সিপিডির সংবাদ সম্মেলন : নবায়নযোগ্য জ¦ালানি নীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা দুর্নীতি

আগের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্মার্ট বাংলাদেশ : মতিয়া চৌধুরী, সংসদ উপনেতা

পরের সংবাদ

নির্বাচনে লড়তে পারবেন না ৮ বছর : কারাদণ্ডের পর লোকসভার সদস্য পদ হারালেন রাহুল

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : যেমনটা আশঙ্কা করা হচ্ছিল শেষমেষ তাই ঘটল। ভারতে মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে তার ভারতীয় লোকসভার সদস্যপদ খারিজ হয়ে গেল। গতকাল শুক্রবার দুপুরে লোকসভা সচিবালয় তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল লোকসভায় কেরালার ওয়েনাড় আসনের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। রাহুল গান্ধীকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করাকে ঘিরে তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অখিলেশ যাদব, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সীতারাম ইয়েচুরি, মল্লিকার্জুল খাড়গের মতো বিরোধী নেতানেত্রীরা সোচ্চার হয়েছেন এই বহিষ্কারের বিরুদ্ধে। আর খোদ রাহুল টুইট করে বলেছেন, ‘আমি ভারতের কণ্ঠস্বরের জন্য লড়ছি। তার জন্য যে কোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত।’ এদিকে রাহুল গান্ধীর টিম বলেছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবে। তবে এই রায় বাতিল করা না হলে পরবর্তী ৮ বছর রাহুল গান্ধী কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারবেন না।
এদিকে রাহুলকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণার পর জরুরি বৈঠক ডেকেছে কংগ্রেস। এই বৈঠকে কংগ্রেসের স্টিয়ারিং কমিটি, সব রাজ্যের কংগ্রেসের সভাপতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দিল্লিতে

কংগ্রেসের সদর দপ্তরে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। বৈঠকে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে দলটি।
রায় ঘোষণার দিন থেকেই রাহুল আর লোকসভার সদস্য থাকার যোগ্য নন, প্রজ্ঞাপনে এমনটাই বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা।
‘মোদী’ পদবি নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে চার বছর আগে করা এক মানহানির মামলায় বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন গুজরাটের সুরাটের একটি আদালত। তবে ওই সাজার ওপরে ৩০ দিনের জন্য স্থগিতাদেশ দেন আদালত। ওয়েনাড থেকে নির্বাচিত এমপি রাহুল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের কোলারে এক জনসভায় পলাতক ব্যবসায়ী নীরব মোদি ও ললিত মোদির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নামের মিল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে ওই মন্তব্য করেছিলেন।
‘সব চোরের পদবি মোদি হয় কী করে?,’ রাহুলের ওই মন্তব্যের জেরে বিজেপি বিধায়ক ও গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুর্নেশ মোদি কংগ্রেসের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেছিলেন। সুরাটের আদালতের এই রায়ের ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করা হলো বলে ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, এই মর্মে চিঠি পাঠানো হয়েছে রাহুল গান্ধী, রাষ্ট্রপতির সচিবালয়, থিরুভানান্তাপুরমের মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তাকে। গতকাল সকালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য লোকসভায় যান রাহুল গান্ধী। এ সময় লোকসভার অধিবেশনে ব্যাপক হট্টগোল হয়। বিক্ষোভ-প্রতিবাদের জেরে দুপুর পর্যন্ত লোকসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়। এরপর রাহুল চলে যান।
প্রসঙ্গত, সুরাটের এক আদালত বৃহস্পতিবার রাহুলকে ফৌজদারি মানহানির জন্য দোষীসাব্যস্ত করার পরে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। আর এটার নেপথ্যে রয়েছে ২০১৩ সালের ১০ জুলাই দেয়া সুপ্রিম কোর্টের এক যুগান্তকারী রায়। তার আগে আইন ছিল, দোষীসাব্যস্ত সাংসদ, বিধায়ক, বিধানসভা সদস্যদের সমস্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা আসন ধরে রাখার অনুমতি পাবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত পারবেন, যতক্ষণ না সুপ্রিম কোর্টে তারা দোষীসাব্যস্ত হন। আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এ ক্ষেত্রে ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সাংসদের পদ রক্ষার পথে অন্তরায় হয়েছে ২০১৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়। ঘটনাচক্রে, এক দশক আগে ওই রায় কার্যকর করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন রাহুলই।
সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন মনমোহন সিংয়ের সরকার একটি অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল। কিন্তু, সেই অধ্যাদেশ ছিঁড়ে ফেলে বিক্ষোভ দেখান রাহুল। কংগ্রেসে তার সমর্থকরাও ওই বিক্ষোভে শামিল হয়েছিল। যার জেরে সরকার অধ্যাদেশটি ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।
লিলি থমাস বনাম ভারত সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল যে, ‘কোনো সাংসদ, বিধায়ক বা বিধান পরিষদ সদস্য, যিনি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং তার ন্যূনতম দুই বছরের সাজা হয়েছে, তিনি অবিলম্বে সংসদের সদস্যপদ হারাবেন।’ সর্বোচ্চ আদালতের এই রায় জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ধারা ৮(৪)কে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যায়িত করে বাতিল করেছিল। আগের আইন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দোষমুক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে উচ্চ আদালতে আবেদনের জন্য তিন মাসের ছাড় দিয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের দুই মাস পরে, ইউপিএ সরকার নির্দেশটি বাতিল করার জন্য একটি অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স পাস করেছিল। কারণ, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে কংগ্রেসের মিত্র তথা আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের সাংসদপদ খারিজ হতে পারত। পাশাপাশি, প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং রাজ্যসভার সাংসদ রশিদ মাসুদ সেই সময় একটি দুর্নীতির মামলায় দোষীসাব্যস্ত হয়েছিলেন। আর, সাংসদ পদ খারিজের মুখে পড়েছিলেন। তাই, ইউপিএ সরকার সেই সময় অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশটি পাস করেছিল বলে মনে করা হয়েছিল।
বিজেপি এবং বামপন্থিসহ তৎকালীন বিরোধীরা এই অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স নিয়ে মনমোহন সিং সরকার এবং কংগ্রেসের কঠোর সমালোচনা করেছিল। আর, দোষীসাব্যস্ত আইন প্রণেতাদের রক্ষা করার চেষ্টার অভিযোগ এনেছিল। এই অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশটি পাস হওয়ার কয়েকদিন পরে, ২৭ সেপ্টেম্বর রাহুল দিল্লিতে দলের এক সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। আজ এত বছর পরে সেই যুগান্তকারী রায়ের কারণেই সাংসদ পদ হারালেন রাহুল গান্ধী। এবার তিনি এবং তার কংগ্রেস কী করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়