প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা : রাখী দাশ পুরকায়স্থ ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক

আগের সংবাদ

বধ্যভূমি দেখার দায়িত্ব কার : সারাদেশে ৫ হাজারের বেশি বধ্যভূমি, ২২ বছরে ২০টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ হয়েছে

পরের সংবাদ

প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা : ক্লাবে রিফ্রেশমেন্টের নামে শাকিবকে ফাঁসান সাবরিন

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ১৩ মিনিটে মামলা করতে আদালতে আসেন শাকিব খান। এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে এ মামলা করেন তিনি।
এজাহারে শাকিব খান বলেন, শুটিং শেষে ‘রিফ্রেশমেন্ট’-এর জন্য ক্লাবে নিয়ে গিয়ে শাকিব খানকে ফাঁসান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় নায়িকা রেনেসা সাবরিন। প্রথমে নানা রকম পানীয় পান করিয়ে ও পরে অসুস্থ হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে শাকিবকে হোটেল রুমে নিয়ে যান সাবরিন। এরপর তাদের ভিডিও করা হয়েছে বলে চাঁদা দাবি করেন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। আদালত শাকিব খানের এ জবানবন্দি গ্রহণ পরে আসামি রহমত উল্লাহকে আগামী ২৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন।
এছাড়া আরেকটি মামলা করতে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে যান শাকিব। তবে আদালত আগামী সোমবার মামলা করতে আসতে বলেন। শাকিব খানের আইনজীবী তানভীর আহম্মেদ তনু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২০ মার্চ রাতে শাকিব খান মামলা করতে গুলশান থানায় গেলে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে চাঁদাবাজির মামলার এজাহারে শাকিব খান অভিযোগ করেন, বাংলা ছায়াছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এ অভিনয় করতে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন। এ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে শিবা আলী খানকে

মনোনীত করা হয়। এ ছবির শুটিংয়ের জন্য ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট অস্ট্রেলিয়া যান শাকিব খান। শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া যেতে পারেননি। তার জায়গায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় রেনেসা সাবরিনের সঙ্গে শাকিবকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন রহমত উল্লাহ। তবে শাকিব তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে বিষয়টি নাকচ করে দেন।
পরে শুটিং শেষে শাকিবকে রিফ্রেশমেন্টের জন্য ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রেনেসা সাবরিনসহ আরো ২ থেকে ৩ জন অপরিচিত লোক দেখতে পান শাকিব। মামলার আসামি রহমত উল্লাহসহ অন্যদের সঙ্গে একসঙ্গে ক্লাবে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পানীয় পান করেন। একপর্যায়ে শাকিব অসুস্থবোধ করেন। হোটেলে ফেরার সময় রহমত উল্লাহ এবং অন্যদের খোঁজ করেন সাকিব। তবে তাদের না পেয়ে রেনেসা সাবরিনের কাছে বিদায় নিয়ে গভীর রাতে হোটেলে ফিরতে চান শাকিব। তখন রেনেসা সাবরিন বলেন, ‘আপনি যেহেতু অসুস্থবোধ করছেন, তাহলে আমি আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি।’ শাকিব অনেকটা নিরুপায় হয়ে তার প্রস্তাবে রাজি হন এবং হোটেল রুমে যেতে ক্লাব থেকে বের হন। হোটেলে ফেরার সময় বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অজ্ঞান হয়ে যান শাকিব।
এজাহারে বলা হয়, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরদিন সকালে আসামি রহমত উল্লাহ শাকিবকে ফোনে জানান যে, ‘তুমি রাতে ওই নারীর সঙ্গে কী করেছ। সবকিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে ১ লাখ ডলার চাঁদা না দাও, তাহলে সব ভিডিও ক্লিপ এবং রেনেসা সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে তোমার নামে অভিযোগ করব। তাহলে তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না।’
এজাহারে শাকিব খান আরো অভিযোগ করেন, এ রকম বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হলে একপর্যায়ে শাকিব ভয় পেয়ে যান। শাকিব ভয়ে এবং তার ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে আসামি রহমত উল্লাহকে ৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেন। পরে রহমত উল্লাহ তাকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোট ৪০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন। এরপর আর চাঁদা দিতে না পারায় শাকিবকে জানানো হয় যে, তোমার নামে অস্ট্রেলিয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে। চাঁদা দেয়া বন্ধ করে দিলে আসামি রহমত উল্লাহ বিভিন্ন জায়গায় যেমন- ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং শাকিবের পরিবারের সদস্যদের কাছে মিথ্যাচার ও কুৎসা রটাতে থাকেন। এরপর ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ রহমত উল্লাহ শাকিব খানের কাছে ১ লাখ ডলার চাঁদা দাবি করেন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন।
শাকিব খানের সংবাদ সম্মেলন : এদিকে গতকাল বিকাল সাড়ে ৫টায় মামলার পর রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন শাকিব খান। তিনি বলেন, প্রথম যেদিন অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়েছি, সেদিন থেকেই আপনারা আমার সঙ্গে আছেন। দুয়েকদিনের মধ্যেই সব সত্য রেরিয়ে এসেছে। আদালত আমার সব কথা শুনেছেন। আমার সব কিছু যাচাই-বাছাই করে মামলাটি মহামান্য আদালত গ্রহণ করেছেন। আইনের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে, শ্রদ্ধা আছে। আমি বিশ্বাস করি এই চক্র যত বড়ই হোক না কেন তারা আইনের আওতায় আসবে। আমার সঙ্গে যিনি প্রতারণা করেছেন, চলচ্চিত্র এসোসিয়েশনের সঙ্গে করেছেন। সেই প্রতারক দেশের বাইরে পালিয়ে যাবেন, এটা আমি মনে করেছিলাম। তাই আমি দ্রুত থানায় গিয়েছিলাম। থানা থেকে আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন আদালতে যেতে। প্রতারক এবং প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য আমি ডিবির কাছেও গিয়েছিলাম। সেখানে যাওয়ার পরের দিন ডিবি থেকে জানিয়েছে, তিনি ঢাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। এরই মধ্যে আমরা জেনেছি, তিনি দেশ থেকে পালিয়ে অস্ট্রেলিয়া যেতে সক্ষম হয়েছেন।
শাকিব খান বলেন, আমি একজন শিল্পী মানুষ। আমি আমার জীবনে প্রথমবার এরকম শক্তিশালী অভিযোগ নিয়ে আদালতে গিয়েছি। আপনারা আমাকে কখনই দেখেননি, আমি এরকম ভিড় ঠেলে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। সকালবেলা আদালতে গিয়ে বসে থাকতে হবে, এত সব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে, এটা আমি কল্পনাও করিনি। আপনারা দেখবেন প্রায়ই একটি চক্র শিল্পী ও কলাকুশলীদের এ ধরনের সমস্যায় ফেলে। আশা করি আদালতের কাছ থেকে সুষ্ঠু বিচার পাব।
উল্লেখ্য, এর আগে শাকিব খানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ায় ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ওই সিনেমার শুটিংয়ে নারী প্রযোজককে ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ তোলেন রহমত উল্লাহ। এরপরই মামলা করলেন শাকিব খান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়