মানবতাবিরোধী অপরাধ : দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে চারজনের আপিল

আগের সংবাদ

ঝিকরগাছা : বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল পরিদর্শন করলেন উপসচিব

পরের সংবাদ

আরাভকে আনতে দুবাই যাচ্ছে ঢাকার পুলিশ দল

প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চাঞ্চল্যকর পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলার আসামি দুবাইয়ে পলাতক রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে সেখানকার পুলিশ আটক করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে তার আলোচিত সেই ‘আরাভ জুয়েলার্স’। সরিয়ে ফেলা হয়েছে দোকানে রাখা অলঙ্কার। যদিও আরাভ আটকের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল ডেস্ক থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু জানানো হয়নি। তবে আরাভকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও পুলিশ সদর দপ্তরের একটি যৌথ দল দুবাই যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই তারা দুবাই যেতে পারেন। পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা আছেন টিমের নেতৃত্বে।
পুলিশের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারির পরই দুবাই পুলিশের একটি দল গত সোমবার রাতে দুবাইয়ের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাকে আটক করে। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল ডেস্কের (এনসিবি শাখার) এআইজি শরীফ মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে কোনো

মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পুলিশ ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের একাধিক সূত্র বলছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ দুবাই শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ ওরফে মানিকের সেখানে অবাধ বিচরণ। মোস্টওয়ান্টেড সন্ত্রাসী খন্দকার তানভীর ইসলাম জয়, মগবাজার এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী রবিন ও ডালিম, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়া গুলশান-বনানী এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেদিও দুবাই যাতায়াত করেন। মালয়েশিয়া প্রবাসী রামপুরার শীর্ষ সন্ত্রাসী ঘাতক স্বপনও দুবাইয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন।
বাংলাদেশি নাগরিক হলেও তাদের রয়েছে অন্য দেশের পাসপোর্ট। এই সুযোগে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা আছে বহালে। এসব অপরাধীরা স্বর্ণ চোরাচালান ও বিদেশে বসে দেশের চাঁদাবাজি এবং অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তাদের অনেকের সঙ্গে আরাভের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে পুলিশ খবর পেয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।
জানা গেছে, পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার আসামি আরাব খান ওরফে রবিউল ইসলাম আলোচনায় আসেন মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে গোল্ড জুয়েলারি শপ ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এ আলোচনা শুরু হয়। শপটির বাজপাখি লোগো বানানো হয় ৬০ কেজি সোনা দিয়ে। ১৫ মার্চ রাতে আরাবের এই জুয়েলারি শপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের ভিডিওবার্তার পর বিষয়টি নজরে আসে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি)। দুবাইয়ে নিউ গোল্ড সোক হিন্দ প্লাজার ৫ নম্বর ভবনের ১৬ নম্বর দোকানটি তার।
ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ জানান, পুলিশ পরিদর্শককে হত্যা মামলার চার্জশিট হয়েছে অনেক আগেই। রবিউল চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি। জুয়েলারি শপ উদ্বোধনের ঘোষণার পর আইডেন্টিফাই করি, যে ব্যক্তি আরাব খান নামে আইডিটি পরিচালনা করছেন, তিনি পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খাঁন হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম। তার ভারতীয় একটি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি একটি পাসপোর্ট রয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গত সোমবার দুবাইয়ে থাকা আরাভের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির আবেদন গ্রহণের কথা জানান।
মামলা ও নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে বনানীর একটি ফ্ল্যাটে জন্মদিনের দাওয়াতে গিয়ে খুন হন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান। গুম করতে লাশ গাড়িতে করে নেয়া হয় গাজীপুরের কালীগঞ্জের একটি জঙ্গলে। সেখানে লাশে পেট্রোল ঢেলে আগুনে ঝলসিয়ে দেয়া হয় চেহারা। সেই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আপন। এ ঘটনায় ওই বছরের ১০ জুলাই মামুনের ভাই ঢাকার বনানী থানায় মামলা করেন। এ মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
অভিযোগ রয়েছে, নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া একটি চক্রের কবলে পড়েন মামুন ইমরান খান। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুরের জঙ্গলে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। এ মামলার ৬ নম্বর আসামি হলেন আরাভ খান। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলার বিচার শুরুর আগে থেকেই আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ও তার বান্ধবী সুরাইয়া আক্তার কেয়া পলাতক। তবে এ মামলায় অন্য ছয় আসামি এখনো কারাগারে আটক রয়েছেন। কারাগারে আটক আসামিরা হলেন- রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হাসান ও দিদার পাঠান। পলাতক আরাভের অবস্থান দুবাই নিশ্চিত হওয়া গেলেও মামলার আরেক আসামি সুরাইয়া আক্তার কেয়া কোথায় আছেন, তা শনাক্ত করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলায় বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ : পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলায় আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম খানের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদেরের আদালতে মামলার বাদীকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। জেরা শেষে আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৪ জুন দিন ধার্য করেন। এ নিয়ে মামলাটিতে ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্য দিয়ে একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।
আসামি আরাভ খানের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী রুহুল আমিন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এদিন মামলার বাদীর জেরার দিন ধার্য ছিল। জেরা করা শেষ হয়েছে। মামলার আসামি আরাভ আর দুবাইয়ের আরাভ এক নয়। আরাভ আর কেয়া ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। আরাভ বাদে বাকি আসামিরা হলেন- সুরাইয়া আক্তার কেয়া, রহমত উল্লাহ, স্বপন সরকার, মিজান শেখ, আতিক হাসান, সারোয়ার হাসান ও দিদার পাঠান। এদের মধ্যে আরাভ ও কেয়া পলাতক রয়েছেন। বাকি ৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়