প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা : রাখী দাশ পুরকায়স্থ ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক

আগের সংবাদ

বধ্যভূমি দেখার দায়িত্ব কার : সারাদেশে ৫ হাজারের বেশি বধ্যভূমি, ২২ বছরে ২০টি বধ্যভূমি সংরক্ষণ হয়েছে

পরের সংবাদ

তিস্তা নিয়ে দিল্লির জবাবের অপেক্ষায় ঢাকা

প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : তিস্তা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি জানতে চেয়ে দিল্লির কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছিল ঢাকা তার জবাব এখনো আসেনি। এর ফলে এ নিয়ে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনোকিছু বলতে চাইছে না বাংলাদেশ সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন এই তথ্য জানান। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল বলে জানান তিনি। এর আগে গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ বিভাগ থেকে আরো দুটি খাল খননের বিষয়ে ভারতীয় পত্রিকার সংবাদ আমাদের দৃষ্টিতে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে ভারতের কাছে চিঠি পাঠাব।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি মাসের শুরুর দিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তিস্তা প্রকল্পের অধীনে আরো দুটি সেচ খাল খননের কথা জানা যায়। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক হাজার একর জমির মালিকানা পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগকে হস্তান্তর করা হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়। প্রকাশিত খবরে বলা হয়, এই দুটি খাল খনন করা হলে ভারতের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলার কৃষকরা উপকৃত হবে। কিন্তু তা বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কারণ, এর ফলে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে পানির প্রবাহ আরো কমে যাবে। বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন অবশ্য বলেছেন, তিস্তা প্রকল্পের অধীনে খাল খনন বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে গত ১৬ মার্চ ভারতের যৌথ নদী কমিশনের সদস্যের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। তবে এখনো চিঠির কোনো উত্তর পাননি। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা উদ্বেগ জানিয়েছি এবং তাদের বিস্তারিত পরিকল্পনা জানতে চেয়েছি। তার মতে, এমনিতে খাল স¤প্রসারণ করলে অসুবিধা নেই। কারণ গজলডোবায় বাঁধ আগে থেকেই আছে এবং খালও আগে থেকেই আছে। গজলডোবা ব্যারেজের ইমিডিয়েট আপস্ট্রিমে দুই দিকে দুইটা ডাইভারশন ক্যানাল আছে। যৌথ নদী কমিশনের এই সদস্য বলেন, বর্ষাকালে কৃষিকাজের জন্য পানি সরালে এর ফলে খুব একটা সমস্যা হবে না। কিন্তু যদি শুষ্ক মৌসুমে পানি সরিয়ে নেয়া হয় তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য সংকট সৃষ্টি করবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি আটকে আছে। বরাবরই পানি না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তোলা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
পশ্চিমবঙ্গের নর্থবেঙ্গল ইউনিভার্সিটির ভূগোল বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক সুবীর সরকার স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, তিস্তা প্রকল্পের অধীনে যে খাল খনন করার কথা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে নতুন কিছু নয়। বরং তিস্তা বাঁধ নির্মাণ মূল প্রকল্পেরই অংশ। তার মতে, প্রায় ২০ বছর আগে বাঁধ ও মূল খাল নির্মাণ শেষ হলেও এর পানিবণ্টন করার খালগুলো এখনো তৈরি হয়নি। এই খালগুলো তৈরি না হওয়ায় পানি সেচের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না এবং অপচয় হচ্ছে। যে জায়গা দিয়ে এই খালগুলো নির্মাণ করা হবে এতদিন সেগুলো অধিগ্রহণ করা যায়নি বলে খালের নির্মাণকাজ আটকে ছিল। চলতি মাসের গোড়ার দিকে ভূমির মালিকানা পাওয়ার কারণে এখন এটি খননের কাজ শুরু হচ্ছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ পশ্চিমবঙ্গের সেচবিষয়কমন্ত্রী ভৌমিকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয়

সরকার একে জাতীয় প্রকল্প ঘোষণা করলেও কোনো তহবিল দেয়নি। এখন যদি আমরা তহবিল নাও পাই, আমরা কাজ (খাল খনন) শেষ করার চেষ্টা করব। তিস্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ সুবীর সরকার ওই সংবাদমাধ্যমে বলেন, তিস্তা নদীর বাম তীরে এই খাল খননের কথা বলা হচ্ছে। ওই তীরে এখনো কোনো স্থাপনা তৈরি করা হয়নি এবং সেটাই এখন করা হচ্ছে।
সত্তর দশকের শেষের দিকে এই প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ সরকার হাতে নেয়ার পর থেকে কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতার অভাব এবং নির্মাণ পর্যায়ে অনেক ত্রæটির কারণে এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি। এই প্রকল্পটি শেষ হতে আরো ১০-১৫ বছর লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর এই বাঁধটি তার মূল ধারণক্ষমতার এক-চতুর্থাংশের বেশি পরিমাণ পানি ধারণ করতে পারবে না।
তিস্তা প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় সরকার হাতে নিয়েছিল ১৯৭৫ সালে। তখন নয় লাখ ২২ হাজার কৃষক এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে বলে জানানো হয়েছিল। তিস্তার পানি খালের মাধ্যমে নদীটির দুই তীরেই সেচের জন্য সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল এই প্রকল্পে। এই খালগুলোর সঙ্গে ওই অঞ্চলে প্রবাহিত অন্য নদীগুলোর সংযোগ থাকারও কথা ছিল। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তিস্তা প্রকল্পের আওতায় আরো দুটি খাল খনন করতে এক হাজার একর জমির মালিকানা নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ। গত ৩ মার্চ জমির এই মালিকানা সেচ বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন। এসব প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই জমির মালিকানা পাওয়ার ফলে তিস্তার বাম তীরে দুটি খাল খনন করা হবে। এই খালের সঙ্গে যুক্ত থাকবে জলপাইগুড়ি দিয়ে প্রবাহিত আরেকটি নদী জলঢাকা। দুটি খালের মধ্যে একটি খালের দৈর্ঘ্য হবে ৩২ কিলোমিটার। তিস্তা ও জলঢাকা এই দুই নদীর পানিই বহন করা এই খালটি কোচবিহার জেলার চেংড়াবান্ধা পর্যন্ত যাবে। আর আরেকটি খালের দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার। দুটি খালই জলপাইগুড়ির গজলডোবায় খনন করা হবে। এছাড়া জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়িতে থাকা আরেকটি খাল সংস্কার করা হবে বলেও প্রতিবেদনগুলোতে জানানো হয়। খাল দুটি খনন করা হয়ে গেলে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় এক লাখ কৃষক সেচের সুবিধার আওতায় আসবে। তবে বাংলাদেশ অংশে এর ফলে তিস্তার পানি প্রবাহ আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়