মানবতাবিরোধী অপরাধ : দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে চারজনের আপিল

আগের সংবাদ

ঝিকরগাছা : বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল পরিদর্শন করলেন উপসচিব

পরের সংবাদ

খ্যাতিমান ভাস্কর শামীম শিকদার আর নেই

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : স্বাধীনচেতা এক শিল্পী ছিলেন শামীম শিকদার। তা একেবারে বাহিরে অন্তরেই। চোখে মুখে কঠিন দৃঢ়তা। অনেকটা নির্ভীক। হাতে সিগারেট, পরনে শার্ট প্যান্ট, বব কাট চুল। হাতে শাবল। যেন তিনি সকল ধর্মীয় গোড়ামিকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন। তার এমন ভঙ্গিই বলে দিত সুন্দর এখানে একা নয়। তিনি অনেকটা একাই ছিলেন। তবে একের মধ্যেই ছিলেন বহু! বহুকে ধারণ করা শিল্পী শামীম শিকদার বহু দূরে চলে গেছেন। একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর ও টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরের ভাস্কর শামীম শিকদার আমাদের মাঝে আর নেই।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন শামীম শিকদার ভাস্কর্য পার্কের কিউরেটর ইমরান হোসেন। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। মৃত্যুর সংবাদে ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান সুহৃদ, স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীরা। ইমরান জানান, রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় শামীম শিকদার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই ভাস্কর কার্ডিওভাসকুলার, শ্বাসতন্ত্র এবং কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক।
ইমরান জানান, মৃত্যুকালে শামীম শিকদার ২ সন্তান রেখে গেছেন, যারা লন্ডনে বসবাস করেন। মোহাম্মদপুর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে। এর আগে, তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হবে। অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যে ৭ মাস আগে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। পরে অসুস্থ হওয়ায় ৪ মাস আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরও স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি না হওয়ায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইমরান বলেন, তার স্বপ্ন অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। ঢাবির চারুকলা অনুষদে জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্যটি তিনি নতুন করে করতে চেয়েছিলেন।
শামীম শিকদারের জন্ম ৯ আগস্ট ১৯৫৫ সালের বগুড়া জেলার চিংগাশপুর গ্রামের মহাস্থানে। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৮৬ সালে সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৯৯ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন প্রখ্যাত এই ভাস্কর। চারুকলা অনুষদের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে তিনি ইংল্যান্ড চলে যান। কখনো সেখানে, কখনো দেশে বসবাস করেছেন। নিভৃতেই কাটিয়ে দিলেন নিজের জীবন।
শামীম শিকদার সিমেন্ট, ব্রোঞ্জ, কাঠ, প্লাস্টার অব প্যারিস, কাদা, কাগজ, স্টিল ও গøাস ফাইবার মাধ্যমে কাজ করেন। প্রখ্যাত কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা সিরাজ সিকদার তার বড় ভাই। শামীম শিকদারের স্বামীর নাম জাকারিয়া চৌধুরী যিনি একজন কবি। তাদের দুটি কন্যা আছে। তাদের নাম সুইটি ও শান্তি। তিনি ভাস্কর্যের পাশাপাশি ছবি আঁকা, জুডো, কারাতে, শ্যুটিং, বাগান করা। কবিতা, সংগীত ও নাটকের ব্যাপারে আগ্রহ ছিল শামীম শিকদারের।
১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত স্বোপার্জিত স্বাধীনতা শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অবস্থিত। ২০০০ সালে স্বাধীনতার সংগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য উদ্যানে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্মিত হয়েছে তার বিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘স্ট্রাগলিং ফোর্স’। আশা ও উদ্দীপনার একটি পাখি নামের ভাস্কর্যটি ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত মাদার তেরেসা চ্যারিটি হাসপাতালে স্থাপিত হয়েছে ১৯৯৪ সালে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তার নির্মিত ভাস্কর্য আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনোয়ার পাশা ভবনে তার নির্মিত অনেক ভাস্কর্য রয়েছে।
১৯৭৫ সালে চারুকলা অনুষদে শামীম শিকদারের একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে লন্ডনের কমনওয়েলথ ইনস্টিটিউটে, ১৯৮২ সালে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে এবং ওই বছরই শিল্পকলা একাডেমিতে তার ভাস্কর্যের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও তার অনেক একক প্রদর্শনী হয়েছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক শিল্প গ্যালারিতে।
শামীম শিকদার ১৯৬৯ সালে লাভ করেন ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস পুরস্কার ১৯৬৯ সাল, ১৯৭০ সাল, ১৯৭৩ সাল এবং ১৯৭৪ সালে। ১৯৭৩ সালে অর্জন করেন সিলভার জুবলি অ্যাডওয়ার্ড অব ফাইন আর্ট। ১৯৭৪ সালে ভাস্কর্যের ওপর প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার পান। ২০০০ সালে একুশে পদকে সম্মানিত হন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়