুধু রাজঘাটে নয়, রবিবার দেশজুড়েই সত্যাগ্রহ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর আগে শনিবার ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কংগ্রেস কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন, পাঞ্জাবে হয়েছে রেল অবরোধ। দেশের ১৪টি বিরোধী দল যাদের মধ্যে অন্য প্রশ্নে খুব একটা সহমত হতে দেখা যায় না তারাও রাহুল গান্ধীর প্রতি সহমর্মিতা জানাতে এক হয়েছে। রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রিয়াংকা সব বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
দেশের বাইরেও প্রতিবাদ : রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন আমেরিকার কংগ্রেসের ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্য রো খান্না। তিনি এই পদক্ষেপকে ‘গান্ধীবাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের পর খান্না টুইট করেন, রাহুল গান্ধীকে সাংসদ পদ থেকে বরখাস্তের ঘটনা গান্ধীবাদী দর্শন এবং ভারতীয় মূল্যবোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। রো খান্নার পাশাপাশি মার্কিন কংগ্রেসের ভাইস-চেয়ারপারসন জর্জ আব্রাহামও রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের ঘটনাকে ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত দুঃখের দিন বলে আখ্যা দিয়েছেন।
রাহুলের ভাষনকে ভয় : সদস্যপদ খারিজ প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, আমার সদস্য পদ খারিজ হয়েছে। কারণ আমার পরবর্তী ভাষণকে প্রধানমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন। ওই ভাষণটা আমি আদানির ব্যাপারে দিতাম। আমি তার চোখে আতঙ্কের ছাপ দেখেছি। তিনি কিছুতেই চাননি যেন ভাষণটা সংসদের দিতে পারি। নরেন্দ্র মোদি ও আদানি গোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ে আমি যে তথ্যবহুল ভাষণ আগে দিয়েছিলাম, সেটা সংসদের কার্যবিবরণী থেকে কেন বাদ দেয়া হলো সেই প্রশ্নের জবাব আমি পাইনি। তিনি বলেন, আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলোর কাছে যে ২০ হাজার কোটি টাকা এসেছিল, কেউ জানে না এই অর্থের উৎস কী! প্রধানমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন যে মোদি-আদানি সম্পর্কটা মানুষের সামনে ফাঁস হয়ে যেতে পারে। সেজন্যই আমাকে আটকানো হচ্ছে। কিন্তু আমি থামব না। মোদি-আদানি সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন আমি তুলবই।
রাজনৈতিক কৌশল? কংগ্রেস কেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করছে না। এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনা কাজ করছে কিনা? এই প্রশ্ন উঠছে বিশ্লেষকদের মনেও। ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাশিস মৈত্র বলছিলেন, উচ্চতর আদালতে না যাওয়ার একটা কারণ হতে পারে রাহুল গান্ধীকে একজন শহীদ বা পরিস্থিতির শিকার ভাবতে চাওয়া হচ্ছে। ‘লোকসত্তা’ পত্রিকার সম্পাদক গিরীশ কুবেরের ভাষায় এটা কংগ্রেসের কাছে একটা বড় সুযোগ।
কেন সদস্যপদ খারিজ : সংসদে আদানি ইস্যু এলে বড় ক্ষতি হতে পারে বিজেপির। এমনটাই বিশ্লেষকরা বলছেন। রাহুল গান্ধী সংসদে থাকলে বারেবারে আদানি ইস্যুটা তুলবেন। আর তাতে নরেন্দ্র মোদির ইমেজের বড়সড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। কংগ্রেস এবং বিরোধী দলগুলো যেমন একদিকে রাহুল গান্ধীকে ‘পরিস্থিতির শিকার’ বা তার সংসদ সদস্য পদ খারিজকে ‘গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ’ বলে অভিহিত করছে। অন্যদিকে বিজেপি যে কোনোভাবে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ককে সামনে আসতে দিতে চায় না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়