সিপিডির সংবাদ সম্মেলন : নবায়নযোগ্য জ¦ালানি নীতি বাস্তবায়নে বড় বাধা দুর্নীতি

আগের সংবাদ

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্মার্ট বাংলাদেশ : মতিয়া চৌধুরী, সংসদ উপনেতা

পরের সংবাদ

অবস্থান এখনো পুলিশের অজানা : ভারতীয় পাসপোর্টধারী হওয়ায় আরাভকে ফেরানোয় জটিলতা

প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে ঘিরে রহস্য কাটছে না। ইন্টারপোলের রেড নোটিসধারী আরাভ আসলে কোথায়- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই ঢাকার পুলিশের কাছে। জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের পর তাকে নিয়ে পুলিশের আগ্রহ সৃষ্টির পরই তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেই আরাভ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরব হলেও কোথায় আছেন তার সদুত্তর মিলছে না। তিনি দুবাই আছেন, নাকি ওমান হয়ে অন্যত্র সটকে পড়েছেন- এর জবাব নেই দুবাই পুলিশের কাছেও। ঢাকার ইন্টারপোল ডেস্ক থেকে দুবাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও আরাভ নেই পুলিশের কব্জায়।
বুধবার রাতে ইন্টারপোল রেড নোটিস জারির পর আরাভ খানকে দুবাই থেকে বাংলাদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি দল কাজ শুরু করছে। তবে তার পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব নিয়ে দোটানা থাকায় দুবাই থেকে ফেরানো কতোটা সহজ হবে- এনিয়ে পরিষ্কার কোনো বক্তব্য মিলছে না কারো কাছ থেকে।
এদিকে আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল করতে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। শিগগিরই যাতে তার পাসপোর্ট বাতিলের প্রক্রিয়া ভারত সরকার শুরু করে, সে চেষ্টা চালাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এজন্য ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে চিঠি দেবে মন্ত্রণালয়। এই চিঠির ভাষা ও বিষয়বস্তু এর মধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাসপোর্টটি বাতিল করা হলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সহজ হবে বলে জানা গেছে। আরাভ খান বাংলাদেশি পাসপোর্টে নয়; ভারতীয় পাসপোর্টে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। এখন তাকে বাংলাদেশে ফেরাতে হলে ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল করতে হবে। অথবা যে কোনোভাবে প্রমাণ করতে হবে- তিনি প্রকৃতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক। জালিয়াতি করে তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করে

দুবাইয়ে প্রবেশ করেছেন। আরাভের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি চিঠি পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিটি ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো হবে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশের নাগরিক রবিউল পালিয়ে ভারতে গিয়ে নাম পাল্টে সে দেশের পাসপোর্ট কীভাবে পেল, সেটি ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় জানানো হয়েছে। ভারতকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি দেয়া না হলেও বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এই আলোচনায় বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আরাভের পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। একই সঙ্গে তার ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, আরাভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সা¤প্রতিক সময়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তা পর্যালোচনা করছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এছাড়া আরাভ ভারতের যে ঠিকানা ব্যবহার করে পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং যে কার্যালয় থেকে পাসপোর্ট নিয়েছেন, সে বিষয়েও তারা খোঁজখবর নিচ্ছে। আশা করা যায়, শিগগিরই আরাভ খানের ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভারতের সহযোগিতা ছাড়া আরাভকে ফেরত আনা সম্ভব নয়। তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে দুবাই যাননি। এখন তাকে ফেরত আনতে ভারতকে অনুরোধ করতে হবে। তিনি বলেন, দুবাইয়ের সঙ্গে আমাদের যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি আছে, সে অনুযায়ী তিনি যদি সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হতেন, তাহলে বিষয়টা সহজ হতো। কিন্তু, তিনি তো বন্দি নন। সেজন্য জটিলতা আছে। তিনি আমাদের পাসপোর্ট দিয়ে দুবাই যাননি। এখানেও জটিলতা আছে।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, দুবাইয়ে আরাভ খান নামে আশ্রয় নেয়া রবিউলকে বাংলাদেশে ফেরত আনা কঠিন ও জটিল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশি রবিউলই যে আরাভ খান, তা আগে ভারতকে জানাতে হবে। এরপর ভারত সেখানে মামলা করবে। আরাভ অপরাধী, পাসপোর্ট জালিয়াতকারী নিশ্চিত হয়ে দুবাইকে জানাবে ভারত সরকার। যদি ভারতীয় দূতাবাস দুবাইকে জানায়- আরাভ খানকে বাংলাদেশে পাঠাতে তাদের কোনো অসুবিধে নেই, তাহলে সম্ভব। এক্ষেত্রে চুক্তি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সদিচ্ছা থাকলে চুক্তিও লাগে না। যেমন, সৌদি আরবের সঙ্গে তো আমাদের চুক্তি নেই। কিন্তু, আমরা রাজন হত্যা মামলার আসামিকে সৌদি থেকে ফিরিয়ে এনেছি। সদিচ্ছা ও পারস্পারিক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক। কিন্তু, তিনি রবিউল ইসলাম নাম বদলে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট করে দুবাই যান। চাইলেও ইন্টারপোল আরাভকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারবে না। কারণ, সেখানে তার অবস্থান ভারতীয় হিসেবে। দুবাইতে দাগি আসামি বা অপরাধীও নন আরাভ। আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ চুক্তিও নেই। তাছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল হলেও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নন তিনি। মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া এখনো চলমান। তাকে ফেরানো নির্ভর করছে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান খুনের মামলার আসামি দুবাইয়ে থাকা রবিউল ইসলাম। ইন্সপেক্টর মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তার দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে এ ঘটনায় বনানী থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় আসামি ১০ জন। তাদের মধ্যে দুজন তরুণী। রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ধনী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। মামুন হত্যার ঘটনায় লাশ গোপন করতে সহায়তা করেছেন রবিউল। খুনে সরাসরি জড়িতরাও রবিউলের সহযোগী। রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলাটিতে জামিন নিয়ে পলাতক আছেন রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়া। কারাগারে আছেন আসামি রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দীদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩)। মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ২০ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। যদিও সে মামলা এখনো ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও গত এক বছরে দুইবার দেশে এসেছিলেন আরাভ খান। কিন্তু, রহস্যজনক কারণে একবারও তিনি গ্রেপ্তার হননি। দেশে এসে ঘুরেফিরে আর ফেসবুকে লাইভ করে আবার নিরাপদে দুবাই ফিরে যান। স¤প্রতি স্বর্ণের দোকান চালু করে আলোচনায় আসা রবিউল দুবাইয়ে আটক হয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠলেও তা নাকচ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়